লকডাউনে কমেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বায়ু দূষণ। চলতি লকডাউনে বদলে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। সড়কে নেই যানবাহন, নেই কালোধোঁয়া। কমে গেছে ধুলোবালিও। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অন্যান্য সময়ের মতো মানুষ ঘর থেকে বের না হওয়ায় মহাসড়ক বলতে গেলে ফাঁকা। জরুরি সেবা ছাড়া কোনও ইঞ্জিন চলছে না। ফলে হচ্ছে না বায়ু আর শব্দের দূষণও। করোনার ভয়ঙ্কর থাবায় হতাশার মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এ যেন মরা গাছে ফুল ফুটায় নতুন আশার খবর।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চার সপ্তাহের লকডাউনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বায়ুর গুণগত মান ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। গাড়ি বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকগুণ কমে গেছে বায়ুদূষণ। গতকাল রাতে বৃষ্টির কারণে ধুলোবালি আরও কমেছে। ফলে বাতাসের বিশুদ্ধতা বেড়েছে।
বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) বলছে, লকডাউন শুরুর পর ৫ এপ্রিল থেকে সড়কে গণপরিবহন না চলায় দিনের কোনও কোনও সময় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৭০ ভাগ বায়ু দূষণ কমেছে, সারাদিনের হিসেবে ৫৫ ভাগ কমেছে। ক্যাপস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন সড়কে জীবিকার তাগিদে বহুলোকের আনাগোনা লেগেই থাকে। এসব মানুষকে বহন করে সড়কে ছুটে বেড়ায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। এখন এগুলো চলছে না বললেই চলে। সাধারণ মানুষ লকডাউনের এই সময়টা সাধারণত ঘরেই কাটাচ্ছেন। আর এতে করে বায়ুর দূষণও কমেছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, আদর্শ পরিবেশ এমনটাই হওয়া উচিত। গত বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর সাধারণ ছুটি চলাকালে মার্চ ও এপ্রিলে দূষিত বায়ুর পরিমাণ কমতে থাকে। তবে সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর ধীরে ধীরে দূষণ বাড়তে থাকে।
একিউআই সূচকে ৫০ এর নিচে স্কোর থাকার অর্থ হলো বাতাসের মান ভালো। স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে বাতাসের মান গ্রহণযোগ্য বলে ধরে নেয়া হয়। স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ থাকলে সেই বাতাসকে স্পর্শকাতরদের জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচনা করা হয়। আর স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ থাকলে তা বিবেচনা করা হয় সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে। বায়ুর মান ২০১ থেকে ৩০০ পিএম হলে সেটাকে বিবেচনা করা হয় খুবই অস্বাস্থ্যকর হিসেবে। গতকাল দিনের বেলায় এই মানমাত্রা ছিল ১০০ থেকে ১৫০ এর মধ্যে। তবে পরিবেশবাদীদের মতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাতাসের মান অস্বাস্থ্যকর বিবেচনায় বিবেচিত হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতুর টোলপ্লাজায় কর্মরত লোকমান হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার গাড়ি চলাচল করত। বর্তমানে লকডাউন থাকায় এই ব্যস্ততম মহাসড়কে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ হাজার পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করছে। যা অর্ধেকের চেয়েও কম।
পরিবেশবাদী মইনুল হক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মহাসড়কে বাতাসকে বিষিয়ে তুলছে যানবাহনের ধোঁয়া। বায়ুদূষণের জন্য অর্ধেক (৫০%) দায়ই মূলত তরল জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে তৈরি হওয়া এই ধোঁয়ার। বর্তমানে কম গাড়ি চলাচল করায় দূষণের মাত্রা কমেছে। কিন্তু তা তো সাময়িক। সব খুলে দিলে আবার তো আগের অবস্থা হয়ে যাবে। তাই এখনই উদ্যোগ নেয়া দরকার। দূষণ কমানোর এই ঘটনায় প্রমাণিত হলো, এতদিন আমরা যেসব উৎসকে কারণ হিসেবে বলেছি সেগুলা সঠিক। সরকার যদি আমাদের চিহ্নিত উৎসগুলো থেকে দূষণ কমানোর উদ্যোগ নেয় তাহলে দূষণ কমে যেতো। দূষণ কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, যানবাহন, সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে মূলত বায়ু দূষণের কারণ। লকডাউনের কারণে এখন বায়ু দূষণ কমে আসছে।
এ প্রসঙ্গে ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ইচ্ছা থাকলে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে বায়ুদূষণ ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমানো সম্ভব। তবে সেটার জন্য সময় লাগবে। বায়ুদূষণের উৎসগুলোকে চিহ্নিত করে যদি কমপক্ষে পাঁচ বছরের একটি পরিকল্পনা নেয়া যায়, তাহলে প্রতি বছর কমপক্ষে ১০ শতাংশ করে বায়ুদূষণ কমবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন