মদ ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও অত্যন্ত দুঃখভরে বলতে হচ্ছে, ৯২ শতাংশ মুসলমানের এই দেশে মদের উৎপাদন, আমদানি, বেচাকেনা ও পান নিষিদ্ধ নয়। মদ্যপের সংখ্যাও অনেক। অন্যান্য মাদকসেবীর সংখ্যা যে কত তার কোনো হিসাব-নিকাশ নেই। কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পর্যন্ত সব বয়সী মানুষের মধ্যেই মদ বা মাদকাসক্তি দেখা যায়। মদপান বা মাদকদ্রব্য সেবনে প্রতি বছর শত শত মানুষ মারা যায়, অসুস্থ হয়, অথর্ব হয়। তাদের পরিবার-পরিজনের দুঃখের কোনো শেষ থাকে না। ১৯৯৮ সালে নরসিংদীতে যে ৫৪ জন বিষাক্ত মদপানে মারা যায়, তারা সবাই ছিল পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তারা প্রায় সবাই ছিল তাদের পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাদের বস্তিতে সক্ষম পুরুষ ছিল না; ছিল নারী, শিশু। সেই সব নারী ও শিশুর কী হয়েছে কেউ কি তার খোঁজ রেখেছে? এভাবে প্রতি বছর কত পরিবার যে নিরালম্ব হয়ে পড়ছে, কেউ বলতে পারবে না। মদ পান ও মাদক সেবনের কারণে কত পরিবার যে ভেঙে যায়, কত পরিবারে যে অশান্তির আগুন ধিকিধিকি জ্বলে, কেউ কি তার সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারবে? পারবে না। দেয়া সম্ভব নয়।
মদ পানকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সমাজের একটি শ্রেণি আভিজাত্যের অন্যতম প্রতীক মনে করে। এই ঢাকা শহরে এমন অনেক পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে মদ পান করে। কারো কারো বাড়িতে হাউজ বার পর্যন্ত আছে। যেখানে বিভিন্ন উপলক্ষে মদের আসর বসে। বন্ধু-বান্ধব ও বিদেশি অতিথিরা আমন্ত্রিত ও আপ্যায়িত হয়ে থাকে। মদ পানের বিকল্প কুফল ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে এ কথা সন্দেহাতীতভাবেই বলা যায়, যাতে অহিতের শেষ নেই, তা কোনো আভিজাত্যের কারণ বা উপরণ হতে পারে না। প্রকৃত অভিজাত তো তারাই, যাদের পরিবারের সদস্যরা মদের ধারেকাছেই যায় না, স্পর্শ এবং পান তো দূরের কথা। সকল প্রকার অন্যায় ও অকল্যাণের উপলক্ষ হলেও অনেকে অল্প-স্বল্প মদ পানকে দেহের জন্য উপকারী বলে ওকালতি করে থাকে। এটা মদ পানে উৎসাহিত করার নামান্তর। দেখা গেছে, অল্প-স্বল্প পান করতে করতেই অনেকে অভ্যস্ত ও বদ্ধ মাতালে পরিণত হয়েছে। ওষুধ হিসেবে মদ ব্যবহার করা যায় কি-না, এমন প্রশ্ন এখনো অনেকে করে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-কেও এ প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি জবাবে বলেছিলেন : মদ কোনো ওষুধ নয়, আসলে তা ব্যাধি মাত্র। তিনি আরো বলেছেন, যেসব জিনিস তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে, আল্লাহ তাতে তোমাদের রোগের আরোগ্য রাখেননি।
মদ পান এতই গর্হিত কাজ যে, মদ পানকারীর এবাদত-বন্দেগী আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। রাসুল (সা.) এ ব্যাপারে বলেছেন : মদ পানকারীর নামাজ ও ভালো কাজ কবুল হয় না। তিনি আরো বলেছেন, মদ পানকারী মদ পান করা অবস্থায় মোমিন থাকে না। অতঃপর তওবা করলে মোমিন অবস্থায় ফিরে আসে। অন্য এক হাদিসে আছে : মদ পানে অভ্যস্ত ব্যক্তি মূর্তিপূজকের সমান।
আসলে মদ বা মাদকের কারণে আমাদের সমাজসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমাজে নানা অনাচার, পাপ ও অপরাধ বিস্তার লাভ করেছে। এ কারণেই মহানবী (সা.) মদের সঙ্গে সম্পর্কিত ১০ প্রকার মানুষকে অভিশপ্ত বলে উল্লেখ করেছেন। এই ১০ প্রকার ব্যক্তিরা হলো : ১. যারা মদ গ্রহণ করে ২. যারা মদ প্রস্তুত করে ৩. যারা অন্যের জন্য প্রস্তুত করে ৪. যারা মদ পান করে ৫. যারা বহন করে ৬. যারা অপরের জন্য বহন করে ৭. যারা পরিবেশন করে ৮. যারা বিক্রি করে ৯. যারা বিক্রি থেকে লভ্যাংশ পায় এবং ১০. যারা অন্যের জন্য ক্রয় করে।
বলাবাহুল্য, মহান আল্লাহ যাদের অভিশাপ দিয়েছেন, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের চেয়ে দুর্ভাগ্যবান আর কেউ হতে পারে না। দুনিয়ায় পাপ, অন্যায়, অপরাধ থেকে মুক্ত থাকতে ও আখেরাতে নাজাত পেতে অবশ্যই সকলকে মদের সংশ্রব থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে হবে। শয়তানের প্ররোচনা ও কর্ম থেকে আল্লাহ সবাইকে সুরক্ষা দান করুন, পরিশেষে এই আমাদের কামনা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন