রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

কেরির সফর, খালেদার সাথে বৈঠক ও প্রাসঙ্গিক কথা

প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হোসেন মাহমুদ

বেশ কিছুদিন ধরে সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলা করছে বাংলাদেশ। এ সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সাথে ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) তাৎক্ষণিকভাবে নিজেদের সম্পৃক্ততা দাবি করেছিল। সে হিসেবে এটা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের অংশ হওয়ার কথা। তবে বাংলাদেশ সরকার দৃঢ়তার সাথে তা প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে যে বিদেশি সংগঠন তথা ইসলামিক স্টেট নয়, দেশি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জেএমবি এবং এক বা একাধিক ব্যক্তি বিশেষের কু-চক্রান্তে এসব হামলা চলেছে। সে যা হোক, এ সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে ব্যাপক সমর্থনের হাত বাড়িয়ে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়ায় ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র এসব হামলার সাথে আইএসের সম্পৃক্ততার কথা দাবি করেও শেষ পর্যন্ত তাতে অনড় থাকতে পারেনি। তবে এ মতান্তর বাংলাদেশের প্রতি মার্কিন সমর্থনে কেনো প্রভাব ফেলেনি। আর সে কথার সলিড প্রমাণ দিতে ২৯ আগস্ট ঝটিকা সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।
কেরির এ সফর নানা কারণে ছিল গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম কথা, সন্ত্রাসবাদ রুখতে বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। ব্যাপারটি এ রকম দাঁড়িয়েছে যে বাংলাদেশ এ বিষয়ে যে কোনো সাহায্য চাইলেই পেয়ে যাবে। কেরির এ সফরে তা নিয়ে যে কথা হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। তবে তার বাস্তব রূপটি কী, তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি।
সন্ত্রাসবাদ যে এখন একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা, একা কারো সমস্যা নয়, তা কারোরই অবিদিত নয়। এ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দেশে সন্ত্রাসবাদ তার নখরাঘাতে ব্যাপক রক্ত ঝরিয়েছে। এর মধ্যে ভয়াবহ সন্ত্রাস কবলিত হচ্ছে ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের মতো দেশ। আর এসব হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর তদন্তেও তাই-ই প্রমাণিত হয়েছে। আইএসের বিশ্ববিস্তৃতি রোধে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা কাজ করে যাচ্ছে। দেখা যায়, সাম্প্রতিক বিশ্বে আল কায়দা বা তালিবান বিশ্বসন্ত্রাসী নয়, বিশ্বসন্ত্রাসী হচ্ছে আইএস। বাংলাদেশে আইএসের প্রভাব বা উপস্থিতি দৃশ্যমান না হলেও ২০১৫-১৬ সময়ে বিদেশি হত্যা, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হত্যা এবং সবশেষে গুলশান হত্যাকা- ও শোলাকিয়া হামলার মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসের গা হিম করা অশুভ কর্মকা- আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। বর্তমানে রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে মোটা দাগে বিভক্ত বাংলাদেশের মানুষ বহুদিন পর যে একটি বিষয়ে নির্দ্বিধায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তা হচ্ছে এই ঘৃণ্য সন্ত্রাস দমন।
জন কেরি তার সাড়ে সাত ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত সফরের সময়টি অসম্ভব ব্যস্ততার মধ্যে কাটিয়েছেন। তার কর্মসূচির সব খবর সেদিনই প্রকাশিত হয়েছে। এ সবের মধ্যে ব্যতিক্রমী যা যা তা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে তার যাওয়া ও ভিজিটরস বুকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে শ্রদ্ধাপূর্ণ মন্তব্য লেখা। তিনি লিখেছেন, ‘সহিংস ও কাপুরুষোচিতভাবে বাংলাদেশের জনগণের মাঝ থেকে এমন প্রতিভাবান ও সাহসী নেতৃত্বকে সরিয়ে দেয়া কী যে মর্মান্তিক ঘটনা! তারপরও বাংলাদেশ এখন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে তারই কন্যার নেতৃত্বে। যুক্তরাষ্ট্র তার সেই স্বপ্ন পূরণে বন্ধু ও সমর্থক হতে পেরে গর্ববোধ করে।’ জানা যায়, তার এ মন্তব্যে সরকারের নেতৃপর্যায়ের সবাই ভীষণ খুশি হয়েছেন। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সে দেশে থাকা বঙ্গবন্ধুর দু’খুনীকে ফেরত দেয়ার জোর অনুরোধ জানিয়েছে। কেরি তাও বিবেচনা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এরই পথ ধরে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরো উন্নত ও গভীর হতে চলেছে বলে ধারণা করা যায়।
কেরির সফরের দ্বিতীয় ব্যতিক্রমী ঘটনা হচ্ছে তার সাথে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাক্ষাত। এ বিষয়টি একাধারে বিস্ময় ও কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে। আগে এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। কেরির সফরের শেষ পর্যায়ে এ সাক্ষাত ঘটে। জানা যায়, বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে বেগম খালেদা জিয়া কেরির সাথে মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে ৩৫ মিনিট বৈঠক হয়। এ বৈঠকের ব্যাপারে সরকারি মহলের কোনো অনুমোদন ছিল কিনা জানা যায়নি। কেউ কেউ কেরির সাথে সাক্ষাতের জন্য খালেদা জিয়ার সমালোচনা করেছেন। তারা বলেছেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি একটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে তাদেরই দূতাবাসে গিয়ে সাক্ষাৎ করেছেন যা সমীচীন হয়েছে কিনা সে প্রশ্ন ওঠে। এ প্রসঙ্গে তারা গুরুত্বের সাথে ২০১২ সালে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি বেগম জিয়ার বাসভবনে গিয়ে সাক্ষাত করেছিলেন। অথচ খালেদা জিয়া এবার আরেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে তার দূতাবাসে গিয়ে সাক্ষাৎ করলেন। খালেদা জিয়ার বিরোধী মহল এ পয়েন্টটি লুফে নিয়ে নানা কথা বলেছেন। তবে তার সপক্ষেও কিছু কথা শোনা গেছে। তারা বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা। তার এ অবস্থান কূটনৈতিক প্রটোকলের আওতায় তেমন কোনো গুরুত্ব বহন করে না। তিনি যদি বিরোধী দলের নেত্রী হতেন, তাহলে তা গুরুত্ব বহন করত। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বাসভবনে গিয়েই সাক্ষাৎ করতেন। তাই, খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থায় কেরির সাথে সাক্ষাৎ তার জন্য অসম্মানজনক কিছু হয়নি। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যেতে পারে যে বাংলাদেশে বর্তমান প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার সৃষ্ট ও স্বীকৃত একটি বিরোধী দল রয়েছে। দলটি হচ্ছে সরকারেরই মহাজোটের অংশ সাবেক সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। আর এ বিরোধী দলীয় নেতা হচ্ছেন বেগম রওশন এরশাদ। কেরির সাথে তার কোনো বৈঠকের কর্মসূচি ছিল না, বৈঠক হয়ওনি। পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে যে কেরি ধানমন্ডি ইএমকে সেন্টারে পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠানে যান। রওশন এরশাদ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাটের মাধ্যমে কেরির কাছে নিজের একটি ভিজিটিং কার্ড পাঠিয়ে তার সাথে কথা বলার সুযোগ চান। কেরি অনুষ্ঠান শেষে হল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বার্নিকাট রওশনের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দেন। কেরি হাঁটতে হাঁটতে তার সাথে দু’একটি কথা বলেন। তা কোনো অবস্থায়ই কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক নয়।
এ প্রসঙ্গে যে কথা উঠে আসে তা হলো যুক্তরাষ্ট্র সরকার বর্তমানে ভারতের পরই বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্র অনুমোদন করেনি। আর গত দু’বছরে অনেকবার তারা সে কথা বলেছে। ওয়াশিংটন বলে এসেছে, তারা বাংলাদেশে সকল দলের অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন চায়। এই সেদিনও বলেছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিষয়ে তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। অনেকেরই হয়তো মনে আছে যে বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া ব্লুম বার্নিকাট ২০১৪ সালে বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পাবার পর ১৭ জুলাই মার্কিন সিনেট কমিটির সভায় নিজের অনুমোদন লাভের জন্য বক্তব্য রাখতে গিয়ে ‘বাংলাদেশের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিঃসন্দেহে ত্রুটিপূর্ণ ছিল’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে কিছু আওয়ামী লীগ নেতা তার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। যেমন মতিয়া চৌধুরী। তিনি বার্নিকাটকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, হিসেব করে কথা বলবেন। যাহোক, সে নির্বাচনের পর এ দেশ নজিরবিহীন সহিংসতা দেখেছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে এবং বাংলাদেশের সমস্যা তাদের নিজেদেরই সমাধান করতে হবে বলে নিরাসক্ত জ্ঞানীর উপদেশ দিয়ে তার দায় সেরেছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা এ ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করলে এদেশে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়তো অনুষ্ঠিত হতে পারত। তাহলে দেশে বর্তমান বিদ্যমান প্রচন্ড বিভেদ বহুলাংশে নিরসন হয়ে অনেক বেশি স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করত। লক্ষণীয় যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও কার্যকর দেখতে চায়, কিন্তু রহস্যজনক কারণে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিতে চায় না। কথা হচ্ছে, তারা যদি স্বীকার করে যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে তাহলে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে বিরোধী দলের নেতার সাথে সাক্ষাতের কর্মসূচি রাখেনি কেন? কেন বিরোধীদলীয় নেত্রীকে ভিজিটিং কার্ড দিয়ে কেরির সাথে একটুক্ষণের জন্য দেখা করার অনুমতি চাইতে হলো? দুর্মুখ ব্যক্তিদের প্রশ্ন, দেশের বিরোধী দলের নেতার মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এ কি অবস্থা? যে বাংলাদেশের এত গুরুত্ব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সে বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেত্রীকে যথাযথ মর্যাদা দিতে কেরির অনীহা কেন? আর যদি যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই তাহলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও শক্তিশালী করতে জোরালো উদ্যোগ নেয় না কেন? প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের এ ভূমিকা সম্পর্কে বাংলাদেশের বহু মানুষের মনে প্রশ্ন রয়েছে।
এদিকে জন কেরি ও বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যকার আলোচনায় এবার নিশ্চিত হওয়া গেছে যে আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও নীতিগতভাবে বিএনপি ২০১৯ সালের আগে নতুন কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির ঘোষিত অবস্থান পরিত্যাগ করেছে। ৩০ আগস্ট দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কেরি-খালেদা বৈঠকে জঙ্গিবাদ-জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জন কেরির সাথে আগামী নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে নির্বাচনের বিষয়ে বিস্তারিত কী ধরনের আলোচনা হয়েছে তা তিনি বলেননি। এ রিপোর্টে একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়া দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরলেও গণতন্ত্রের ব্যাপারেই বেশি গুরুত্ব দেন। ...বিএনপি চেয়ারপার্সন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিকেই ফোকাস করেন।’ রিপোর্টে আরো বলা হয়, ‘খালেদা জিয়া দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরলেও গণতন্ত্রের ব্যাপারেই বেশি গুরুত্ব দেন। গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকায় দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের উত্থান ঘটছে বলেও তিনি কেরিকে অবহিত করেন।’ একই বিষয়ে ৩১ আগস্ট অন্য একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের রিপোর্টে বলা হয়, যে বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে উদ্যোগ নেবে যুক্তরাষ্ট্র। সে সাথে যুক্তরাষ্ট্র চায় যে বিএনপি পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিক। এ রিপোর্টে বৈঠকে অংশ নেয়া এক নেতার কথা উদ্ধৃত করা হয়েছে; যিনি বলেছেন, ‘আগাম নির্বাচনের যে সম্ভাবনা ছিল, জন কেরির সঙ্গে আলোচনায় মনে হয়েছেÑতা আর নেই।’
এ রিপোর্টের সত্যাসত্য সম্পর্কে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। তবে এ কথা ঠিক যে সময়ের সাথে সাথে এক দেশের সাথে আরেক দেশের সম্পর্ক, নীতি, কূটনীতি ইত্যাদিতেও পরিবর্তন ঘটে। আমরা সবাই তার সাক্ষী। যুক্তরাষ্ট্র আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বাংলাদেশের ব্যাপারে অনেক বেশি আগ্রহী। বলতে গেলে বাংলাদেশের কে কত বড় বন্ধু হতে পারে তা নিয়ে যেন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ সন্ত্রাস মোকাবেলায় নিজেই যথেষ্ট পারঙ্গম। তারপর পাশে রয়েছে ভারতের মতো পরম বন্ধু। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মনে হচ্ছে, তা যথেষ্ট নয়। তাই বাংলাদেশ না চাইলেও তারা আগ বাড়িয়ে ব্যাপক সহযোগিতা দিতে আগ্রহী। বাংলাদেশও এ বিষয়ে তাদের সাথে সহযোগিতা জোরদারে প্রস্তুত। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে সন্ত্রাস মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন হলেও বাংলাদেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে তাদের মোটেই আগ্রহ বা উদ্যোগ নেই।
বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে, তাতে বিএনপি অংশ নেবে কিনা, নিতে পারবে কিনা, সে নির্বাচন পরবর্তী বাংলাদেশের অবস্থা কি দাঁড়াবে, এ সবই ভবিষ্যতের বিষয়। তা নিয়ে এত আগে কোনো জল্পনা-কল্পনা করা ঠিক হবে না। বর্তমান অবস্থায় জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য বড় বিষয়। যে কোনো মূল্যে জঙ্গিবাদকে রুখতে হবে। একই সাথে আমাদের কিশোর-তরুণ সমাজ যাতে সেদিকে কোনোভাবেই না ঝুঁকে পড়ে সেদিকে পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারির প্রয়োজনীয়তা স্বীকৃত হয়েছে এবং তা শুরুও হয়েছে। এদিকে কেউ কেউ সন্ত্রাসের এ বাড়-বাড়ন্ত পরিস্থিতির জন্য গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি, জাতির মধ্যকার প্রচন্ড বিভেদ ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকেও অন্যতম কারণ বলে মনে করেন। তবে সরকার পক্ষের কেউই তা স্বীকার করেন না। ফলে এদিকে তাকিয়ে দেখার আগ্রহ কারো মধ্যে নেই বললেই চলে।
বিএনপি জনগণের দল। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে এ দলের পক্ষে থাকা সম্ভব নয়। তবে সাম্প্রতিক অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি আদায়ে দলটি সফলকাম হতে পারেনি। তারপর থেকে জনস্বার্থ বিষয়ক আর কোনো আন্দোলন করা দলটির পক্ষে জড়িত হওয়া সম্ভব হয়নি। সাম্প্রতিককালে বাগেরহাটের রামপালে ভারতের সহায়তায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার কাজ চলছে। এর ফলে বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে এ আশংকায় এর বিরুদ্ধে জোর আন্দোলন করে চলেছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন। সরকার শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছে এতে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না। বিএনপি দীর্ঘসময় নিশ্চুপ থাকার পর ক’দিন আগে কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে। মজার বিষয়, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধী পক্ষের দ্বিতীয় প্রধান নেতা অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে প্রথমে সোমবার বিভ্রান্তিকর বলে আখ্যায়িত করে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য নয় বলে জানান। পর দিন মঙ্গলবার ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করেন এবং বিএনপির রামপাল বিরোধী অবস্থানকে স্বাগত জানান। তাদের আন্দোলনে সমর্থনের জন্য তিনি বিএনপি নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান।
এভাবে জনস্বার্থে জনগণের পাশে বিএনপি সত্যিই দাঁড়াতে পারল কিনা, কতটা পারল, তাদের সমর্থনে এ আন্দোলন আরো বেগবান হয়ে সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয় কিনা, সে সবই ভবিষ্যতের ব্যাপার। এখানে যা ইতিবাচক তাহল জাতীয়স্বার্থে বা জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনেকদিন পর তারা জনগণের পাশে দাঁড়াতে প্রয়াসী হয়েছে। এদিকে অনেকেরই ধারণা, জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহার, জাতীয় সংসদ এলাকা থেকে জিয়ার কবর সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তসহ কিছু বিষয় বিএনপি কীভাবে মোকাবেলা করবে তা নির্ধারণের সময় আসছে। এসব বিষয়ে প্রবল গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে বিএনপিকে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে জনসম্পৃক্ততা অর্জনের এ প্রয়াস তাদের আগামী দিনের রাজনৈতিক অভিযাত্রায় হয়তো সহায়ক হতে পারে।
 লেখক : সাংবাদিক
যথসধযসঁফনফ@ুধযড়ড়.পড়স

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন