কনজিউমার রাইটস বা ভোক্তা অধিকার একটি মানবাধিকার, নাগরিক অধিকার। অথচ, পদে পদে ভোক্তাদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। সঠিকভাবে মূল্য পরিশোধ করার পরও তাকে সঠিক পণ্য, সঠিক সেবা দেয়া হয় না। ভুক্তভোগীরা জানে না, তারা কীভাবে তাদের এ অধিকার আদায় করে নেবে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের আইনে অজ্ঞতার কারণে আমাদের বাজারগুলোতে অশান্তি বিশৃঙ্খলা লেগেই আছে। ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে ব্যাপক আইন সচেতনতার পাশাপাশি আইনের সঠিক প্রয়োগে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের অধিকার রক্ষা হবে। ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষা করতে বাংলাদেশে ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, বাস্তবায়ন, উন্নয়ন, ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্যকালাপ প্রতিরোধ ও শাস্তির বিধান করা।
পেছনের ইতিহাস ১৫ মার্চ: ১৯৬২ সালের ১৫ মার্চ তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ.কেনেডি কংগ্রেসে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে বক্তৃতা দেন। নিরাপত্তার অধিকার, তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার, পছন্দের অধিকার এবং অভিযোগ প্রদানের অধিকার- ভোক্তাদের এ চারটি মৌলিক অধিকার সম্পর্কে তিনি আলোকপাত করেন, যা পরবর্তীতে ভোক্তা অধিকার আইন নামে পরিচিতি পায়। ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের মাধ্যমে জাতিসংঘ ভোক্তা অধিকার রক্ষার নীতিমালায় কেনেডি বর্ণিত চারটি মৌলিক অধিকারকে আরো বিস্তৃত করে অতিরিক্ত আরো আটটি মৌলিক অধিকার সংযুক্ত করা হয়। এরপর থেকেই কনজুমার্স ইন্টারন্যাশনাল এ সকল অধিকারকে সনদে অন্তর্ভুক্ত করে। কেনেডি’র ভাষণের দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৫ মার্চকে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ভোক্তা অধিকার রক্ষা ও বাস্তবায়নে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংস্থা বিভিন্ন আইন এবং দিক নির্দেশনা প্রণয়ন করে। তার মধ্যে United Nations Guidelines for Consumer Protection (as expanded) 1999, European Union Unfair Commercial Practices Directive, 2005, The Consumer Protection from Unfair Trading Regulations, 2008 (UK) উল্লেখযোগ্য ।
জাতিসংঘ স্বীকৃত ভোক্তা অধিকার ৮টি। যথা: ১। মৌলিক চাহিদা পূরণের অধিকার ২। তথ্য পাওয়ার অধিকার ৩। নিরাপদ পণ্য বা সেবা পাওয়ার অধিকার ৪। পছন্দের অধিকার ৫। জানার অধিকার ৬। অভিযোগ করা ও প্রতিকার পাওয়ার অধিকার ৭। ভোক্তা অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষা লাভের অধিকার ৮। সুস্থ পরিবেশের অধিকার ।
ভোক্তা কে? ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ধারা ২ উপ-ধারা ১৯ মতে, ভোক্তা অর্থ এমন কোন ব্যক্তি, (ক) যিনি পুনঃবিক্রয় ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ব্যতীত-মূল্য পরিশোধে বা মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে কোন পণ্য ক্রয় করেন বা আংশিক পরিশোধিত ও আংশিক প্রতিশ্রুত মূল্যের বিনিময়ে কোন পণ্য ক্রয় করেন বা প্রলম্বিত মেয়াদ বা কিস্তির ব্যবস্থায় মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে কোন পণ্য ক্রয় করেন, (খ) যিনি ক্রেতার সম্মতিতে দফা (ক)-এর অধীন ক্রীত পণ্য ব্যবহার করেন, (গ) যিনি পণ্য ক্রয় করিয়া উহা, আত্মকর্ম সংস্থানের মাধ্যমে স্বীয় জীবিকা অর্জনের উদ্দেশ্যে, বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করেন, (ঘ) যিনি মূল্য পরিশোধে বা মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে কোন সেবা ভাড়া বা অন্যভাবে গ্রহণ করেন বা আংশিক পরিশোধিত ও আংশিক প্রতিশ্রুত মূল্যের বিনিময়ে কোন সেবা ভাড়া বা অন্যভাবে গ্রহণ করেন বা প্রলম্বিত মেয়াদ বা কিস্তির ব্যবস্থায় মূল্য পরিশোধের বিনিময়ে কোন সেবা ভাড়া বা অন্যভাবে গ্রহণ করেন, (ঙ) যিনি সেবা গ্রহণকারীর সম্মতিতে দফা (ঘ) এর অধীন গৃহীত কোন সেবার সুবিধা ভোগ করেন ।
ক্রেতা সাবধান নীতি: ল্যাটিন শব্দ Caveat Emptor -এর বাংলা প্রতিশব্দ হল ক্রেতা সাবধান নীতি। এই নীতি বলতে এমন এক নিয়ম-নীতিকে বুঝায় যেখানে কোন কিছু ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতাকে সাবধানতা অবলম্বনের তাগিদ দেয়া হয়। এই নীতির মূল কথা হল, ক্রেতার কোন কিছু ক্রয় করার পূর্বে ভালোভাবে যাচাই-বাচাই করে তথা পণ্যের গুণগত মান যাচাই করে ক্রয় করা উচিত। যদি ক্রয় করার সময় যাচাই করা না হয় তাহলে পরবর্তীতে কোন অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবেনা।ক্রেতা সাবধান নীতি অনুযায়ী ধরে নেওয়া হয় যে, ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়পক্ষই সমান জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। কেউই কারো অপেক্ষাধীন নয়। সুতরাং বিক্রেতা কোন তথ্য সম্পর্কে নীরব থাকলে সে ক্ষেত্রে ক্রেতার কর্তব্য হল, বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়ার সর্ববিধ চেষ্টা করা।
একজন সচেতন ভোক্তার করনীয় কী? পণ্যের মোড়কে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওজন, পরিমান,উপাদান, ব্যবহারবিধি, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেটজাতকরণেরমেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ইত্যাদি দেখে পণ্য ক্রয় করা। মূল্য রশিদ গ্রহণান্তে মালামাল সংগ্রহ করা। দ্রব্য বা সেবা সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে জেনে দ্রব্য ক্রয় করা। বিজ্ঞাপন না বুঝে দ্রব্য সংগ্রহ থেকে বিরত থাকা। সরকারি-পেশাদারী ট্রেডমার্ক সম্বলিত দ্রব্য ক্রয় করা। দ্রব্য বা সেবা সম্পর্কে অন্ধ বিশ্বাস পরিহার করা। দ্রব্য বা সেবা সম্পর্কে অভিযোগ যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট লিপিবদ্ধ করা।
বিক্রেতা কে? ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ধারা ২ উপ-ধারা ১৬ মতে, ‘বিক্রেতা’ অর্থ কোন পণ্যের উৎপাদনকারী, প্রস্তুতকারী, সরবরাহকারী এবং পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাও এর অন্তর্ভুক্ত হবে।
অভিযোগকারী: নিম্নবর্ণিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ, যে বা যারা এই আইনের অধীন কোন অভিযোগ দায়ের করেন (ক) কোন ভোক্তা, (খ) একই স্বার্থসংশ্লিষ্ট এক বা একাধিক ভোক্তা, (গ) কোন আইনের অধীন নিবন্ধিত কোন ভোক্তা সংস্থা, (ঘ) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বা উহার পক্ষে অভিযোগ দায়েরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা, (ঙ) সরকার বা এতদুদ্দেশ্যে, সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন সরকারি কর্মকর্তা, (চ) সংশ্লিষ্ট পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ী।
অপরাধ ও দন্ড: ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের অধীন সকল অপরাধ জামিনযোগ্য , আমলযোগ্য ও আপোষযোগ্য। উক্ত আইনের ধারা ৩৭ থেকে ৫৫ পর্যন্ত অপরাধ ও শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে । কোন ব্যক্তি কোন আইন বা বিধি দ্বারা কোন পণ্য মোড়কাবদ্ধভাবে বিক্রয় করার এবং মোড়কের গায়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওজন, পরিমাণ, উপাদান, ব্যবহার-বিধি, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেটজাতকরণের তারিখ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করে থাকলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদন্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন [ধারা ৩৭]। কোন আইন বা বিধি দ্বারা আরোপিত বাধ্যবাধকতা অমান্য করে তার দোকান বা প্রতিষ্ঠানের সহজে দৃশ্যমান কোন স্থানে পণ্যের মূল্যের তালিকা প্রদর্শন না করে সেই অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদন্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন [ধারা ৩৮]। আইন বা বিধি দ্বারা আরোপিত বাধ্যবাধকতা অমান্য করে তার দোকান বা প্রতিষ্ঠানের সেবার মূল্যের তালিকা সংরক্ষণ না করলে এবং সংশ্লিষ্ট স্থানে বা সহজে দৃশ্যমান কোন স্থানে উক্ত তালিকা প্রদর্শন না করলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদন্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন [ধারা ৩৯]। আইন বা বিধির অধীন নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে কোন পণ্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদন্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন [ধারা ৪০]। কোন ব্যক্তি জ্ঞাতসারে ভেজাল মিশ্রিত পণ্য বা ঔষধ বিক্রয় করলে বা করতে প্রস্তাব করলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদন্ড, বা অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন [ধারা ৪১]। কোন পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদন্ড, বা অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন [ধারা ৪৪]। কোন ব্যক্তি প্রদত্ত মূল্যের বিনিময়ে প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদন্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন [ধারা ৪৫]। কোন পণ্য সরবরাহ বা বিক্রয়ের সময় ভোক্তাকে প্রতিশ্রুত ওজন অপেক্ষা কম ওজনে উক্ত পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহ করলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদন্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন [ধারা ৪৬]। কোন পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহের উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তির দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দৈর্ঘ্য পরিমাপের কার্যে ব্যবহৃত পরিমাপক ফিতা বা অন্য কিছুতে কারচুপি করা হলে হলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদন্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন [ধারা ৪৯]। মেয়াদ উত্তীর্ণ কোন পণ্য বা ঔষধ বিক্রয় করলে বা করতে প্রস্তাব করলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদন্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ড দন্ডিত হবেন [ধারা ৫১]।কোন সেবা প্রদানকারী অবহেলা, দায়িত্বহীনতা বা অসতর্কতা দ্বারা সেবা গ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য বা জীবনহানী ঘটালে তিনি অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদন্ড, বা অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ড দন্ডিত হবেন [ধারা ৫৩]। এছাড়াও খাদ্য পণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ, বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্রে কারচুপির, পরিমাপে কারচুপি, পণ্যের নকল প্রস্তুত বা উৎপাদন করার, সেবাগ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্নকারী কার্য করার ও অপরাধ পুনঃ সংঘটন উক্ত আইন মোতাবেক দন্ডনীয় অপরাধ ।
মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা: অত্র আইনের ৫৪ ধারা মতে, কোন ব্যক্তি, কোন ব্যবসায়ী বা সেবা প্রদানকারীকে হয়রানি বা জনসমক্ষে হেয় করা বা তার ব্যবসায়িক ক্ষতি সাধনের অভিপ্রায়ে মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করলে, উক্ত ব্যক্তি অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদন্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
কে অভিযোগ দায়ের করতে পারে: ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭৬ (১) অনুযায়ী, যে কোন ব্যক্তি, যিনি, সাধারণভাবে একজন ভোক্তা এই আইনের অধীন ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্য সম্পর্কে মহাপরিচালক বা এতদুদ্দেশ্যে মহাপরিচালকের নিকট ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অবহিত করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করিতে পারবেন।
যেখানে অভিযোগ দায়ের করা যাবে: জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বিভাগীয় উপ-পরিচালক, জাতীয় ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র এবং প্রত্যেক জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর অভিযোগ দায়ের করা যাবে।
যেভাবে অভিযোগ দায়ের করতে হবে: দায়েরকৃত অভিযোগ অবশ্যই লিখিত হতে হবে। ফ্যাক্স, ই-মেইল, ওয়েব সাইট, ইত্যাদি ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে বা অন্য কোন উপায়ে, অভিযোগের সাথে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রশিদ সংযুক্ত করতে হবে। অভিযোগকারী তাঁর পূর্ণাঙ্গ নাম, এনআইডি নং, পিতা ও মাতার নাম, ঠিকানা, ফোন, ফ্যাক্স ও ই-মেইল নম্বর (যদি থাকে) এবং পেশা উল্লেখ করবেন। অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ঠিকানা, অপরাধের বিবরণ, সাক্ষ্য প্রমাণ উল্লেখ থাকতে হবে ।
অভিযোগ দায়েরের সময়সীমা: ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৬০ অনুযায়ী, কোন ব্যক্তিকে কারণ উদ্ভব হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এই আইনের অধীন অভিযোগ দায়ের করতে হবে। অন্যথায় অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে না।
জরিমানার অর্থের ২৫% প্রদান: দায়েরকৃত আমলযোগ্য অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত ও জরিমানা আরোপ করা হলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭৬(৪) অনুযায়ী, আদায়কৃত জরিমানার ২৫ শতাংশ তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগকারীকে প্রদান করা হবে।
দেওয়ানী প্রতিকার: ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্যের জন্য কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যক্রমের পাশাপাশি উপযুক্ত ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত কোন ভোক্তা উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেওয়ানী প্রতিকার দাবি করে স্থানীয় অধিক্ষেত্রের যুগ্ম-জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবে, এতে আইনগত কোন বাধা নেই। কোন বিক্রেতা ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্যের দ্বারা কোন ভোক্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করলে এবং উক্ত ক্ষতির পরিমাণ আর্থিক মূল্যে নিরূপণযোগ্য হলে, উক্ত নিরূপিত অর্থের অনূর্ধ্ব পাঁচগুণ পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবী করে এখতিয়ার সম্পন্ন যুগ্ম-জেলা জজ আদালতে দেওয়ানী মামলা দায়ের করা যাবে।
প্রশাসনিক ব্যবস্থা: এই আইনের অধীনে ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধকল্পে বা ভোক্তা অধিকার বিরোধী অপরাধ বিষয়ে কোন কার্যক্রম গ্রহণের ক্ষেত্রে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা এই আইন এ বর্ণিত কোন অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকলেও, সমীচীন মনে করলে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে, দন্ড আরোপ না করে এবং ফৌজদারী মামলা দায়েরের লক্ষ্যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, কেবল জরিমানা আরোপ, ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল, ব্যবসায়িক কার্যক্রম সাময়িক বা স্থায়ীভাবে স্থগিতকরণ সম্পর্কিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
আপিল: এই আইনের অধীনে দেওয়ানী আদালত কর্তৃক প্রদত্ত রায় ও ডিক্রীর বিরুদ্ধে ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে কেবল হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করা যাবে। ফৌজদারী অভিযোগের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রদত্ত রায় বা আদেশ দ্বারা কোন পক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে তিনি উক্ত রায় বা আদেশ প্রদত্ত হবার ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে স্থানীয় অধিক্ষেত্রের সেশন জজের আদালতে আপীল দায়ের করতে পারবেন।
লেখক: আইনজীবী, কলামিস্ট, মানবাধীকার ও সুশাসন কর্মী ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন