শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

তাকদীর বা ভাগ্য প্রসঙ্গ

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

আমের ইবনে আবি মূসা থেকে আবু বুরদাহ সূত্রে ইমাম বুখারী বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমাকে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর বলেছেন, তোমর কি জানা আছে যে, আমার বাবা তোমার বাবাকে কি বলেছিলেন? আমের বললেন, না। তিনি বললেন, আমার বাবা ওমর তোমার বাবা আবু মূসাকে বলেছিলেন, তুমি কি এটা পছন্দ কর যে, আমরা রাসূল (সা.) এর ওপর ঈমান এনেছি, তার সাথে হিজরত করেছি, তার দরবারে প্রতিদিন উপস্থিত হয়েছি এবং তার সাথে থেকে সর্ববিধ কাজে জড়িত রয়েছি। এসব কিছুই যথাযথভাবে বহাল থাকবে এবং তার পরবর্তীকালে আমরা যা কিছু করছি, তা থেকে উক্ত আমলের বদৌলতে নাজাত পেয়ে যাব ও পরবর্তী আমাদের ভালো আমল ও খারাপ আমল সমানে সমান হয়ে যবে?

তদুত্তরে তোমার বাবা আমার বাবাকে বললেন, না। আল্লাহর কসম, তা পছন্দ করি না। আমরা রাসূল (সা.) এর পরে জিহাদ করেছি, নামাজ পড়েছি, রোজা রেখেছি, তদুপরি অন্যান্য বহুবিধ পুণ্য কাজ করেছি, আমাদের হাতে বহু লোক ইসলামগ্রহণ করেছে, আমরা এসব কাজের বিনিময় লাভের আশা করছি।
তদুত্তরে আমার বাবা বললেন, আল্লাহর কসম, আমি তো এটাই পছন্দ করি যে, রাসূল (সা.) এর সময়কার আমাদের আমল বহাল থাক এবং আমাদের পরবর্তী আমল থেকে আমরা যেন পুরোপুরি রেহাই পাই। আমের বলেন, তখন আমি বললাম, খোদার কসম, তোমার বাবা আমার বাবা থেকে উত্তম ছিলেন।
ইমাম গাযযালী (রহ.) বর্ণনা করেন যে, হযরত ওমর (রা.) একদিন বললেন, যদি ঘোষণা করা হয় যে, সব মানুষকেই জাহান্নামে প্রবিষ্ট করা হবে শুধু একজন ছাড়া, তা হলেও আমি আশা করব যে, সেই মানুষটি আমি হব। তেমনি যদি ঘোষণা করা হয় যে, এক ব্যক্তি ছাড়া সবাইকে জান্নাতে নেয়া হবে, তাহলেও আমার আশংকা থাকবে যে, সেই ব্যক্তিটি হয়ত আমিই।

ইমাম গাযযালী (রহ.) অন্য এক জায়গায় বলেন, হযরত ওমর (রা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, সে তার ক্রোধের কাছেও ঘেঁষবে না। তেমনি যে ব্যক্তি আল্লাহ থেকে তাকওয়া অনুসরণ করবে, সে যা মন চায় তা করতে পারে না। যদি কেয়ামতের দিন বলতে কিছু না হতো, তাহলে তুমি যা কিছু দেখছ তার বিপরীত অবস্থা দেখতে পেতে।

আবু তামীম জায়শানী থেকে আহমদ ইবনে হাম্বল বর্ণনা করেন যে, তিনি ওমর (রা.)-কে বলতে শুনেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা যদি আল্লাহর ওপর পুরোপুরি ভরসা কর, তাহলে তিনি যেভাবে পাখীদের রিযিক দান করেন, সেভাবে তোমাদেরও দান করবেন। পাখীরা সকালে খালি পেটে বের হয়ে যায় ও সন্ধ্যাবেলা ভরা পেটে ঘরে ফেরে।

সারগ্-এর ঘটনা প্রসংগে ইমাম মালেক বর্ণনা করেন যে, মহামারির কারণে যখন হযরত ফারুকে আযম সিরিয়া না গিয়ে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন আবু উবায়দা (রা.) বললেন, আপনি কি তাকদীর থেকে পালাতে চাচ্ছেন?
তিনি জবাবে বললেন, হে আবু উবায়দা, এ প্রশ্নটি তুমি ছাড়া অন্য কেউ করলে মানাত। হ্যাঁ, আমি আল্লাহর তাকদীর থেকে আল্লাহর তাকদীরের দিকেই পালাচ্ছি। তোমার কি জানা নেই যে, তুমি যদি তোমার উট নিয়ে কোনো উপত্যকায় যাও, যার একদিকে সবুজ ঘাসপাতা ও অন্যদিকে শুষ্ক মরু, তখন যদি তুমি তোমার উট ঘাসপাতার ময়দানে চরাও, সেটাও হবে তাকদীর এবং যদি শুষ্ক মরুতে চরাও সেটাও হবে তাকদীর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
জসিম ৩১ মার্চ, ২০২১, ২:৪৭ এএম says : 0
তাকদিরে বিশ্বাস করা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সাধারণত তাকদির বলতে আমরা বুঝি নিয়তি, অদৃষ্ট, বিধিলিপি, ভাগ্যের লিখন, কপাল, বরাত, কিসমত ইত্যাদি।
Total Reply(0)
হুমায়ূন কবির ৩১ মার্চ, ২০২১, ২:৪৮ এএম says : 0
এই মহাবিশ্বে ভবিষ্যতে যা কিছু ঘটবে, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তাআলা তাঁর পূর্বজ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী সেসব নির্ধারণ করে রাখাকে তাকদির বলে।
Total Reply(0)
নুরজাহান ৩১ মার্চ, ২০২১, ২:৪৯ এএম says : 0
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক জিনিসই তাকদির অনুযায়ী সংঘটিত হয়ে থাকে। এমনকি অক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তাও।’ (মুসলিম, রিয়াদুস সলিহিন. পৃষ্ঠা ২৮২)
Total Reply(0)
কাওসার আহমেদ ৩১ মার্চ, ২০২১, ২:৪৯ এএম says : 0
হজরত সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, দোয়া আল্লাহর ফয়সালাকে পরিবর্তন করাতে পারে। আর নেক আমল বয়সকে বৃদ্ধি করাতে পারে।’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ২১৩৯)
Total Reply(0)
তফসির আলম ৩১ মার্চ, ২০২১, ২:৪৯ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুল (সা.) মানুষকে কাজ করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন, তাকদিরের ওপর ভরসা করে বসে থাকতে নিষেধ করেছেন।
Total Reply(0)
Noman ৩১ মার্চ, ২০২১, ৮:৫৮ এএম says : 0
তাকদিরে বিশ্বাস করা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
Total Reply(0)
Bazlur Rashid ৩১ মার্চ, ২০২১, ৯:৩৩ এএম says : 0
কর্মই ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক, তাই সৎকর্ম বা নেক আমলের প্রতি মনোযোগী হওয়া বাঞ্ছনীয়।
Total Reply(0)
Nadia Zahan ৩১ মার্চ, ২০২১, ৯:৩৪ এএম says : 0
আমাদের উচিত হলো আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা, আল্লাহর রহমত চাওয়া ও এমন নেক আমল করা, যার মাধ্যমে আল্লাহ তুষ্ট হয়ে আমাদের তকদিরকে সৌভাগ্যে পরিণত করবেন।
Total Reply(0)
Hafiz Uddin ৩১ মার্চ, ২০২১, ৯:৩৪ এএম says : 0
তকদির বা ভাগ্য নেক আমল দ্বারা, পিতা-মাতার দোয়ায় ও সদকা ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবর্তন হয়।
Total Reply(0)
Kabir Ahmed ৩১ মার্চ, ২০২১, ৯:৩৫ এএম says : 0
তকদির বা ভাগ্য মানুষের অজানা অজ্ঞেয় ও অজেয়; আমরা জানি না তা স্থির নাকি পরিবর্তনীয়।
Total Reply(0)
Md. Raju Ahamed ৩১ মার্চ, ২০২১, ১২:২০ পিএম says : 0
তাকদির এর উপর অবশ্যই বিশ্বাস রাখতে হবে তবে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য চেষ্ঠাও করতে হবে। প্রত্যেক প্রানীর রুজির ব্যবস্থা আল্লাহ করে দিবেন তাই ভেবে কাউকে ঘরে বসে থাকতে বলেনি। যেমন কোন পশু, পাখি খাবারের জন্য বাসা থেকে বের না হয়ে বাসায় বসে থাকেনা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন