শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মুকাররাবুন বান্দাহদের পরম প্রাপ্তি

এ. কে. এম ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

১২ সংখ্যাটি আমাদের নিকট খুবই পরিচিত। ১২ মাসে এক বছর। ১২ বছরে এক যুগ। ১২ যুগে এককাল। ১২ কালে এক মহাকাল ইত্যাদি। মূলত : ১২ সংখ্যাটি উম্মতে মোহাম্মদীয়ার জন্য পরম ও চরম সৌভাগ্যের প্রতীক। সর্ব প্রথম কথা (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ)-এর অক্ষর সংখ্যা ১২। এই কথা যিনি উচ্চারণ করেছেন, তিনি বিশ্বনবী-হযরত মোহাম্মদ মুজতাবা (সা.)। তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন ১২ রবিউল আউয়্যাল তারিখে এবং একই তারিখে ইন্তেকাল করেছেন। এজন্য ১২ সংখ্যাটি মুমিন মুত্তাকী বান্দাহদের অন্তরে রহমত ও বরকতের ফুল হয়ে চিরকাল ঝরতে থাকবে। যা শেষ হবার নয়।

বিশ্লেষণ-১ : মহান আল্লাহপাক সকল সৃষ্টির সেরা হাবিবে কিবরিয়া মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে ১২টি নেয়ামত দান করেছিলেন, যা উম্মতে মোহাম্মাদীয়ার ‘মুকাররাবুন বান্দাহগণ’ রাসূল প্রেমের অথই সাগর পাড়ি দিয়ে লাভ করে থাকেন। এই ১২টি নেয়ামতের কথা আল কোরআনে সুস্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে।

(ক) আল্লাহপাক রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সিনা মোবারক আল কোরআনের (ওহীয়ে মাতলু) এবং আল হাদীসের (ওহীয়ে গায়রে মাতলু) দ্বারা খুলে দিয়েছেন, সম্প্রসারিত করেছেন। অনুরূপভাবে তিনি মুকাররাবুন বান্দাহদের সিনাকে ও মারেফাতের নুর দ্বারা সম্প্রসারিত করে দেন।

(খ) প্রিয় নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পৃষ্ঠদেশ উম্মতের মুক্তি পথের সন্ধানের চিন্তার বোঝায় ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। আল্লাহপাক সেই ভারি বোঝা হালকা করে দিয়েছিলেন। অনুরূপভাবে তিনি মুকাররাবুন বান্দাহদের যাবতীয় দায় দায়িত্ব ও বোঝা হালকা করে দেবেন।

(গ) আল্লাহপাক রাসূলূল্লাহ (সা.)-এর নামও তাঁর যিকিরকে সকলের উপর স্থান দিয়েছেন। অনুরূপভাবে তিনি মুকাররাবুন বান্দহদের সম্মান ও মর্যাদাকে বুলন্দ মর্তবা দান করবেন। (ঘ) আল্লাহপাক রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে কোরআনের ওহী এবং হাদীসের ওহীর সর্বাপেক্ষা বড় নেয়ামত দান করেছিলেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বাত্মকভাবে এই নেয়ামতের প্রসার ও প্রচারে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। অনুরূপভাবে মুকাররাবুন বান্দাহগণের জন্য ও এই কাজ আঞ্জাম দেয়ার অপরিহার্যতা অব্যাহত রয়েছে। (ঙ) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের প্রতিটি ধাপ পূর্ববর্তী-ধাপ অপেক্ষা উচ্চতর ও মহত্ত¡র ছিল। তেমনিভাবে মুকাররাবুন বান্দাহদের জীবন পরিক্রমা ও উচ্চতর ধাপের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে।

(চ) আল্লাহপাক রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বন্ধুত্বের আসন দান করে ছিলেন। এই বন্ধুত্ব চিরস্থায়ী ও অবিচ্ছেদ্য। অনুরূপভাবে মুকাররাবুন বান্দাহগণকে ও তিনি বন্ধু হিসেবে বরণ করে নেবেন। (ছ) আল্লাহপাক রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে তাঁর সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত দান করতেই থাকবেন। অনুরূপভাবে তাঁর দানের দরজা মুকাররাবুন বান্দাহদের জন্যও সর্বদাই অবারিত থাকবে।

(জ) আল্লাহপাক ওহীর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে আদি অন্তের জ্ঞান দান করেছেন। এজন্যই তিনি সৃষ্টি জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ-জ্ঞানী। অনুরূপভাবে তিনি মুকাররাবুন বান্দাহগণকে মুরাকাবা মুসাহাদা, মুয়ায়েনা, কাশফ ও ইলহামের মাধ্যমে জ্ঞানদান করতেই থাকবেন।

(ঝ) রাসূলুল্লাহ (সা.) জাগতিক দৃষ্টিতে অনাথ, অসহায় ও এতীম ছিলেন বটে, কিন্তু আল্লাহপাকের আশ্রয় লাভে তিনি ছিলেন। শ্রেষ্ঠতম সৌভাগ্যশালী। অনুরূপভাবে মুকারাবুন বান্দাহগণও সৌভাগ্যের বরণ ডালা মাথায় নিয়েই জীবন চলার পথ অতিক্রম করবেন।

(ঞ) রাসূলুল্লাহ (সা.) দুনিয়াদারীর দিক থেকে নিঃস্ব ও গরিব ছিলেন বলে ধারণা করা হলেও আসলে তিনি ছিলেন পৃথিবীর ও আখেরাতের বাদশাহ। অনুরূপভাবে মুকাররাবুন বান্দাহগণ ও দুনিয়া এবং আখেরাতে অভাবমুক্ত জীবন যাপন করবেন। (ট) রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো সায়েল বা ভিক্ষুককে কোনোদিন বিমুখ করেননি, তাদের প্রতি রুষ্ট হননি। তিনি ছিলেন দয়ার্দ্র চিত্ত। তেমনিভাবে মুকাররাবুন বান্দাহগণ ও দয়ালু গুণের অধিকারী হয়ে থাকেন।

(ঠ) রাসূলুল্লাহ (সা.) এতীম, অসহায়দের আশ্রয়স্থল ছিলেন। তিনি কখনো তাদের প্রতি নিষ্ঠুরতা ও কঠোরতা প্রদর্শন করেননি। একইভাবে মুকাররাবুন বান্দাহগণ ও খেদমতে খালকের জন্য নিবেদিত প্রাণ হিসেবে জীবন উৎসর্গ করেন এবং সফল হবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Sshamim Shohagh ২২ মার্চ, ২০২১, ১:২০ এএম says : 0
মানুষ সমগ্র সৃষ্টিজগতের সর্বশ্রেষ্ঠ জীব। জ্ঞান-গুণ, বিবেক-বোধ, বুদ্ধিমত্তা-তৎপরতা, কার্যদক্ষতা ও জীবনব্যবস্থা থেকে শুরু করে আনুসাঙ্গিক প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষ অপরাপর অন্যান্য সৃষ্টি থেকে ব্যতিক্রম ও প্রাগ্রসর।
Total Reply(0)
গাজ ওয়া তুল হিন্দ ২২ মার্চ, ২০২১, ১:২০ এএম says : 0
জীবন ও জগতের সব কিছুতে মানুষের স্বকীয়তা-অনন্যতা ও বৈশিষ্ট্য দেদীপ্যমান। আল্লাহ তাআলা মানুষকে সমুজ্জ্বল ও প্রকৃষ্ট বহুবিধ গুণাবলি দ্বারা ঋদ্ধ করেছেন, যা মানুষকে সৃষ্টিকুল থেকে সামগ্রিকভাবে আলাদা করে তুলেছে।
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ২২ মার্চ, ২০২১, ১:২১ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর বান্দা হলো তারা, যারা জমিনে বিনীতভাবে চলাফেরা করে।’ (সুরা ফুরকান-৬৩) অর্থাৎ তাঁদের চালচলনে বিনয়-স্থিরতা ও নিরহঙ্কার প্রকাশ পায়। আত্মগরিমা, শঠতা ও দাম্ভিকতা দেখা যায় না।
Total Reply(0)
হোসাইন এনায়েত ২২ মার্চ, ২০২১, ১:২২ এএম says : 0
আল্লাহর বন্ধুত্ব লাভের আরেকটি উপায় হলো, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আনুগত্য। আল্লাহ নিজেই এই শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভাৃলাবাসো, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভাৃলাবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)
Total Reply(0)
Syed Mamurul Islam ২২ মার্চ, ২০২১, ১০:০৬ এএম says : 0
রাসূলুল্লাহ (সা.) দুনিয়াদারীর দিক থেকে নিঃস্ব ও গরিব ছিলেন বলে ধারণা করা হলেও আসলে তিনি ছিলেন পৃথিবীর ও আখেরাতের বাদশাহ। Likhata osadharon legeche.
Total Reply(0)
Monjur Rashed ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:৪২ পিএম says : 0
This sort of exceptional knowledge can not be achieved from conventional educational institutions. This can be achieved only through the company of true pious persons .
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন