শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বিপদ মুমিনের জন্য পরীক্ষা

এ. কে. এম ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

আপদ-বিপদ, বালা-মুসিবত, দুঃখ-কষ্ট, যাতনা-যন্ত্রণা, মহামারি ইত্যাদি পৃথিবীর জীবনে দেখা দেয়া বিচিত্র নয়। অনেক সময় নিজের অজান্তেই মানুষ এ সকল প্রতিকুলতার শিকার হয়। আবার কখনো কখনো আল্লাহর পরীক্ষা স্বরূপ তা বান্দাহর ওপর আপতিত হয়। আল কোরআনে মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তোমাদের ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। (হে প্রিয় হাবীব, আপনি) শুভ সংবাদ দিন ধৈর্যশীলগণকে। যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই অনুগত এবং নিশ্চিতভাবে তার দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। (সূরা বাকারাহ : ১৫৫-১৫৬)।

বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিরা যখন কায়মনে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বেশি বেশি পাঠ করে ও আল্লাহপাকের সকাশে আত্মসমর্পণ করে, তখন আল্লাহপাকের পক্ষ হতে তাদের ওপর তার আশীষ ও দয়া বর্ষিত হতে থাকে। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে আশীষ ও দয়া বর্ষিত হয় এবং তারাই সৎপথে পরিচালিত।’ (সূরা বাকারাহ : ১৫৭)।

বস্তুত: বিপদাপদে নিপতিত মুমিন বান্দাহগণ যখন কায়মনে আল্লাহপাকের দরবারে মিনতি জানায়, তাদের কথা আল কোরআনে এভাবে উক্ত হয়েছে : ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে এবং বলে ‘হে আমাদের পরওয়ারদিগার, তুমি তা নিরর্থক সৃষ্টি করনি, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদের অগ্নির শাস্তি হতে রক্ষা কর।

হে আমাদের পরওয়ারদিগার, কাউকে তুমি অগ্নিতে নিক্ষেপ করলে, তাকে তো তুমি নিশ্চয়ই হেয় করলে, আর জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই। হে আমাদের পরওয়ারদিগার, আমরা এক আহ্বায়ককে ঈমানের দিকে আহ্বান করতে শুনেছি, তোমরা তোমাদের মধ্যে কর্মে নিষ্ঠ নর অথবা নারীর কর্ম বিফল করো না, তোমরা একে অপরের অংশ।

সুতরাং যারা হিজরত করেছে, নিজগৃহ হতে উৎখাত হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে, আমি তাদের মন্দ কাজগুলো অবশ্যই দূরীভূত করব এবং অবশ্যই তাদের জান্নাতে দাখিল করব, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, তা আল্লাহার নিকট হতে পুরস্কার, উত্তম পুরস্কার তো আল্লাহরই নিকট আছে।’ (সূরা আল ইমরান : ১৯৫)।

এ প্রসঙ্গে হযরত মূসা (আ.)-এর বিশেষ প্রার্থনা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, মূসা স্বীয় স¤প্রদায় হতে ৭০ জন লোককে আমার নির্ধারিত স্থানে সমবেত হওয়ার জন্য মনোনীত করল। তারা যখন ভ‚মিকম্পে আক্রান্ত হলো, তখন মূসা (আ.) আরজ করল: ‘হে আমার পরওয়ারদিগার, তুমি ইচ্ছা করলে এর পূর্বেও তাদের এবং আমাকেও ধ্বংস করতে পারতে।

আমাদের মধ্যে যারা নির্বোধ তারা যা করেছে সে জন্য কি তুমি আমাদের ধ্বংস করবে। তা শুধু তোমার পরীক্ষা, যদ্বারা তুমি যাকে ইচ্ছা বিপথগামী কর এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত কর। তুমিই আমাদের অভিভাবক, সুতরাং তুমি আমাদের ক্ষমা করো ও আমাদের প্রতি দয়া করো, আর তুমিই তো ক্ষমাশীলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আমাদের জন্য নির্ধারিত কর ইহকাল ও পরকালের বল্যাণ, আমরা তোমার প্রতি প্রত্যাবর্তন করেছি।

আল্লাহপাক তাদের প্রার্থনার জবাবে বললেন, আমার শাস্তি যাকে ইচ্ছা দিয়ে থাকি, আর আমার দয়া তা তো প্রত্যেক বস্তুতে পরিব্যাপ্ত। সুতরাং আমি তা তাদের জন্য নির্ধারিত করব যারা ‘তাকওয়া’ অবলম্বন করে, যাকাত দেয় ও আমার নিদর্শনে বিশ্বাস করে। (সূরা আ’রাফ : ১৫৫-১৫৬)।

উপরোক্ত আয়াতসমূহের মর্মের প্রতি লক্ষ করলে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, আপদ-বিপদ ও বালা-মুসিবতে নিপতিত হলে মুমিন বান্দাহদের উচিত কায়মনে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা, আত্মসমর্পণ করা ও কৃত অপরাধের মার্জনা ভিক্ষা করা। এতে করে মহান আল্লাহপাক প্রার্থনাকারীদের প্রতি সদয় হন, মার্জনা করেন ও তাদের বিপদমুক্ত করেন। আল্লাহপাক আমাদের প্রার্থনাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন, এটাই আজকের একান্ত প্রত্যাশা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Gias Uddin Shihab ১৪ এপ্রিল, ২০২১, ১:৫০ এএম says : 0
মহামারি ও দুর্যোগে ভীতসন্ত্রস্ত না হয়ে, মনোবল দৃঢ় রেখে, শান্তভাবে পরিস্থিতি উত্তরণ মুমিনের কাজ।
Total Reply(0)
Mohammad Hossain ১৪ এপ্রিল, ২০২১, ১:৫০ এএম says : 0
বিপদগ্রস্তদের সাহায্য–সহযোগিতা করা, সেবা করা, দান–খয়রাত করা বিপদ-আপদ ও বালামসিবত মুক্তির অন্যতম উপায়।
Total Reply(0)
Nahid Hossain ১৪ এপ্রিল, ২০২১, ১:৫১ এএম says : 0
জীবনযুদ্ধের পরীক্ষায় সফলতার পথ হলো ধৈর্য ও মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকো, সুসম্পর্ক বজায় রাখো, আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ২০০)।
Total Reply(0)
Babul Hossain ১৪ এপ্রিল, ২০২১, ১:৫১ এএম says : 0
ধর্মচর্চা, আত্মমূল্যায়ন, জীবনবোধ এবং বিশ্বাস, আশা ও ভালোবাসা সব প্রতিকূলতায় সফলতা এনে দেবে ইনশা আল্লাহ!
Total Reply(0)
Ikramul Sheikh ১৪ এপ্রিল, ২০২১, ১:৫৩ এএম says : 0
আসুন, ধৈর্যধারণ করে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করি। যাবতীয় বিপদ আপদে চরম ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। নিজেদের জীবনে ধৈর্যধারণ করে প্রকৃত বীরের পরিচয় দেই। আল্লাহ তাআলা সবাইকে ধৈর্যধারণকারী হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
Total Reply(0)
।।শওকত আকবর।। ১৪ এপ্রিল, ২০২১, ৯:০০ এএম says : 0
দেশের প্রথম শ্রেনীর মানুষ যারা,যারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসভবনে থাকেন,যারা বেশী লোকালয় সময় কাটান না,দেখা যাচ্ছে তারাই আক্রান্ত বেশী।বিপদ আপদ বালা মছিবত দিয়ে আল্লাহ মোমিনদের পরিখ্খা করেন।ধৈর্যশীল কে আল্লাহ পছন্দ করেন।তোমরা ধৈর্যধারন করো।বিপদ কেটে যাবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন