দুই জেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে গাইবান্ধার পাঁচ উপজেলায় ৭ জন ও কুড়িগ্রাম, কুষ্টিয়ায় ১ জন করে। এসময় দমকা ও ঝড়ো হাওয়ায় বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রচন্ড গতির বাতাসে কাচা-পাকা ঘর ভেঙে পড়াসহ উড়ে গেছে টিনের চালা। আমের মুকুল, লিচু ও উড়তি জমির আমন ধানের গাছসহ বিভিন্ন জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও গাছ ভেঙে সড়কের ওপরে পড়ায় যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধার সদর, সুন্দরগঞ্জ, পলাশবাড়ী, ফুলছড়ি ও সাদুল্লাপুরে কালবৈশাখী ঝড়ে তিন নারী ও এক শিশুসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বেলা তিনটার দিকে গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলার ওপর দিয়ে এ ঝড় বয়ে যায়। নিহতরা হলেন পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের মোস্তাফুর গ্রামের গোফফার রহমান এবং ডাকেরপাড়া গ্রামের জাহানারা বেগম। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের দোয়ারা গ্রামের ছোলায়মান মিয়ার স্ত্রী ময়না বেগম (৪০)। ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারি গ্রামের বিটুল মিয়ার স্ত্রী শিমুলী আক্তার (২৭)। সাদুল্লাপুর উপজেলায় আব্দুস সালাম সর্দার নামে এক ব্যক্তি ঝড়-আতঙ্কে মারা গেছেন। এছাড়া ঝড়ে আহত হওয়ার পর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানোর পথে দুজনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন সদর উপজেলার তিনগাছের তল এলাকার হিরু মিয়ার শিশুসন্তান মনির মিয়া (৫) ও ফুলছড়ি উপজেলার এরেÐাবাড়ি গ্রামের হারিস উদ্দিন (৩৫)।
এদিকে গাইবান্ধার সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় বৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রচন্ড গতির বাতাসে কাঁচা-পাকা ঘর ভেঙে পড়াসহ উড়ে গেছে টিনের চালা। এ ছাড়া আমের মুকুল, লিচু ও আমন ধানসহ বিভিন্ন জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও গাছ ভেঙে সড়কের ওপরে পড়ায় যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। বিকেল পৌনে চারটা পর্যন্ত থেমে থেমে চলে ঝোড়ো হাওয়া। সঙ্গে ছিল দমকা বাতাস। সেই সঙ্গে কোনো কোনো এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের খবরও পাওয়া গেছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধা সদর উপজেলার স্টেশন রোড, ট্রাফিক মোড়, বাংলাবাজারসহ শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও পাড়া মহল্লায় অনেক কাঁচা-পাকা ঘর ভেঙে পড়েছে। বসতবাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন সড়কের দুই পাশের ছোট-বড় বেশ কিছু গাছপালা উপড়ে পড়েছে। স্থানীয় হাসেমবাজার এলাকায় একটি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ হয়ে আছে।
একই অবস্থা দেখা গেছে সাদুল্লাপুর উপজেলায়ও। ঝোড়ো বাতাস আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে উপজেলা শহর, কাজিবাড়ি, জয়েনপুর, জামুডাঙ্গাসহ বিভিন্ন গ্রামের অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি আর গাছপালা সড়কে উপড়ে পড়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন জানান, হঠাৎ বয়ে যাওয়া দমকা হাওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় বাড়িঘর ও গাছপালা ভেঙে পড়াসহ ধানের জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ঝড়ে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে কালবৈশাখী ঝড়ে উড়ে আসা ধারালো টিনে গলা কেটে এক যুবক নিহত হয়েছে। নিহত রবিউল (৪০) কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার শশিধরপুর গ্রামের সাদ মন্ডলের পুত্র। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রবিউল সাতবাড়ী থেকে পেঁয়াজ নিয়ে গাড়ির উপর বসে বাড়ির দিকে আসতে ছিল। এসময় কাল বৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ে উড়ে আসা ধারালো টিনে গলা কেটে নিহত হন। আল্লারদর্গা মহিষাডোরা তেল পাম্প এর সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। লাশ বর্তমানে ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে শুষ্ক ঝড়ের তান্ডবে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত নারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের ফজর আলীর স্ত্রী।তার দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন