দূষিত বা ভেজাল মদ পান করে সাম্প্রতিককালে দেশে অন্তত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ায় মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। দূষিত মদ পান করে মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও অনেকের মৃত্যু হয়েছে। ১৯৯৮ সালে গাইবান্ধায় ৭১ জনের মৃত্যু হয়। একই বছর নরসিংদীতে মারা যায় ৫৪ জন। ২০০০ সালে বগুড়ায় মারা যায় ২২ জন। অন্য এক তথ্যে জানা যায়, বিষাক্ত মদ পান করে গত আড়াই দশকের মধ্যে আড়াই হাজারের মতো মানুষ মারা গেছে।
দূষিত, ভেজাল বা বিষাক্ত মদ পান করে কেউ মারা গেলেই কেবল খবর হয়। কিন্তু দেশের লাখ লাখ মানুষ ‘বিশুদ্ধ’ মদ পান করে কেমন আছে, কীভাবে তাদের দিনকাল কাটছে, কেউ বলতে পারে না। মদ দূষিত হোক, কিংবা বিশুদ্ধ, শরীর-স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সুতরাং, যারা বিশুদ্ধ মদ পান করে বেঁচে আছে, তারাও যে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো আছে, সুখে-শান্তিতে আছে, তা বলা যাবে না। যারাই মদ পান করে তাদের কারো পরিণতিই ভালো হয় না। অত্যন্ত করুণ ও শোচনীয় অবস্থার মধ্যে তাদের জীবন কাটে ও জীবনের অবসান ঘটে।
রাসুলে আকরাম (সা.) মদকে যাবতীয় মন্দ কাজ ও অশ্লীলতার উৎস বলে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন: এটা সকল মন্দের মধ্যে সবচেয়ে লজ্জাকর। মদের সঙ্গে ব্যাভিচার বা ধর্ষণের একটা নিকট ও ওতপ্রোত সম্পর্ক আছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে দেখা গেছে, ধর্ষণের অধিকাংশ ঘটনার সঙ্গে মদ্যপায়ীরা জড়িত। এমনও জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৮ শতাংশ লোক ঘৃণ্য অনাচারে লিপ্ত, যাদের একজন বা উভয়েই মদ্যপ। এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে! মদ সুস্থ মস্তিষ্কে উন্মাদনার সৃষ্টি করে, হিতাহিত জ্ঞান লোপ করে। এমন মদ্যপ ও উন্মাদের পক্ষে ধর্ষণ কেন, হত্যাকান্ড ঘটানোও সম্ভবপর। অন্য দেশেই কেবল নয়, আমাদের দেশেও মদ্যপ-ধর্ষকের হত্যাকান্ড ঘটানোর অনেক নজির রয়েছে। কিছুদিন আগে ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে মদ্য পান করিয়ে ধর্ষণ ও হত্যা করেছে তারই মদ্যপ বন্ধুরা, এমন অভিযোগ উঠেছে।
ইসলামে মদকে সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে জুয়া, মূর্তিপূজা ও ভাগ্যগণনাকে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন: হে ঈমানদারগণ, মদ, জুয়া, মূর্তিপূজা এবং শুভাশুভ লক্ষণ গ্রহণের তীর চালনা শয়তানী চক্রান্তের ঘৃণ্য কাজ। অতএব, তোমরা এগুলোর প্রত্যেকটি পরিহার করো, যেন সফলতা অর্জন করতে পার। শয়তান তো চায় মদ-জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে সংঘাত ও বিদ্বেষ ঘটাতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে বিরত রাখতে। তবু কী তোমরা বিরত হবে না? সুরা মায়িদা: ৯০-৯১। এখানে এ সত্যই স্পষ্ট করা হয়েছে যে, মদ, জুয়া, মূর্তিপূজা ও ভাগ্য গণনার পেছনে শয়তানের প্রত্যক্ষ হাত রয়েছে। এগুলো শয়তানী কাজ। সুতরাং, অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
শয়তানের কাজ মানুষকে অমানুষে পরিণত করা, আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে রাখা, বিপথগামী করা, পাপ-পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত করা এবং তার দুনিয়া ও আখেরাতকে সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেয়া। এ ক্ষেত্রে মদ, জুয়া, মূর্তিপূজা ও ভাগ্যগণনা তার হাতিয়ার। শয়তানের এই হাতিয়ারগুলো থেকে দূরে থাকা ঈমানদার ও সতর্ক-সচেতন মানুষের একান্ত কর্তব্য। মদ মানুষের বিবেককে অকার্যকর করে দেয়। বিবেক মানুষের ভালো-মন্দের নির্দেশক। যখন তা অকার্যকর হয়ে যায়, তখন যে কারো পক্ষে যে কোনো খারাপ কাজ বা অপকর্ম করা সম্ভব।
মদ শুধু বিভিন্ন অপকর্মের কারণ নয়, মৃত্যুর কারণ নয়, বিভিন্ন দূরারোগ্য রোগব্যাধিরও কারণ। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, মদ নিজেই এমন একটা ‘ব্যাধি’, যাতে প্রতিবছর বিশ্বে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়। এতে এমনসব রোগের জন্ম হয়, যা আখেরে মৃত্যুই ডেকে আনে। লিভার সিরোসিস, অগ্ন্যাশয় ও যকৃতের প্রদাহ, অমøনালির ক্যান্সরসহ মাথা, গলা, কলিজা ও মলনালীর ক্যান্সার, স্নায়ু ও মস্তিষ্কের রোগ, হৃদরোগ, পক্ষাঘাতসহ আরো নানা রোগের উৎস মদ। সুস্থ, স্বাভাবিক, মানবিক জীবনযাপনের জন্যও মদ এবং যাবতীয় মাদকসামগ্রী থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন