মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল্লাহর পথে দানের প্রতিদান

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

আল্লাহর পথে দান ও ব্যয় করাকে আরবিতে ‘ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ’ বলে। আরবি ইনফাক শব্দটি ‘নাফক’ মূলধাতু হতে উৎপন্ন হয়। আরবি নাফক শব্দের অর্থ সুড়ঙ্গ। যার উভয় মুখ খোলা। অর্থাৎ যার একদিক দিয়ে প্রবেশ করে অন্য দিক দিয়ে বের হওয়া যায়। এই পৃথিবীতে মুসলমানদের জান, মাল সম্পদ পুঞ্জিভূত ও স্তূপিকৃত হয়ে থাকার জন্য নয়। বরং একদিক থেকে আয় হবে, অন্য দিক দিয়ে তা ব্যয় হতে থাকবে। আল কোরআনে গরিবদের দান-খয়রাতের প্রতি তাকিদ প্রদান করা হয়েছে। অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তি বলে থাকেন আল্লাহর রাস্তায় জান-মাল দ্বারা জিহাদ করা আবশ্যক। এই কথাটির সহজতর বিশ্লেষণ হবে এই যে, মুমিন মুসলমানগণ যখন সর্বাগ্রে মাল দৌলত ও সহায় সম্পদের মায়া-মহব্বত ত্যাগ করতে সমর্থ হবে, কেবল তখনই তারা আল্লাহর পথে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতে পারবে।

বস্তুত, মুমিন মুসলমানগণের উচিত কঠিন মসিবতের দিন আসার পূর্বেই আল্লাহর পথে ব্যয় করা। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পহ মুমিনগণ, আমি তোমাদের যে রিজক দিয়েছি তা হতে ব্যয় করো সে দিন আসার পূর্বে, যে দিন থাকবে না কোনো ক্রয়-বিক্রয়, না কোনো বন্ধুত্ব এবং না কোনো সুপারিশ। আর অবিশ্বাসী কাফিররাই জালিম ও সীমালঙ্ঘনকারী।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৫৪)। বাস্তব জীবনে সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা পাশাপাশি অবস্থান করে।

এ জন্য উভয় অবস্থায়ই দানের হাতকে স¤প্রসারিত করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে। অবশ্যই আল্লাহপাক সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৩৪)।

নিজের যা প্রিয়বস্তু তা দান করাই শ্রেয়। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কখনো পূণ্য অর্জন করতে পারবে না, যতক্ষণ না ব্যয় করবে তা হতে যা তোমরা ভালোবাস। আর যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ৯২)। আসলে দান একটি শস্যবীজ দানার মতো।

এ বিশেষত্বটি আল কোরআনে এভাবে বিবৃত হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা একটি বীজ দানার মতো, যা সাতটি শীষ উৎপন্ন করল, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশত দানা, অবশ্যই আল্লাহপাক যাকে চান তার জন্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহপাক প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৬১)।

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, উহুদ পরিমাণ স্বর্ণও যদি আমার নিকট থাকে তাহলে তিন রাত অতিবাহিত হওয়ার পরও তার সামান্য কিছু আমার অবশিষ্ট থাকুক, তা আমি পছন্দ করি না। তবে হ্যাঁ, দেনা পরিশোধের জন্য যেটুকু প্রয়োজন, সেটুকু রেখে বাকিটুকু আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেবে।’ (সহীহ বুখারী : ৮/৬৪৪৫)।

মোট কথা, দান না করা নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়ার শামিল। মহান রাব্বুল আলামীন সতর্ক করে আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর রাস্তায় দান করো এবং নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না। আর তোমরা সৎকর্ম করো। নিশ্চয়ই আল্লাহপাক সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৯৫)।

বর্তমান করোনা মহামারির কারণে অসহায় মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। এই রমজান মাসে যে কোনো ভালো কাজের সওয়াব আল্লাহ ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেন। এই সুবর্ণ সময়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সকলেরই উচিত। দানের হাত প্রসারিত হোক। লাঘব হোক মানুষের দুঃখ, কষ্ট।

আল্লাহর পথে দান করলে তিনি তার প্রতিদান প্রদান করেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আল্লাহপাক বলেন, হে আদম সন্তান, তুমি দান করতে থাক, আমিও তোমাকে দান করব।’ (সহীহ বুখারী : ৭/৫৩৫২)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Himel Badsha ১৯ এপ্রিল, ২০২১, ১:২৫ এএম says : 0
রোজার শেষে নাজাত পাব এই সায়েমের চাওয়া, খোদার কাছে হাত পেতেছি মিলবে পরম পাওয়া।
Total Reply(0)
মিরাজ আলী ১৯ এপ্রিল, ২০২১, ১:২৬ এএম says : 0
বছর তিরিশ আগের কথা। সকালে পণ্য মাথায় করে ফেরি করতে বের হয়েছেন এক ভাই। আধা ঘণ্টা পরই ফেরত চলে আসেন। এত তাড়াতাড়ি চলে আসতে দেখে ছোট ভাই জানতে চাইলেন, স্বাস্থ্য খারাপ নাকি আপনার? তিনি বলেন, তা নয়, আমার সারা দিনের কামাই হয়ে গেছে তাই চলে এসেছি। এখন বেরিয়ে যাব দাওয়াতের (তাবলিগ) কাজে। আসলে আমাদের দায়িত্ব সাধ্যানুযায়ী কাজ করে যাওয়া। বাকি কাজ আল্লাহ করবেন। ওয়াল্লাহু রাজ্জাকু জুল কুওয়্যাতিল মাতিন। একমাত্র আল্লাহই রিজিকদাতা এবং রিজিক পৌঁছানোর মালিক। আমরা রিজিকের পেরেশানিতে না থেকে রিজিকওয়ালার দেয়া দায়িত্বের পেরেশানিতে থাকলে তিনিই তো আমার ব্যবস্থা করে দেবেন।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ১৯ এপ্রিল, ২০২১, ১:২৭ এএম says : 0
দান-খয়রাত সদকা করে মানুষের মনে জায়গা করে নিই, যাতে মরে গেলে আমার উত্তরসূরিরা আমার সম্পদ ভোগ-বিলাসে না লাগিয়ে মানবতার সেবার কাজে লাগিয়ে নানা দাতব্য সংস্থা গড়ে তুলে জান্নাতে যাওয়ার অসিলা বানায়। আমিন।
Total Reply(0)
বদরুল সজিব ১৯ এপ্রিল, ২০২১, ১:২৭ এএম says : 0
গোপন-প্রকাশ্যে যেকোনোভাবে দান করা যায়। সকল দানেই সওয়াব রয়েছে। দানের মাধ্যমে মহান আল্লাহর তায়ালা পৃথিবীর মানুষের মাঝে রিজিকের ভারসাম্যতা রক্ষা করেন। বিনিময়ে প্রতিদানও দিয়ে থাকেন।
Total Reply(0)
হাদী উজ্জামান ১৯ এপ্রিল, ২০২১, ১:২৮ এএম says : 0
‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-সদকা কর, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে ফকির-মিসকিনকে দান করে দাও, তবে আরো বেশি উত্তম। আর তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ২৭১)
Total Reply(0)
নাজনীন জাহান ১৯ এপ্রিল, ২০২১, ১:২৮ এএম says : 0
মহান আল্লাহ আমাদের এ আলোচনার ওপর আমল করার তাওফীক দারু করুক। আল্লাহুম্মা আমিন।
Total Reply(0)
Md.+Raju+Ahamed ১৯ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৪৯ পিএম says : 0
টাকার পাহাড় না করে কিছু দান সদকা করা ভাল কারন দুনিয়াবী এই টাকা কোন কাজে আসবে, না যা কিছু দান করা হবে তাই কিয়ামতের দিন কাজে আসবে। এই রমজানে বেশি বেশি করে আমরা দান সদকা করি আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন