বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে শিখিয়েছে নিষেধাজ্ঞা : খামেনি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি ফার্সি নববর্ষ ১৪০০ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে ধরে নিয়ে দেশের দায়িত্বশীলদের কাজ করতে হবে। দেশের অর্থনীতিকে কোনো অবস্থায় সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ওপর নির্ভরশীল করে ফেলা যাবে না। সর্বোচ্চ নেতা তার ভাষণে ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে ‘ভয়াবহ অপরাধ’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যে দেশটি পরমাণু বোমা হামলা চালিয়ে একটি দেশের দুই লাখ ২০ হাজার মানুষকে হত্যা করতে পারে, সে দেশের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ অপ্রত্যাশিত নয়। তবে এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য অনেক ক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমাদের যুবসমাজ নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন এবং অনেক পণ্য দেশেই তৈরি করে ইরানকে পরনির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এটি আমাদের জন্য ছিল একটি মূল্যবান শিক্ষা। নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলায় আমাদের দু’টি করণীয় রয়েছে। প্রথমত, আমরা নিষেধাজ্ঞা আরোপকারীর কাছে গিয়ে অনুরোধ করতে পারি যে, আপনারা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিন। তখন সে আমাদের ওপর সাম্রাজ্যবাদী দাবি-দাওয়া চাপিয়ে দেবে। এই পথটি অপমানজনক ও অবমাননাকর। দ্বিতীয় পথ হচ্ছে, নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে সব অর্থনৈতিক প্রয়োজন দেশের ভেতরেই মেটানোর চেষ্টা করা। ইরানি জনগণ দ্বিতীয় পথ বেছে নিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, করোনাভাইরাসের কথা উল্লেখ করা যায়। এই ভাইরাস ইরানে ছড়িয়ে পড়ার শুরুতে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত মাস্ক পর্যন্ত ছিল না। অথচ এখন আমরা নিজেরা করোনাভাইরাস মোকাবিলার সব পণ্য দেশেই তৈরি করছি। করোনাভাইরাসের টিকা দেশেই তৈরি হয়েছে এবং জনগণ সে টিকা নিচ্ছে। কাজেই দেখা যাচ্ছে, নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলায় আমাদেরকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে এবং অবমাননাকর পথ বেছে নেয়া যাবে না। পরমাণু সমঝোতা সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সর্বোচ্চ নেতা বলেন, আমেরিকার ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি’ ব্যর্থ হয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সে চেয়েছিল ইরান অবমাননাকরভাবে তার কাছে নতিস্বীকার করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইরান নতিস্বীকার করেনি বরং সেই ব্যক্তি চরম অপমানিত অবস্থায় বিদায় নিয়েছে। বিদায় নেয়ার আগে সে আমেরিকারও বদনাম করেছে। অন্যদিকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান গৌরবের সঙ্গে টিকে রয়েছে। আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্টও যদি তার পূর্বসুরির পথ অনুসরণ করে তবে সেও একদিন হারিয়ে যাবে কিন্তু ইরান গর্বভরে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে। সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ইরানের চূড়ান্ত নীতি হচ্ছে, পরমাণু সমঝোতায় স্বাক্ষরকারী পশ্চিমা দেশগুলোকে নিজেদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকরভাবে প্রত্যাহার করতে হবে। আর তারা তা করলেই ইরান এই সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করবে। তিনি আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য নীতির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ইহুদিবাদী ইসরাইলের মতো একটি কসাই সরকারকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া আমেরিকার চরম ভুল সিদ্ধান্ত। সেইসঙ্গে সিরিয়ায় মার্কিন সেনা উপস্থিতিকেও তিনি ওয়াশিংটনের ভুল সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, কিছু আরব দেশ সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে গোটা মুসলিম উম্মাহর অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হবে না। মুসলিম উম্মাহ ইহুদিবাদী ইসরাইলের হাতে ফিলিস্তিনি ভূখন্ড জবরদখলের দুঃসহ স্মৃতি কখনোই ভুলে যাবে না। ইয়েমেন সংকটের জন্যও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আমেরিকাকে দায়ী করে বলেন, মার্কিন সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও সবুজ সংকেত নিয়ে সউদী আরব এই দারিদ্রপীড়িত দেশটির ওপর আগ্রাসন শুরু করেছে। তিনি বলেন, এখনো সময় আছে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণা করার আগে ইয়েমেনে আগ্রাসন বন্ধ করুন। সর্বোচ্চ নেতা তার ভাষণে নতুন ফার্সি বছরের নাম দেন ‘উৎপাদন, পৃষ্ঠপোষকতা ও বাধা অপসারণের বছর›। বিগত ফার্সি বছরের নাম ছিল ‘উৎপাদন বৃদ্ধির বছর।› ওই নামের প্রতি সম্মান রেখে ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিতে বহু পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী এ বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিদেশি পণ্য আমদানি বন্ধ করা বা কমিয়ে দেয়া এবং মধ্যসত্ত্বভোগী শ্রেণির প্রভাব কমানোর আহবান জানান। তিনি বলেন, মধ্যসত্ত্বভোগীরা পণ্য উৎপাদনকারী ও ভোক্তা উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। সর্বোচ্চ নেতা বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরারও আহবান জানিয়েছেন। ইরনা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Monjur Rashed ২৪ মার্চ, ২০২১, ৫:২৭ পিএম says : 0
Fortune favors the brave. Moreover, Iranians are talented by nature.
Total Reply(0)
Monjur Rashed ২৪ মার্চ, ২০২১, ৬:৪৩ পিএম says : 0
Fortune favors the brave. Moreover, Iranians are talented nation naturally.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন