তিন স্থানে মিথ্যা বলার অনুমতি থাকার কথা হাদিসে এসেছে। আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন অবস্থা ছাড়া কোনো অবস্থাতেই মিথ্যা বলা বৈধ নয়। (তা হলো) স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য তার সঙ্গে স্বামীর কথা বলা, যুদ্ধক্ষেত্রে মিথ্যা বলা এবং মানুষের মধ্যে বিবাদ নিরসনে মিথ্যা বলা।’ (তিরমিজি : ১৯৩৯; আবু দাউদ : ৪৯২১) । উম্মু কুলসুম বিনতে উকবা ইবনে আবি মুআইত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছেন যে, ‘যে ব্যক্তি মানুষের বিবাদ মিটিয়ে দেয়, কল্যাণের কথা বলে এবং কল্যাণ বাড়ায় সে মিথ্যুক নয়।’ (মুসলিম : ২০৬৫)
স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরে মিথ্যা বলার অর্থ হলো সম্পর্কের স্থায়িত্ব ও সংসার টিকিয়ে রাখতে ভালোবাসা-প্রেমের বহিঃপ্রকাশ করার ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা। যেমন স্বামী বলতে পারবে- ‘তুমি অনেক দামি’, ‘আমার কাছে তোমার মতো প্রিয় কেউ নেই’, ‘আমার চোখে তুমিই পৃথিবীর সুন্দরতম নারী’ ইত্যাদি। তবে তাদের মিথ্যা বলার সুযোগ থাকার অর্থ মোটেও কারো অধিকার খর্ব করা বা দায়িত্ব থেকে পালিয়ে বেড়ানো নয়।
ইমাম বাগাভি রহ. ‘শারহুস সুন্নাহ’- তে আবু সুলাইমান আল-খাত্তাবির সূত্রে বলেন, ‘শান্তির খোঁজে এবং ক্ষতি এড়াতে- এ বিষয়গুলোতে বাড়িয়ে বলতে এবং সত্য অতিক্রম করতে কখনো-সখনো মানুষ অপারগ হয়ে পড়ে। এ কারণেই যেখানে মীমাংসার সম্ভাবনা থাকে সেখানে টুকটাক ঝামেলা হলে মিথ্যা বলার অনুমতি রয়েছে।
দু ব্যক্তির মধ্যে মীমাংসার জন্য মিথ্যা বলার বিষয়টি একজনের পক্ষ থেকে আরেকজনের কাছে কল্যাণ ও সৌন্দর্য হিসেবেই পৌঁছে- (মধ্যস্থতাকারী) প্রথম ব্যক্তির কাছ থেকে কথাটি না শুনলেও সে মীমাংসার জন্যই এমনটি বলে।
যুদ্ধক্ষেত্রে মিথ্যা বলার অর্থ হলো নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করা, সঙ্গীদের মনোবল বাড়াতে উৎসাহব্যঞ্জক কথা বলা এবং এর মাধ্যমে শত্রুকে ধাঁধায় ফেলে দেয়া। এ কারণেই নবি (সা.) বলেছেন, ‘যুদ্ধ ধোঁকার নাম।’
আর স্ত্রীর সঙ্গে মিথ্যা বলার অর্থ হলো তাকে গুরুত্ব দেয়া, আপন করে নেয়া, অন্তরে যতটুকু ভালোবাসা আছে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা, এর মাধ্যমে স্থায়ী সম্পর্কের প্রচেষ্টা করা এবং তার চরিত্র সংশোধনের চেষ্টা করা। আল্লাহই সর্বজ্ঞাত।’ (শারহুস সুন্নাহ ১৩/১১৯)।
হজরত উমর রাযি. যুগে এক লোক স্ত্রীকে বলল, ‘তোমাকে আল্লাহর কসম করে বলছি- তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?’ সে বলল, ‘আল্লাহর কসম করেই যেহেতু বলেছ, তাহলে (আমি বলব) ‘না’।’ লোকটি বের হয়ে গেল এবং উমরের কাছে এলো। উমর তার স্ত্রীর কাছে লোক পাঠালেন এবং বললেন, ‘তুমি কি তোমার স্বামীকে বলেছ- তুমি তাকে ভালোবাসো না?’ সে বলল, ‘আমিরুল মুমিনিন, সে আমাকে আল্লাহর কসম করে বলেছেন তো আমি কি মিথ্যা বলব?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ মিথ্যা বল। সব ঘরই ভালোবাসার ওপর বাঁধা হয় না। তবে মানুষ ইসলাম ও সামাজিক মর্যাদার কারণে একসঙ্গে বসবাস করে।’
ইমাম নাবাবি রহ. ‘শারহু মুসলিম’-এ বলেন, ‘স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর মিথ্যা বলা এবং স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর মিথ্যা বলার অর্থ হলো- ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো, আবশ্যক নয় এমন বিষয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়া ইত্যাদি বিষয়ে মিথ্যা বলা। তবে স্বামীর জন্য বা স্ত্রীর জন্য আবশ্যক এমন কোনো বিষয় থেকে বঞ্চিত করার জন্য অথবা স্বামীর বা স্ত্রীর অধিকার নেই এমন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য প্রতারণা করা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।’
হাফিজ ইবনে হাজার রহ. ‘ফাতহুল বারি’তে বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রীর মিথ্যা বলা সেসব বিষয়ের জন্য প্রযোজ্য- যেসব বিষয়ে স্বামী বা স্ত্রী অপরজনের অধিকার খর্ব করবে না অথবা স্বামী বা স্ত্রীর অধিকার নেই এমন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।’ সুতরাং এমন মিথ্যা বলা যাবে না, যে মিথ্যায় স্বামী স্ত্রীর হক নষ্ট করে বা স্ত্রী স্বামীর হক নষ্ট করে। প্রতরণার আশ্রয় নিয়ে কেউ কারো হক নষ্ট করতে পারবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন