শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

রমজান ও জাকাত-২

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

ধনী-দরিদ্রের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও সমন্বয় সাধন করার লক্ষ্যেই অতি প্রয়োজনীয় ফরজ হিসেবে জাকাত প্রথার প্রচলন। জাকাত প্রথা নতুন কোনো ব্যবস্থা নয়, যুগে যুগে বিভিন্ন আঙ্গিকে এর প্রচলন ছিল। হজরত মূসা (আ.) এর সময়ে কৃপণ অত্যাচারী কারুনের ঘটনা বিখ্যাত, যার বর্ণনা কোরআনেও রয়েছে।


এ কনজুস মহাকৃপণ জাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি জানিয়ে হজরত মূসা (আ.)-এর সাথে চরম গোস্তাখী করে যে করুণ পরিণতির শিকার হয়েছিল, তা ইতিহাসখ্যাত। নবীর সাথে গোস্তাখী ও জাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন এ উভয় পাপের কঠোর শাস্তি দুনিয়ায় আর কেউ ভোগ করেছে কি-না সন্দেহ। কথিত আছে, কারুন তার সমস্ত সহায় সম্পদ সমেত কেয়ামত পর্যন্ত ভ‚মিতলে ডুবতে থাকবে। কুখ্যাত কারুণের প্রেতাত্মারা যুগে যুগে ছিল, আছে এবং থাকবে।

জাকাতের বিস্তারিত বিবরণ কোরআনের বহু আয়াতে এবং হাদীসে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যক্ত হয়েছে এবং জাকাতের ন্যায় ‘মাসারেফে জাকাত’ বা জাকাত প্রদানের খাতসমূহ (প্রাপকদের বিবরণ) ‘সাদকায়ে ফিতির’ (ফিতরা) এবং ‘উশর’ (জমির ফসলের ১০ ভাগের ১) ইত্যাদি সবকিছুর বিশদ বিবরণ রয়েছে। সুতরাং জাকাত প্রদানের গুরুত্ব, তাৎপর্য এবং প্রয়োজনের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজন না থাকলেও উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি হাদীসের কথা বলে রাখা দরকার, যাতে দরিদ্র অভাবী ও ধনী বিত্তশালীদের মধ্যে সৃষ্ট বৈষম্যের অবসানের কথা বলা হয়েছে এবং জাকাত না দিলে কঠোর শাস্তি সম্পর্কে কঠোর সতর্ক বাণী উল্লেখ করা হয়েছে।

(১) রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা লোকদের ওপর ‘সাদকা’ ফরজ করেছেন, যা তাদের মালদার (ধনী) গণের কাছ থেকে গ্রহণ করা হবে এবং উহা তাদের দরিদ্র-অভাবীদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হবে।’ (বোখারী ও মুসলিম)। ‘সাদকা’ শব্দ জাকাত অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যা আইনত প্রদান করা জরুরি। বর্ণিত হাদীসে তারই অর্থ করা হয়েছে। মূলত: এ জাকাত সমাজের গরিব-দরিদ্র-অভাবীদের হক (অধিকার), যা ধনীদের কাছ থেকে তাদেরকে প্রদানের কথা বলা হয়েছে।

(২) উম্মুল মোমেনীন হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি রসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন যে, যে মাল হতে জাকাত বের করা হয় না এবং ঐ মালের সাথে মিশে থাকে, সে মাল ধ্বংস করে ছাড়ে। (মেশকাত)। অর্থাৎ যে মালে জাকাত আদায় করা প্রযোজ্য ছিল, তা ভোগ করার অধিকার (মালদারের) ছিল না এবং যা দরিদ্র অভাবীদের অধিকার ছিল, সে এটি নিজে ভোগ করে তার দ্বীন ও ঈমান ধ্বংস করেছে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) ধ্বংস করার এ অর্থ করেছেন এবং বাস্তব জীবনেও দেখা যায় যে, জাকাতের মাল অন্যায়ভাবে ভোগ দখলকারীর সমস্ত পুঁজি ধ্বংস হয়ে গেছে।

(৩) রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যাকে আল্লাহ তাআলা মাল দিয়েছেন, অতঃপর সে উহার জাকাত দেয়নি, তা হলে তার এ মাল কেয়ামতের দিন মারাত্মক বিষধর সাপের আকার ধারণ করবে, যার মস্তকে দুইটি কালো বিন্দু (চিহ্ন), যা অত্যন্ত বিষাক্ত হবার লক্ষণ এবং তার গলার বেড়ি হবে। ফের তার চোয়ালদ্বয়কে সাপ লেপটে থাকবে এবং বলবে আমি তোমার ভান্ডার।

অতঃপর তিনি কোরআন-এর আয়াত তেলাওয়াত করলেন : অর্থাৎ যারা নিজেদের মাল খরচ করতে কৃপণতা প্রদর্শণ করে তাদের একথা মনে করা উচিত নয়, তাদের এ কৃপণতা তাদের পক্ষে উত্তম হবে বরং সে মাল অত্যন্ত মন্দ হবে। কেয়ামতের দিন তাদের এ মাল তাদের গলার বেড়ি হয়ে যাবে। অর্থাৎ তাদের ধ্বংসের কারণ হবে। (বোখারী)

(৪) যার ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে সে যদি জাকাত প্রদানে বিরত থাকে তার করুণ পরিণতি সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীস রয়েছে, কিন্তু সবচেয়ে দীর্ঘ হাদীসের উল্লেখ রয়েছে মুসলিম শরীফে। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদীসটির খোলাসা নিম্নরূপ :

রসূলুল্লহ (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি সোনা ও রূপার মালিক হয় অর্থাৎ শরয়ী নেসাবের চেয়ে অধিকের মালিক হয় এবং সে জাকাত আদায় করেনি, কেয়ামতের দিন তার জন্য ঐ সোনা-রূপার বহু ফলক বানানো হবে যেগুলো আগুনে তপ্ত করে এগুলোর দ্বারা তার পাশর্^গুলো, কপালে ও পৃষ্ঠ দেশে ছেঁকা দেয়া হবে এবং যখন সেগুলো শীতল হবে, আবার সেগুলোকে দোজখের আগুনে তপ্ত করা হবে এবং পুনরায় (ঐ স্থানসমূহ) দাগানো শুরু হবে এবং এ অবস্থা সর্বদাই চলতে থাকবে। আর এটি হবে সেদিন যেদিন এতই দীর্ঘ হবে যে, যা দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার দিবসের সমান। এমনকি বান্দাগণের হিসাব কিতাব শেষ হয়ে যাবে এবং জান্নাতিদেরকে জান্নাতে এবং জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে প্রেরণ করা হবে।

রসূলুল্লাহ (সা.) এর এ বর্ণনা শুনার পর তার কাছে জানতে চাওয়া হয় উটের জাকাত, গরুর জাকাত, বকরির জাকাত, ঘোড়ার জাকাত এবং সর্বশেষ গাধার জাকাত সম্পর্কে। হুজুর (সা.) আলাদাভাবে উল্লেখিত ৫টি পশুর জাকাতের বর্ণনা করেন। যে জাকাত দেবে না, কেয়ামতের দিন ঐ পশু তার জন্য ভয়ংকর আজাব হবে বলে জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
MD FOKHRUL ISLAM ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ১:৪২ এএম says : 0
রমজানে জাকাত দিলে আদায়কারী ও গ্রহীতা উভয়ই বেশি ‍উপকৃত হয়।
Total Reply(0)
Kamrul Hassan ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ১:৪৩ এএম says : 0
জাকাত দেয়ার সুনির্দিষ্ট সময় না থাকলেও রমজানই জাকাত দেয়ার সর্বোত্তম সময়। আর ফেতরা রমজানের মধ্যে দেয়াই উত্তম। কারণ এ সময় যে কোনো দান-সাদকাই অন্য সময়ের তুলনা ৭০ গুণ বেশি। এ জন্য ধনী ও সম্পদশালী ব্যক্তিরা রমজানে দান-সাদকা, জাকাত-ফেতরা আদায়ে খুব বেশি উদ্যোগী হয়।
Total Reply(0)
Ibrahim Ctg Khalil ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ১:৪৩ এএম says : 0
আবার ইবাদতের মাস রমজানে কাজের পরিধি কমে যায়। দুর্বলতা ও কষ্টের কারণে অভাবি, গরিব-দুঃখী মানুষ ঠিকভাবে রোজগার করতে পারে না। তাই এ মাসে ধনীদের জাকাত-ফেতরা তথা আর্থিক দান-অনুদান গরিবদের জন্য অনেক বেশি উপকারি ও জীবন যাত্রার জন্য বেশ সহায়ক হয়।
Total Reply(0)
Kamrul Sharif ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ১:৪৩ এএম says : 0
সম্পদশালীরা রমজানে দান-সদকা ও জাকাত- ফেতরা প্রদানে উৎসাহিত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো- এক দিকে দানের ৭০ গুণ বেশি নেকি হয়। অন্যদিকে এ মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে যে কোনো নফল ইবাদতের বিনিময় একটি ফরজ ইবাদতের সমান সাওয়াব পাওয়া যায়।
Total Reply(0)
Jamal Hossain ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ১:৪৪ এএম says : 1
জাকাত ধনীর সম্পদকে পবিত্র, পরিশুদ্ধ ও বাড়িয়ে দেয়। ইসলামি শরিয়তে মানুষের প্রয়োজন পূরণের পর যদি নেসাব পরিমান সম্পদ পূর্ণ একবছর কারো কাছে গচ্ছিত থাকে তবে তাকে ওই গচ্ছিত সম্পদের জাকাত দিতে হয়
Total Reply(0)
Mamunur Rashid ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ১:৪৪ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মানুষের সব কাজই দেখেন। রমজানের সব ইবাদতও আল্লাহ দেখেন এবং এর নেয়ামতও দান করেন। সাওয়াব দেন ৭০ গুণ বেশি।
Total Reply(0)
Lokman Bin Harun ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ১:৪৫ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সম্পদশালী ও ধনীদের রমজানে জাকাত আদায় করে অফুরন্ত সাওয়াব ও ফজিলত লাভ করার তাওফিক দান করুন। গরিব-অসহায়দের মুখে হাসি ফোটানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন