মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে আপনজনদের করণীয়

মাওলানা শিব্বির আহমাদ | প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

মৃত্যু হচ্ছে মোহনা-এখানে দুনিয়ার জীবনের সমাপ্তি আবার আখেরাতের জীবনের সূচনা। দুনিয়াকে বলা হয় ‘মাযরাআতুল আখিরাহ’ বা আখেরাতের শস্যক্ষেত্র। দুনিয়ার জীবন যার যেমন কাটবে, পরকালে এর ফলই সে ভোগ করবে। আর যে কোনোকিছু ভালো হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্যে এর সমাপ্তি সুন্দর হওয়া জরুরি। হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমল তো শেষ অবস্থা অনুসারেই বিবেচিত হবে। (সহীহ বুখারী : ৬৬০৭)।

আমাদের এক পরিচিত প্রবাদ-শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। সবমিলিয়ে বলা যায়, আখেরাতে সুন্দর জীবনের জন্যে সুন্দর মৃত্যুর বিকল্প নেই। মত্যুর সময় যদি ঈমানটাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যায়, দুনিয়ার সব দুঃখ-কষ্ট তখন তুচ্ছ। আর যদি এর বিপরীত কিছু হয়, শয়তানের ধোঁকায় কেউ নিজের ঈমান খুইয়ে বসে, জগতে তার চেয়ে হতভাগা আর কে হতে পারে! এজন্যে কোনো মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে যারা উপস্থিত থাকবেন, তাদের প্রথম কর্তব্য-কালেমায়ে তায়্যিবার তালকীন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমরা তোমাদের মৃত্যুগামী ব্যক্তিদের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’র তালকীন করো। (সহীহ মুসলিম : ৯১৬, ৯১৭)।

তালকীনের অর্থ হচ্ছে-মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে একটু আওয়াজ করে কালেমা পড়তে থাকা। তবে মনে রাখতে হবে, এ অবস্থায় তাকে কিছুতেই মুখে উচ্চারণ করে কালেমা পড়ার আদেশ করা যাবে না। জোরাজুরি করা যাবে না; এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই নিয়ম হলো, তার পাশে বসে মৃদু আওয়াজে কেবল কালিমা পড়তে থাকা। কালিমা বলুন বা এজাতীয় কিছু না বলা। তার পাশে যখন কালেমা পড়া হবে, তিনি যখন কালেমার আওয়াজ শুনতে পাবেন, আশা করা যায়, তিনি নিজেই কালেমা পড়ে নিতে পারেন। এ কালেমা যার জীবনের শেষ কথা হবে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যার শেষ কথা হবে-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সুনানে আবু দাউদ : ৩১১৮)।

মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে থেকে সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করার কথাও হাদীসে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : মৃত্যুপথযাত্রী যারা তাদের পাশে থেকে তোমরা সূরা ইয়াসীন পাঠ করো। (সুনানে আবু দাউদ : ৩১২৩)।
মৃত্যু যেমন এক অনুপেক্ষ বাস্তবতা, মৃত্যুর জন্যে নির্ধারিত সময়ও কারো পক্ষে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যার জন্যে যতটুকু হায়াত নির্ধারিত, যার মৃত্যুর জন্যে যে সময় লিখে রাখা হয়েছে, এ সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই কারো। পবিত্র কোরআনে একাধিক স্থানে মহামহিম আল্লাহ এ ঘোষণাও দিয়েছেন : তাদের মৃতু্িযর নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হয় তখন তারা তা এক মুহূর্তও বিলম্বিত করতে পারবে না, এমনকি মুহূর্তকাল ত্বরান্বিতও করতে পারবে না। (সূরা নাহল : ৬১)।

নির্ধারিত সময়েই তাই সকলের মৃত্যু হবে। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। আমাদের করণীয় বরং পরবর্তী সময়ে-মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফন জানাযা ইত্যাদি ক্ষেত্রে। মৃত ব্যক্তিকে সুন্দরভাবে গোসল করিয়ে কাফন পরানো এবং তার জানাযার নামায আদায় করে তাকে দাফন করা-এগুলো আপনজনদের করতে হয়। মাটি থেকেই মানুষের সৃষ্টি, দুনিয়ার জীবন শেষ করে মাটিতেই হয় তার শেষ গন্তব্য। কোরআনে কারীমের ভাষায় : আমি তোমাদেরকে তা (অর্থাৎ মাটি) থেকেই সৃষ্টি করেছি, তাতেই আবার তোমাদের আমি ফিরিয়ে নেব এবং তা থেকেই পুনরায় তোমাদের জীবিত করব। (সূরা ত্বহা : ৫৫)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Abdul Mozid ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ১:৫৬ এএম says : 0
মানুষ মারা যাবেই। মৃত্যু অনিবার্য। অনস্বীকার্য এ বাস্তবতাটির ভেতর দিয়ে প্রত্যেকেই যাবে একাকী, কেউ কারও সঙ্গী নয়।
Total Reply(0)
মিরাজ আলী ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ১:৫৭ এএম says : 0
দুনিয়ার এ ক্ষুদ্র জীবনে কতজনের সঙ্গে কতভাবে তার বন্ধন গড়ে ওঠে! মৃত্যু এসে সকল বন্ধন ছিন্ন করে দিয়ে তাকে একাকী তুলে নিয়ে যায়। দুনিয়ায় থেকে যায় পরিবারপরিজন-বাবা-মা ছেলে-মেয়ে স্বামী-স্ত্রী আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব প্রতিবেশীসহ আরও কত আপনজন। এভাবে একে একে সকলেই চলে যায়। কেউ আগে, কেউ পরে। কিন্তু যায় সকলেই।
Total Reply(0)
রুবি আক্তার ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ১:৫৮ এএম says : 0
অত্যন্ত গুরুদত্বপুর্ণ আলোচনা। অনেক কিছু জানলাম।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ১:৫৯ এএম says : 0
মৃত্যুর আগে কালেমা পড়াতে পারলেই আল্লাহ চাহে তো তার সবচেয়ে বড় উপকার করা হবে।
Total Reply(0)
রেজাউল করিম ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ২:০০ এএম says : 0
মহান আল্লাহ আমাদের েএই কাজগুলো করার তৌফিক দিন। আমিন
Total Reply(0)
হাদী উজ্জামান ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ২:০০ এএম says : 0
মৃত্যু খুবই কঠিন জিনিস। হে আল্লাহ তুমি দয়া করো।
Total Reply(0)
মো:তারেক ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ৭:০১ এএম says : 0
হে আল্লাহ আমাদের কে মুখে কালেমা উচ্চারণ করে মৃত্যু দান করুন ।আমিন
Total Reply(0)
Md MASUD KHONDOKAR ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ১০:১২ এএম says : 0
সুবহানাল্লাহ্।
Total Reply(0)
Md.+Raju+Ahamed ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ২:১২ পিএম says : 0
বেশি বেশি ইসতিগফার পড়া উচিত । আল্লাহ আমাদের বেশি বেশি ইসতিগফার পড়ার তৌফিক দান করুন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন