১০ সংখ্যাটি অত্যন্ত ফযিলত ও বরকতপূর্ণ। ইসলাম ধর্মের বহু আহকাম ১০ সংখ্যার সাথে জড়িত। মুহাররাম মাসের ১০ তারিখটি আশুরা নামে খ্যাত। এ দিনে আল্লাহপাক অসংখ্য কুদরত প্রকাশ করেছেন।
১০ তারিখে ঈদুল আযহা পালিত হয়। আরবিতে ১০ সংখ্যাটিকে ‘আশুরাতুন’ বলা হয়। আল কোরআনে ‘আশারাতুন কামিলাতুন’ (পরিপূর্ণ দশ) বলা হয়েছে। ১০ সংখ্যাটির পূর্ণতার ব্যাপ্তি কতখানি তা আল্লাহ পাকই ভালো জানেন। এ ১০-এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে, মানুষ সৃষ্টির মর্ম কথা। মানুষকে দুই প্রকার জিনিস দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। (১) সু² পবিত্র আত্মা। যা দেখা যায় না, ধরা যায় না, কিন্তু বুঝে আসে। আরবি লাতিফ শব্দের অর্থ হলো সু², যা ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনুভব করা যায় না। এ সু² আত্মার পাঁচ স্তরের কাজের হিসেবে পাঁচ লতিফা বলা হয়। যথা : কলব, রূহ, ছের, খফী, আখফা। আরবি লাতিফ শব্দটি আল কোরআনে ৬ বার ব্যবহৃত হয়েছে। লাতিফ শব্দটির দুইটি অর্থ আছে। (ক) দয়ালু। ইহা আল্লাহর একটি গুণ। (খ) সু² বস্তু, যা ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে জানা যায় না, পবিত্র আত্মা বা রূহে ইনসানী।
১। কলব লতিফার কাজ হলো আল্লাহকে স্মরণ করা, আল্লাহর যিকির করা। কলব শব্দটি একবচন, বহুবচন ও সম্বন্ধপদ হিসেবে আল কোরআনে ১৩২ বার ব্যবহৃত হয়েছে। লতিফায়ে কলবের স্থান বাম স্তনের দুই আংগুল নিচে।
২। রূহ লতিফার কাজ আল্লাহর ধ্যান করা। রূহ শব্দটি বিভিন্ন আঙ্গিকে আল কোরআনে ৩৭ বার এসেছে। লতিফায়ে রূহের স্থান ডান স্তনের দুই আংগুল নিচে।
৩। ছির লতিফার কাজ আল্লাহর গুণাবলি হৃদয়স্থান করা। ‘ছির’ শব্দটি বিভিন্ন আঙ্গিকে আল কোরআনে ১১ বার এসেছে। লতিফায়ে ছিরের স্থান সিনার মাঝখানে, বুকের কড়ায়।
৪। খফী লতিফার কাজ হলো আল্লাহর গুণাবলি হৃদয়ঙ্গম করে আল্লাহর গুণে মুক্ত হয়ে আল্লাহর আশেক হয়ে যাওয়া এবং নিজের আমিত্বকে আল্লাহর জন্য, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ফানা করে দেয়া। ফানা ফিল্লাহ হয়ে যাওয়া। খফী শব্দের ব্যবহার আল কোরআনে ৭ বার লক্ষ্য করা যায়। লতিফায়ে খফীর স্থান মস্তিষ্কের কপাল বরাবর, যা সিজদাহ্র সময় ব্যবহৃত হয়।
৫। আখ্্ফা লতিফার কাজ হলো নিজের অস্তিত্বকে ফানা করে দিয়ে আল্লাহর গুণাবলিতে গুণান্বিত হয়ে ‘আল্লাহর খিলাফত’ হাসিল করা, বাকা বিল্লাহ-এর মর্যাদা লাভ করা। আল কোরআনে আখফা শব্দের ব্যবহার মাত্র একবার লক্ষ্য করা যায়। লতিফায়ে আখফার স্থান মস্তিষ্কের মধ্যে তালু (চান্দি) বরাবর।
(২) মানুষ সৃষ্টির দ্বিতীয় প্রকার জিনিস হলো স্থ’ল দেহ। অর্থাৎ যা দেখা যায়, ধরা যায়, অনুভব করা যায়, দেহকে সৃষ্টি করা হয়েছে, আব আতশ, খাক, বাদ অর্থাৎ আগুন, পানি, মাটি, বাতাস, চারি প্রকার মৌলিক পদার্থের দ্বারা। এই চারি প্রকার স্থ’ল পদার্থের সংমিশ্রণে এবং এগুলোর ভাঙন-গড়নে গ্যাসের মতো এক প্রকার সু² পদার্থ বা শক্তি পয়দা হয়েছে। একে বলা হয় ‘নাফস’। নাফস শব্দটি বিভিন্ন আঙ্গিকে আল কোরআনে ২৯৭ বার এসেছে। নাফসের মধ্যে খাওয়ার, পান করার লোভ আছে, অন্যের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার ক্রোধ আছে, নিজেকে বড় মনে করার অহঙ্কার আছে। কামভাব ও যৌনক্ষুধা আছে। বস্তু ও সম্পদ লাভের মোহ আছে, ইত্যাদি। এই সু² পদার্থটি জড় জগতের জিনিস। তার স্থান নাভির নিচে।
দেহ গঠনের একটি উপাদান মাটি ‘আরদ’ বা মাটি শব্দটি আল কোরআনে বিভিন্ন আঙ্গিকে ৫০৩ বার এসেছে। দেহের সর্বত্রই মাটির নির্যাস আছে। দেহ গঠনের আর একটি জিনিস হলো পানি। ‘মা-উন’ বা পানি শব্দটির ব্যবহার আল করআনে ৬৩ বার লক্ষ্য করা যায়। দেহ গঠনের আর একটি উপাদান আগুন। ‘নার’ বা আগুন শব্দটি আল কোরআনে ১৪৫ বার এসেছে। এ আগুন এবং পানি দেহের সর্বত্রই আছে। দেহ গঠনের আর একটি উপাদান হলো বাতাস। এই ‘হাওয়া’ বা বাতাস শব্দটি আল কোরআনে একবার ব্যবহৃত হয়েছে।
কোনো কোনো জ্ঞানী ব্যক্তি বলেছেন : সু²তার দিক বিবেচনা করে নাফসকেও লতিফা বলা যায়। এতে করে ছয় লতিফা কলব, রূহ, ছের, খফী, আখফা, নাফস বলা হয়। আবার কেউ বলেছেন : দেহ গঠনের চারটি উপাদান, আগুন, পানি, মাটি, বাতাসকেও লতিফা বলতে দোষের কিছু নেই। এগুলোতেও সু²তার ছাপ বিদ্যমান আছে। এতে করে লতিফার সংখ্যা ১০ হয়। যথা : (৬+৪ = ১০)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন