শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

জমি দখলের মহোৎসব

বেলদী মাদরাসা অসহায় পরিচালনা কমিটি

মো. খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের বেলদী দারুল হাদিস আলিয়া মাদরাসার নামে ওয়াকফকৃত জমি দখলের মহোৎসব চলছে। অভিযোগ রয়েছে, দাদা যে জমি মাদরাসার নামে ওয়াকফ করে দান করে গেছেন। কালের বিবর্তে সে জমিতে ব্যস্ততম হাট বাজার গড়ে ওঠায় লোভে পড়েছেন নাতি। আর তাই দাদার জোত সম্পত্তিতে ওয়ারিশ দাবি করে দান করা জমিতে পাকা দোকানঘর করে দখলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। আবার বাবার দান করা জমি ছেলে খোলা স্ট্যাম্পে বিক্রি করে দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। শুধু তাই নয়, ওই জমি রক্ষায় মাদরাসা ও বাজার পরিচালনা কমিটির সদস্যরা বাধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে দখলদাররা। ঘটনাগুলো ঘটেছে উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের বেলদী গ্রামে। বেলদী বাজার পরিচালনা কমিটির সদস্য হাবিবুর রহমান লিটন জানান, ১৯৫৭ সালে পৃথক কিছু ওয়াকফকৃত দলিলের মাধ্যমে তৎকালীন প্রায় ৩০ জন স্থানীয় বাসিন্দা ১ একর ৫ শতক জমি বেলদী দারুল হাদিস আলিয়া মাদরাসার নামে দান করেন। সে সময় থেকে মাদরাসার ওই জমিতে দোকানপাটসহ বেলদীর হাট পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে মাদরাসার ওই জমি খোদ ওয়াকফ দাতাদের ওয়ারিশরাই দখল করা শুরু করেছে। এমন একজন বেলদীর বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিনের ছেলে সালাহউদ্দিন। তার দাদা সাদত আলী ও তার চাচাতো দাদা মদত আলী গং ১৯৫৭ সালের ২০ এপ্রিল ওয়াকফ দলিলের মাধ্যমে ২০ শতক জমি মাদরাসার নামে ওয়াকফ করে দেন। বিধি অনুযায়ী সে জমি মাদরাসার ভোগ দখলে থাকায় স্যাটেলম্যান্ট জরিপে আরএস পর্চায় রেকর্ডভুক্ত হয়।
কিন্তু সালাহউদ্দিন তার লোকবল নিয়ে সম্প্রতি জোরপূর্বক মাদরাসার নামে থাকা জমি দখল করে নিজের কব্জায় নেয়। এতে বাজার পরিচালনা কমিটির লোকজনের মধ্যে লিটন, সোহেল, বকুল, খাইরুল, আরিফ গং বাধা দেন। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে দখলদার সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ একাধিক অভিযোগ দেন। এভাবে যেই প্রতিবাদ করবে তাকেই মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। তবে অভিযুক্ত সালাহউদ্দিন বলেন, দাদার দান করা ওয়াকফ সম্পত্তিতে আমাদের মৌখিক দখলের শর্ত যুক্ত ছিলো। তাই দখলে আছি।
এসব দখলদারদের তালিকায় রয়েছে বেলদী মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সদস্য একই এলাকার বাসিন্দা মজিবুর রহমান। তার পিতা ওমর আলীর দান করা ওয়াকফকৃত ২৫ শতক জমি খোলা স্ট্যাম্পে হস্তান্তর করে দেয় একটি পক্ষের কাছে। এভাবেই দাদার ওয়াকফকৃত জমিতে নাতি আবার বাবার ওয়াকফকৃত জমিতে ছেলেরা ভাগ বসাতে আশ্রয় নিচ্ছে নানা ছলচাতুরির। আর এভাবে বেদখল হয়ে যাচ্ছে মাদরাসার জমি।
এসব বিষয়ে বেলদী মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি মজিবুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, মাদরাসার জমি মাদরাসার নামেই আছে। তবে ওয়াকফ করে দেয়ার সময় একটি মৌখিক শর্তমতে যারা দান করেছে তাদের ওলি ওয়ারিশরাই ভোগদখল করবে। এ নিয়ে বিরোধ দেখা দিচ্ছে।
বেলদী বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, যারা দান করেছে তাদের ওয়ারিশরাই এখন দখল নিতে বিরোধ সৃষ্টি করছে। এসব নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ২য় সাবজজ আদালতে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে জেনেছি।
বেলদী দারুল হাদিস আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, মাদরাসার নামে ১ একর ৫ শতক জমি থাকলেও বেলদীর হাটের পুরো জমি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। বর্তমানে নানা অযুহাতে বিভিন্ন মহল দখল করে নিচ্ছে। মামলা, হামলাসহ নানা হয়রানির ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না। তবে অনেক সৎ ব্যবসায়ীরা মাদরাসার নামে বছরের ভাড়া বাবদ টাকা দিয়ে রশিদ গ্রহণ করছেন। তিনি আরো বলেন, আমি এলাকার প্রবীণদের কাছ থেকে জেনেছি ১৯৫৬ সালে দেবইর হাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। সে সময় ওই হাট অস্থায়ীভাবে বর্তমান বেলদী হাটে উঁচুস্থান হিসেবে সরিয়ে আনা হয়। পরে বন্যা চলে গেলে হাট বসা নিয়ে দেবই ও বেলদীয় লোকজনের মাঝে বিরোধ দেখা দেয়। সে সময় বেলদীর হাট রক্ষায় তৎকালীন লোকজন এ মাদরাসার নামে জমি লিখে দেন।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফিফা খান বলেন, ওয়াককৃত জমি পরিচালনা কমিটির বা মোতয়াল্লির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এটা দেখভাল করে ওয়াকফ স্টেট। তবে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন