প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে স্বস্তির বৃষ্টি ঝরেছে। গত কয়েকদিন ধরে চলতে থাকা গরম ভাব কেটে যায় গতকাল রোববার সন্ধ্যার ঝড়-বৃষ্টিতে। ঝড়ের তীব্রতা বেশি ও বৃষ্টির পরিমাণ কম হলেও এই বৃষ্টিই স্বস্তি এনে দেয় নগরজীবনে। এই বৃষ্টিকে ক্ষণিকের বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী ঢাকায় প্রথম দফায় সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড়। প্রথম দফায় ধূলিঝড়ে বিপদে পড়েন বাইরে থাকা মানুষেরা। এমনিতেই লকডাউনের শেষদিন হওয়ায় রাস্তায় সকাল থেকে যানজটের ভোগান্তি ছিল। ধুলাবালিতে অন্ধকার হয়ে যায় শহরের আকাশ।
আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকায় ৬৬ কিমি বেগে ঝড় হয়েছে। রাজশাহীতে হয়েছে ৬২ কিমি বেগে। এছাড়া নাটোর, মেহেরপুর, বগুড়া, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ দেশের অনেক জেলায় কালবৈশাখী বয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বইমেলা প্রাঙ্গণে। গত কয়েকদিন ধরেই বয়ে যাচ্ছিল তাপপ্রবাহ। রাজধানীও বেশ উত্তপ্ত ছিল। সর্বত্রই ছিল হাসফাঁস অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বিকেল ৩টার পর থেকে আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখা যায়। বিকেলেই অন্ধকার নেমে আসে একাংশে। সন্ধ্যায় প্রথমে ব্যাপক ধূলিঝড় দিয়ে শুরু হয়। এরপর প্রায় আধাঘণ্টা দমকা বাতাসে চালিয়ে কিছু শান্ত হয় প্রকৃতি। বাতাসের বেগ কমে গেলে নামে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত। বৃষ্টির পরপরই নগরজুড়েই কমে যায় তাপমাত্রা। কেটে যায় প্রচন্ড গরমের অস্বস্তি।
এদিকে আজ সোমবার থেকে করোনার কারণে শুরু হচ্ছে লকডাউন। এ অবস্থায় সবার ব্যস্ততা বাসায় ফেরার। কিন্তু হঠাৎ ঝড়ে ভীতির সঞ্চার হয়। অনেককেই দেখা যায় বিভিন্ন ভবন-দোকানে আশ্রয় নেন। সড়কে গতি কমে যায় বাহনেরও। বিভিন্ন জায়গায় গাছের ডালপালা ভেঙে রাস্তায় পড়ে যায়। আবহাওয়াবিদ নাজমুল জানান, কালবৈশাখীর মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। এটা এখন অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে দেশের উপর দিয়ে যে তাপপ্রবাহ বয়ে চলছে, সেটা অব্যাহত থাকবে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, গতকাল সকাল থেকে ঢাকা আশেপাশের কয়েকটি অঞ্চলসহ দেশের অনেক জায়গায় ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। তবে প্রবল বৃষ্টি না হলে দিনে তাপপ্রবাহ আগের মতোই বইবে। রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কমে যেতে পারে।
এদিন দেশের উত্তরাঞ্চলে রংপুর-গাইবান্ধা এলাকা বিকেল ৫টার দিকে ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ে গাছপালা ও কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। এছাড়া বৃষ্টি হয়েছে রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, ময়মনসিংহ এবং কুষ্টিয়ায়।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, উত্তর আন্দামান সাগর ও এর আশেপাশের এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে উত্তর আন্দামান সাগর ও মিয়ানমার উপক‚লে অবস্থান করছে। এটি পরবর্তীতে আরও গুরুত্বহীন হয়ে পড়তে পারে। পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গও এর এর আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছে।
এই লঘুচাপের প্রভাবে রংপুর, সিলেট, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ী ভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত ভাবে শিলাবৃষ্টিও হতে পারে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হওয়ায় কমে এসে তাপপ্রবাহ। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকায় ৩৪ দশমিক ৯, ময়মনসিংহে ৩৪, চট্টগ্রামে আজ ৩৩ দশমিক ২, সিলেটে ৩৫, রাজশাহীতে ৩৮, রংপুরে ৩৪ দশমিক ৪, খুলনায় ৩৫ দশমিক ৫ এবং বরিশালে আজ তাপমাত্রা ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন