শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

অলৌকিকতা বা কারামত

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

নবী রাসূলগণের হয় মুজিযা। সাহাবায়ে কেরাম ও ওলি আওলিয়াদের হয় কারামত। আল্লাহর ইচ্ছা ও হুকুমে সংঘটিত অলৌকিক ঘটনার নাম কারামত। হযরত উমর রা. এর কারামত অনেক। আমর ইবনুল হারিছের বর্ণনা সূত্রে মুহিব্বুত তাবারী কর্তৃক বর্ণিত আছে যে, একদিন হযরত ওমর (রা.) জুমআর খুতবা পাঠ করছিলেন। ঠিক সেই খুতবার মাঝখানে তিনি হঠাৎ হেঁকে বললেন, ‘ইয়া সারিয়াতু আল-জাবাল’, অর্থাৎ হে সেনাদল, পাহাড়ে আশ্রয় নাও। এভাবে তিনি দুই অথবা তিনবার বললেন। অঃপর তিনি পুনরায় খুতবা পাঠে মনোবিবেশ করলেন। লোকেরা বলাবলি করছিল যে, আমীরুল মু’মিনীন কি পাগল হয়ে গেলেন? খুতবার মাঝে ‘ইয়া সারিয়াতু আল-জাবাল’ বলে চিৎকার করলেন কেন?

আবদুর রহমান ইবনে আওফের সাথে যেহেতু তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, তাই তিনি বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন, আপনি খুতবার মাঝখানে লোকদের সাথে কথা বলেছেন? ‘ইয়া সারিয়াতু আল-জাবাল’ এর তাৎপর্য কি? তিনি জবাব দিলেন, আল্লাহর কসম, এটা আমার ভেতর থেকে স্বতস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে এসেছে। আমি যখন আমাদের সেনাদলকে দেখতে পেলাম যে, তারা চারদিক থেকে শত্রু পরিবেষ্টিত হচ্ছে, তখন আমি এটা না বলে পারলাম না যে, নিকটস্থ পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান নিয়ে লড়াই কর।

এর ক’দিন পরেই উক্ত সারিয়ার পত্র নিয়ে দূত এল। তাতে জানানো হলো, শুক্রবার আমরা শত্রুর মোকাবিলা করেছি। আমরা সকালে লড়াই শুরু করেছি এমনকি জুমআর ওয়াক্ত পর্যন্ত লড়াই চলতে লাগল। আকাশের সূর্য পশ্চিম দিকে ঝুঁকে যাচ্ছিল। হঠাৎ আমরা এক ঘোষকের এ আওয়াজ শুনতে পেলাম ‘আল জাবাল আল জাবাল’। সাথে সাথে আমরা পাহাড়ের বেষ্টনীতে গিয়ে লড়াই চালালাম। ফলে আমরা বিজয়ী হলাম ও শত্রæরা পরাজিত হলো।

এছাড়াও বর্ণিত আছে যে, যখন মিশর বিজয় সম্পন্ন হলো, তখন মিশরের বাসিন্দারা আমর ইবনুল আসের কাছে এসে বলল, আমাদের এ নীলনদে প্রতি বছর এক সুন্দরী কন্যাকে উৎসর্গ করতে হয়। অন্যথায় নদীতে পানি আসে না। ফলে আমাদের শহর ও এলাকাগুলোতে শস্যহানিজনিত আকাল দেখা দেয়। আমীরুল মু’মিনীন হযরত ওমর (রা.)-কে তিনি তখন ব্যাপারটি অবহিত করলেন।

তার জবাবে তিনি লিখলেন, ইসলাম সর্ববিধ কুসংস্কারের মূলোচ্ছেদ ঘটায়। তারই সাথে তিনি নীলনদে নিক্ষেপের জন্যে একটি পত্র লিখে পাঠালেন। পত্রটির মর্ম এই : ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। এ পত্রটি আল্লাহর বান্দা ওমর ফারুকের পক্ষ থেকে নীলনদের কাছে প্রেরিত হলো। হে নীলনদ, তুই যদি নিজের ইচ্ছায় প্রবাহমান হয়ে থাকিস তো তোকে আর আমাদের প্রয়োজন নেই। তবে যদি আল্লাহর আদেশে প্রবহমান হয়ে থাকিস তো তারই নির্দেশে প্রবাহিত হতে থাক।’

বস্তুত নীলনদ সে বছর থেকে শুরুতে ষোল গজ ও পরে প্রতি বছর বাড়তে বাড়তে আরও ছয় গজ উচ্চতা নিয়ে প্রবাহিত হয়ে চলল। অপর এক বর্ণনায় আছে যে, পত্রটি নিক্ষেপের পর তার চালু হওয়া প্রবাহ আর কখনও বন্ধ হয়নি।

খাওয়াত ইবনে জুবায়ের থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত ওমর (রা.)-এর খেলাফতকালে এক বছর খরা ও আকাল দেখা দিল। তিনি সবাইকে ইস্তিসকা নামায আদায়ের জন্য বাইরে আসার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তাদের নিয়ে দু’রাকাত ইস্তিসকার নামাজ পড়লেন। তারপর তিনি নিজের চাদরের ডানদিক বামে ও বামদিক ডানে পাল্টে নিলেন। অতঃপর হাত প্রশস্ত করে এভাবে দো’আ শুরু করলেন, ‘আল্লাহুম্মা নাস্তাগফিরুকা ওয়া নাস্তাঈনুকা’। তার দোয়া শেষ না হতেই বৃষ্টি শুরু হলো।

ইত্যবসরে একদল বেদুঈন এসে বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন, আমরা অমুক দিন অমুক সময় যখন আমাদের জমিতে বিচরণ করছিলাম, তখন দেখলাম হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলো এবং তা থেকে এ আওয়াজ আসছিল, হে আবু হাফস! তোমার কাছে প্রশান্তিপূর্ণ বৃষ্টি পৌঁছে গেছে। হে আবু হাফস! তোমার কাছে কাক্সিক্ষত প্রশান্তিপূর্ণ বৃষ্টি পৌঁছে গেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন