আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা সবসময় নিজ ভুলত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বার ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে থাকি।
নবী করিম (সা.)-এর কোনো গোনাহ ছিল না। তিনি আল্লাহর অধিক নৈকট্যের ফলে অধিক ভালোবাসায় এভাবে বিশেষ ক্ষমাপ্রার্থী হতেন। নিজ মর্যাদাগত উচ্চতা ও নিষ্পাপতা সত্তে¡ও উম্মতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য এভাবে বলেছেন। গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়াকে ইসলামী পরিভাষায় বলা হয়, ইসতিগফার। কোরআন হাদিসে বার বার ইসতিগফারের কথা এসেছে। ক্ষমা প্রার্থনা বা ইসতিগফারের ১০টি উপকারের কথা কোরআন ও হাদিসে পাওয়া যায়।
এক. ইসতিগফার গুনাহ মাফের মাধ্যম : আল্লাহ তাআলা বলেন : যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করে ফেলে, বা নিজের প্রতি যুলুম করবে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল। (সূরা নিসা : ১১০)।
দুই. ইসতিগফারে আযাব থেকে পরিত্রাণ : পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলার ওয়াদা এসেছে : ইসতিগফার করা অবস্থায় আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শাস্তি দিবেন না। (সূরা আনফাল : ৩৩)।
তিন. দুশ্চিন্তা দূর হয়, রিযিক বৃদ্ধি পায়, বিপদাপদ কেটে যায় : আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি নিয়মতি ইসতিগফার পড়বে, আল্লাহ তাআলা তাকে প্রত্যেক বিপদ থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করে দিবেন, সকল দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করবেন এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিযিক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। (সুনানে আবু দাউদ : ১৫১৮, সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৮১৯)।
চার. অনাবৃষ্টি কেটে যায়, যমীন সুজলা সুফলা হয়ে উঠে, শক্তি বৃদ্ধি পায় : হযরত হুদ (আ.) তাঁর জাতিকে বলেছিলেন : হে আমার কওম! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ইসতিগফার কর, তারপর তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, তিনি তোমাদের ওপর মুষল ধারায় বৃষ্টি পাঠাবেন, এবং তোমাদের শক্তির সাথে আরো শক্তি বৃদ্ধি করবেন। তোমরা অপরাধী হয়ে বিমুখ হয়ো না। (সূরা হুদ : ৫২)।
পাঁচ. ইসতিগফারে আল্লাহর বিশেষ রহমত অবতীর্ণ হয় : সূরা নামলে আল্লাহ ইরশাদ করেন : তোমরা কি আল্লাহর কাছে ইসতিগফার করবে না, যাতে তোমরা বিশেষ রহমতপ্রাপ্ত হতে পার! (সূরা নামল : ৪৬)।
ছয়. নিঃসন্তানের সন্তান নসীব হয়, ধন সম্পদ বৃদ্ধি পায় : নূহ (আ.) তাঁর কওমকে বলেছিলেন : আর বলেছি, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল। (ইসতিগফার করলে) তিনি তোমাদের ওপর মুষল ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। আর তোমাদেরকে ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন, এবং তোমাদের জন্য দিবেন নদী-নালা। (সূরা নূহ : ১০-১২)।
সাত. উত্তম জীবন নসীব হয়, মর্যাদা অর্জিত হয় : কোরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে : আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, তারপর তার দিকে ফিরে আস, তিনি তোমাদেরকে এক নির্দিষ্ট কালের উত্তম জীবন উপভোগ করতে দিবেন। প্রত্যেক গুণজীনকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দান করবেন। (সূরা হুদ : ৩)।
আট. ইসতিগফারকারীর জন্য সুসংবাদ : আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন : যে আমলনামায় অধিক পরিমাণে ইসতিগফারে যোগ করতে পেরেছে, তার জন্য সুসংবাদ, আনন্দ। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৮১৮)।
নয়. যার কোনো গুনাহ নেই তিনিও তাওবাহ-ইসতিগফার করেছেন : নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন : হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবাহ কর, দৈনিক আমি আল্লাহর কাছে একশবার তাওবাহ করি। (সহীহ মুসলিম : ৬৬১৩)।
দশ. ইসতিগফার মুমিন মুত্তাকির অন্যতম গুণ : আল্লাহ তাআলা মুত্তাকীদের গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন : এবং যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের ওপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর নিজেদের গুনাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে গুনাহ ক্ষমা করবে। এবং তারা যা করে ফেলে জেনেবুঝে তা পুনরায় করতে থাকে না। (সূরা আলে ইমরান : ১৩৫)।
যুগে যুগে বহু সমস্যা থেকে মুক্তির জন্যে বুজর্গানে দীন মানুষকে বেশি বেশি তওবা ইসতিগফার করতে বলতেন। কোরআন হাদিসের আলোকেই তা বলতেন। আমাদেরও উচিত, সবসময় বেশি করে ক্ষমাপ্রার্থনা ও তওবা ইসতিগফার করতে থাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন