শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ইতিকাফে বসলে আজ সূর্যাস্তের পূর্বেই বসতে হবে

এ. কে. এম ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৫ এএম, ৩ মে, ২০২১

ইতিকাফ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। ইতিকাফ মহান ইবাদত। বান্দাহ এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বদা ইতিকাফ করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম যুহরী (রহ.)-এর কথা খুবই প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘মুসলমানদের দেখে আশ্চর্য লাগে, তারা ইতিকাফ ত্যাগ করে চলেছে, অথচ নবী করিম (সা.) মদিনায় আসার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কখনো ইতিকাফ পরিত্যাগ করেননি।’ (ইবনে বাত্তাল : শরহুল বুখারী, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৮১)।

মসজিদ ব্যতীত ইতিকাফ শুদ্ধ নয়। পাঞ্জেগানা ও জামে মসজিদে ইতিকাফ করা শুদ্ধ। জুমার জন্য মসজিদ থেকে বের হলে ইতিকাফ ভাঙবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। অনুরূপ তার স্ত্রীগণ ইতিকাফ করতেন। ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে লাইলাতুল কদর তালাশ করা। মহিলারা নিজ নিজ গৃহের নিভৃত স্থানে ইতিকাফ করতে পারেন। ইতিকাফ সম্পর্কে আল কোরআনে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, আর আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী, রুকুকারী ও সিজদাহকারীদের জন্য পবিত্র করো। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১২৫)। আর ইতিকাফের বিধান বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে : আর তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৮৭)।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন।’ (সহিহ বুখারী : হাদিস নং ১৯২১; সহিহ মুসলিম হাদিস নং ১১৭১) হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) মাহে রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। অতঃপর তার স্ত্রীগণ তার পরবর্তীতে ইতিকাফ করেছেন। (সহিহ বুখারী : হাদিস নং ১৯২২; সহিহ মুসলিম : হাদিস নং ১১৭১)। আর আতা আল খুরাসানী (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : ‘আগে বলা হতো- ইতিকাফকারীর উদাহরণ সে বান্দাহর মতো, যে নিজেকে আল্লাহর সামনে হাজির করে বলছে : হে আল্লাহ, যতক্ষণ না তুমি ক্ষমা করো আমি তোমার দরবার ত্যাগ করব না।’ (ইবনে বাত্তাল : শরহুল বুখারী : খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৮২)।

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে আরো বর্ণিত আছে, তিনি বলেন : ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন ইতিকাফ করতেন, তখন প্রাকৃতিক জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ঘরে প্রবেশ করতেন না।’ (নাসাঈ : ফিল কুবরা : হাদিস নং ৩৩৬৯)। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে আরো বর্ণিত আছে, তিনি বলেন : ইতিকাফকারীর জন্য সুন্নত হচ্ছে রোগী দেখতে না যাওয়া, জানাজায় হাজির না হওয়া, স্ত্রীকে স্পর্শ বা তার সাথে ঘনিষ্ঠতা না করা, খুব জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত মসজিদ হতে বের না হওয়া। রোজা ব্যতীত ইতিকাফ শুদ্ধ নয়। অনুরূপভাবে জামে মসজিদ ছাড়াও ইতিকাফ শুদ্ধ নয়। আবু দাউদ : হাদিস নং ২৪৭৩; দ্বারা কুতনী : খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২০১; বায়হাকি ফিস সুনান : খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩২১; ফাতহুল বারী : খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৭৩; আত-তামহীদ : খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ৩২০)।

মানসিক প্রয়োজন ব্যতীত ইতিকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়। যেমন- প্রস্রাব-পায়খানা অথবা পানাহার, যদি তা মসজিদে পৌঁছে দেয়ার কেউ না থাকে। অনুরূপভাবে প্রয়োজনীয় প্রত্যেক বস্তু, যা মসজিদে সম্পাদন করা সম্ভব নয়, তার জন্য বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হবে না। (আত-তামহীদ; খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ৩২৭, আল-মুগনী : খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৬৮; শারহুল নব্বী; খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২০৮; সারহুত তাসরীব; খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৬৯)। ‘ইতিকাফকারী জরুরি প্রয়োজনে বের হলে দ্রুত হাঁটা জরুরি নয়। বরং অভ্যাস অনুযায়ী হাঁটবে। তবে প্রয়োজন শেষে দ্রুত ফিরে আসা ওয়াজিব।’ (আল মুগনী : খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৬৯)।

করোনা মহামারির কারণে গতবছর রমজানে স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করে সরকার ইতিকাফে বসার ক্ষেত্রে কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করেছিল। যেহেতু এ বছরও করোনার প্রকোপ আশঙ্কাজনক, তাই ফরজে কেফায়া আদায় হয়, তেমন সংখ্যক লোক স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইতিকাফে বসা উচিত। আল্লাহ আমাদের সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করুন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মিরাজ আলী ৩ মে, ২০২১, ১:৪০ এএম says : 0
জগতের সব আকর্ষণ থেকে মুক্ত হয়ে, সব মোহ–মায়া ত্যাগ করে, সব বাধা বন্ধন উপেক্ষা করে একান্তভাবে আল্লাহ জাল্লা শানুহুর সন্নিধানে যাওয়ার নাম ইতিকাফ।
Total Reply(0)
নূরুজ্জামান নূর ৩ মে, ২০২১, ১:৪০ এএম says : 0
ইতিকাফ একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ইবাদত। রমজানের শেষ দশক তথা ২০ রমজান সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে ঈদের চাঁদ তথা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়া বা ৩০ রমাদান পূর্ণ হয়ে ওই দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ কিফায়াহ। কোনো মসজিদ মহল্লায় কয়েকজন বা কোনো একজন আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হবে। আর কেউই আদায় না করলে সবাই সুন্নাত তরকের দায়ে দায়ী থাকবে।
Total Reply(0)
সৈকত ফকির ৩ মে, ২০২১, ১:৪১ এএম says : 0
পুরুষের জন্য জামে মসজিদ অর্থাৎ যে মসজিদে নিয়মিত জুমা হয় সে মসজিদেই ইতিকাফ করতে হবে।
Total Reply(0)
কুদ্দুস তালুকদার ৩ মে, ২০২১, ১:৪২ এএম says : 0
ইতিকাফের প্রতি উম্মতকে উৎসাহিত করতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিকাফের বহু ফজিলত বর্ণনা করেছেন।
Total Reply(0)
রেজাউল করিম ৩ মে, ২০২১, ১:৪৩ এএম says : 0
আমাদের অন্যান্য ইবাদতের মতো ইতিকাফেও রিয়ার অনুপ্রবেশ লক্ষ্যণীয়। লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে মোটেও ইবাদত করা যাবে না।
Total Reply(0)
বদরুল সজিব ৩ মে, ২০২১, ১:৪৩ এএম says : 0
আমাদের মনে রাখা উচিত, ইবাদতের মধ্যে যত এখলাস থাকে সে ইবাদতের গ্রহণযোগ্যতা আল্লাহর দরবারে তত বেড়ে যায়। তাই, আমাদের অবশ্যই উচিত, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে একনিষ্ঠতার সহিত ইতিকাফ করা।
Total Reply(0)
Abirshakh ৩ মে, ২০২১, ৫:০১ এএম says : 0
এতেকাফ কারি কি প্রয়জন ব্যতি (নফল) গোসল করতে পারবে কি? আর পারলে তার সুরাত কি?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন