শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সামান্য কাজও সামান্য নয়-১

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

হাদীসের যে কোনো কিতাব হাতে নিন। বিশেষ করে কুতুবে সিত্তা; সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ, জামে তিরমিযী, সুনানে নাসায়ী ও সুনানে ইবনে মাজাহ এই সকল কিতাবের যে কোনোটি হাতে নিন, তাতে একটি অধ্যায় পাবেন কিতাবুল আদব বা আদব অধ্যায়। এই অধ্যায়ের বিষয়বস্তু কী? এই অধ্যায়ে মুহাদ্দিসগণ রাসূলে কারীম (সা.)-এর যেসকল হাদীস সংকলন করেছেন তা মৌলিকভাবে দু’টি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত। এক. স্বভাব-চরিত্র। দুই. আচার-আচরণ। তাহলে হাদীসের কিতাব থেকে, রাসূলে কারীম (সা.)-এর হাদীস ও সীরাত থেকে জীবনের যেসব অধ্যায়ে আলো গ্রহণের প্রয়োজন তন্মধ্যে সদাচার, সম্পর্ক রক্ষা, আচার-আচরণ, স্বভাব-চরিত্র ইত্যাদিও শামিল। শুরু থেকেই আমাদের মুহাদ্দিসগণ এ সংক্রান্ত হাদীস ও আছার সংকলন করে এসেছেন।

সহীহ মুসলিম শরীফে ‘কিতাবুল বিররি ওয়াসসিলাহ’য় (সদাচার ও সম্পর্ক রক্ষা অধ্যায়ে) একটি অনুচ্ছেদ আছে-যার অর্থ, ‘হাসিমুখে সাক্ষাৎ কাম্য ও পছন্দনীয় হওয়া।’ সহীহ মুসলিমের এই অনুচ্ছেদ-শিরোনামগুলো ইমাম মুসলিম রাহ. দেননি; এসব শিরোনাম দিয়েছেন সহীহ মুসলিমের বিখ্যাত ভাষ্যকার ইমাম নববী রাহ.। এই শিরোনামে হযরত আবু যর গিফারী রা.-এর ঐ হাদীস উল্লিখিত হয়েছে যে, আমাকে আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন: ‘কোনো ভালো কাজকে সামান্য মনে করো না, যদিও তা হয় তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ।’
এই হাদীসে একজন মুসলিমের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎকেও ‘মারূফ’ ও ভালো কাজ বলা হয়েছে এবং এই ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (সা.) তাঁর প্রিয় সাহাবীকে এই বিষয়ে উৎসাহিত করেছেন। তাহলে ধর্মীয় দিক থেকে একজন মুসলিমের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ কাম্য।

আমরা বিভিন্ন সময় ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব, মুস্তাহসান এই সকল পরিভাষা শুনে থাকি। শরীয়তের বিভিন্ন বিধানের পর্যায় ও গুরুত্ব বোঝাবার জন্য এই পরিভাষাগুলো ব্যবহৃত হয়। এই কাজটি ফরয, এই কাজটি ওয়াজিব, এই কাজটি সুন্নত, এই কাজটি মুবাহ, ইত্যাদি বিভিন্ন পরিভাষার মাধ্যমে শরীয়তে ঐ বিষয়টির বৈধতা ও কাম্যতার পর্যায় বোঝানো হয়ে থাকে। আমরা এই সকল বিষয়কে ধর্মীয় বিষয় মনে করি।

যেমন আমরা বলি, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরয। আমরা মনে করি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ধর্মীয় কাজ। আর ধর্মীয় বিধানের দিক থেকে তা অপরিহার্য। এটা আদায় করতেই হবে, ছাড়া যাবে না। এরকম বিভিন্ন কাজকে আমরা ওয়াজিব বলি, সুন্নত বলি, মুস্তাহাব বলি। এগুলোকে আমরা ধর্মীয় কাজ মনে করি। এই যে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব- এগুলোর গন্ডিও অনেক বিস্তৃত। সচরাচর আমরা যেসকল কাজকে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব মনে করি এর বাইরেও অনেক ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব আছে। আমাদের লেনদেন ও সামাজিক জীবনের অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাবের পর্যায়ভুক্ত। তেমনি স্বভাব-চরিত্র ও আচার-আচরণগত অনেক বিষয় আছে, যা ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত-মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত।

ইমাম মুসলিম রহ. হযরত আবু যর গিফারী রা.-এর যে হাদীসটি এনেছেন এই হাদীসের ওপর সহীহ মুসলিমের ভাষ্যকার ইমাম নববী রাহ., যিনি অনেক বড় ফকীহ ও মুহাদ্দিস ছিলেন। শিরোনাম দিয়েছেন : ‘হাসিমুখে সাক্ষাৎ কাম্য ও মুস্তাহাব হওয়া’। তাহলে হাসিমুখে সাক্ষাৎও একটি ধর্মীয় কাজ। দেখুন, এটা ইসলামের এক অনুপম বৈশিষ্ট্য। ইসলামী শরীয়ত মানুষের জীবনের প্রতিটি আচরণের ওপর ধর্মীয় বিধান আরোপ করেছে। মানব-জীবনের কোনো আচরণ এমন নেই, যে সম্পর্কে ফরয, ওয়াজিব, মুস্তাহাব, মুবাহ, মাকরূহ, হারাম ইত্যাদি বিধান আরোপিত হয় না।

তাহলে এটাও জানা গেল যে, ধর্মীয় কাজ আমরা যতটা সীমাবদ্ধ মনে করি ততটা সীমাবদ্ধ নয়। শুধু নফল নামাজ পড়াই ধর্মীয় কাজ নয়। নিঃসন্দেহে নফল নামাজ পড়া অনেক বড় ধর্মীয় কাজ। দান-সদকা করা অনেক বড় ধর্মীয় কাজ। একইভাবে একজন মুসলিমের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও একটি ধর্মীয় কাজ। একটি মুস্তাহাব ও পছন্দনীয় আমল। রাসূলে কারীম (সা.)-এর একটি সুন্নাহ। প্রিয় সাহাবী হযরত আবু যর গিফারী রা.-কে তিনি এ বিষয়ে উৎসাহিত করেছেন।

এ হাদীসে মুসলিম ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ হচ্ছে একটি উদাহরণ। আল্লাহর রাসূল একটি মূলনীতি উল্লেখ করে এই বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে এনেছেন। মূলনীতিটি হচ্ছে, ‘তুমি কোনো ভালো কাজকেই সামান্য মনে করো না।’ এটা করণীয় সম্পর্কে এক বড় মূলনীতি। কোনো ভালো কাজকে সামান্য মনে করে ত্যাগ করো না। এটা যদি আমরা ভালোভাবে বুঝি তাহলে অনেক রকমের বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত হতে পারি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Anwar Hossain ১ মার্চ, ২০২১, ২:১৫ এএম says : 0
আমাদের প্রিয় নবী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের জন্য আদব তথা শিষ্টাচারের সব নিয়মই শিখিয়ে গেছেন। তঁর শেখানো শিষ্টাচার তথা আদবের মধ্যে রয়েছে চলাফেরা, খাদ্য-পানীয় গ্রহণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, নিদ্রা, স্ত্রীর ভালোবাসা, দাম্পত্য জীবনের আদবসহ আরও অনেক বিষয়। প্রত্যেকটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ
Total Reply(0)
মাজহারুল ইসলাম ১ মার্চ, ২০২১, ২:১৫ এএম says : 0
ইসলাম সমাজে সালামের মাধ্যমে একে অন্যকে অভিবাদন জানানোর প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। এর ফলে পারস্পরিক ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও বন্ধুত্ব বৃদ্ধি পায়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা ততক্ষণ জান্নাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ না ইমান আনয়ন কর এবং ততক্ষণ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাস। আমি কি তোমাদের এমন কিছু বলে দেব না যা করলে তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসতে পারবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রসার কর।’ মুসলিম।
Total Reply(0)
সোলায়মান ১ মার্চ, ২০২১, ২:১৬ এএম says : 0
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শিষ্টাচার কী হবে তা হাতে কলমে শিখিয়ে গেছেন। এসব মেনে চললে আমাদের দুনিয়ার জীবন যেমন ইমানের আলোয় আলোকিত হবে তেমনি আখেরাতেও সুন্নাহর আলোয় তাঁর সঙ্গে সরাসরি জান্নাত নসিব হবে।
Total Reply(0)
নাবিল আব্দুল্লাহ ১ মার্চ, ২০২১, ২:১৭ এএম says : 0
ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো আদব বা শিষ্টাচার। দুনিয়াজুড়ে মানুষের হৃদয় জয় করার অন্যতম মাধ্যম এটি। আর এর মাধ্যমেই সারা পৃথিবীতে ইসলাম বিজয় লাভ করেছে। এ আদব বা শিষ্টাচারকে সহজভাবে বলতে পারি ভদ্রতা। ইসলামে ভদ্রতার মর্যাদা ও গুরুত্ব অত্যাধিক।
Total Reply(0)
রোমান ১ মার্চ, ২০২১, ২:১৮ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিজেদের জীবনে শিষ্টাচার বা ভদ্রতা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। ভদ্রতা ও নম্রতার আলোকে জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন