বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হারাম আয়ে রোজা ও দান-খয়রাত

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষকে আল্লাহ নানা প্রকারের উপকরণ প্রদান করেছেন। এগুলোর মধ্যে বৈধভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করা অন্যতম। অনেক কিছু হালাল যেমন রয়েছে, অনেক খিছু হারাম-অবৈধ নিষিদ্ধও রয়েছে। যেমন- খাদ্য হিসেবে শুকর, কুকুর ইত্যাদি হারাম। অনুরূপভাবে মদ হারাম। ব্যবহারিক জীবনে সৎ ও সততার সাথে ব্যবসা বাণিজ্য করা কিম্বা অন্য পেশা অবলম্বন করার উপর ইসলাম বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে এবং সততার সাথে ব্যবসা করতে উৎসাহিতও করেছে, যা হালাল উপার্জনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

কোরআন ও হাদীসে হালাল ও হারাম সম্পর্কে বহু কথা বলা হয়েছে। দোআ কবুল হওয়ার জন্য হাদীসে হালাল রিজিকের প্রভাবের কথা বলা হয়েছে। মুসলিম শরীফে হজরত আবু হোরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত একটি হাদীস এই যে, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আল্লাহতাআলা পবিত্র এবং তিনি কেবল পবিত্র মালই গ্রহণ করেন এবং আল্লাহ তাআলা মোমেনদেরকে এই নির্দেশ দান করেছেন, যা নির্দেশ করেছেন তার রসূলগণকে।

তিনি বলেছেন : হে পয়গম্বরগণ! তোমরা পবিত্র খাদ্য খাও এবং নেক আমল কর। আর মোমেনদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! আমি যেসব পবিত্র ও হালাল বস্তু তোমাদেরকে দান করেছি, সেগুলো খাও। অতঃপর এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, যে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে একটি পবিত্র স্থানে আসে, তার মুখমন্ডল ধুলাবালিতে আচ্ছন্ন হয়ে যায় এবং সে দুই হাত আসমানের দিকে উত্তোলন করে বলতে থাকে, হে আমার রব! এবং দোআ করে অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানি হারাম এবং পোশাক হারাম এবং হারামের ওপরই প্রতিপালিত। তাহলে এমন ব্যক্তির দোআ কিভাবে কবুল হতে পারে?

এ হাদীসে দুইটি বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত: আল্লাহ কেবল সেই সদকা (দান) গ্রহণ করেন, যা পবিত্র ও বৈধ উপার্জন দ্বারা অর্জিত। হারাম দ্বারা উপার্জিত মাল যদি আল্লাহর পথে খরচ করা হয়, তা তিনি কবুল করবেন না। দ্বিতীয়ত : যদি ব্যক্তির উপার্জন নাজায়েজ বা অবৈধ উপায়ে হয়, তা হলে তার দোআ আল্লাহ কবুল করবেন না।

হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : লোকদের ওপর এমন এক যুগ আসবে যখন কোনো লোক পরোওয়া করবে না যে, সে যে মাল অর্জন করেছে তা হালাল কিংবা হারাম। (বোখারী)। হারাম উপার্জনের পরিণতি সম্পর্কে হাদীসে কড়া সতর্কবাণী এসেছে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কোনো বান্দা হারাম মাল কামাই করে, অতঃপর তা হতে আল্লাহর রাস্তায় দান করে, তাহলে তার পক্ষ হতে এ দান কবুল করা হবে না এবং যদি তার নিজের এবং পরিবারবর্গের জন্য খরচ করে তা হলে তাতে বরকত হবে না এবং যদি তা রেখে তার মৃত্যু হয়, তা হলে তা জাহান্নামের দিকে তার সফর সঙ্গী হবে। আল্লাহ তাআলা মন্দকে মন্দের দ্বারা মুছে ফেলেন না বরং মন্দ কাজকে ভালো কাজ দ্বারা মুছে ফেলেন। খুবস-অপবিত্র মুছে না। (মেশকাত)।

এ হাদীস দ্বারা জানা যায় যে নেক বা ভালো কাজ বৈধ উপায়ে করা হলে ওটাকেই নেক কাজ বলা হবে। উদ্দেশ্য যেমন পবিত্র হওয়া উচিত, তেমনি তার মাধ্যমও পবিত্র হতে হবে। সাধারণভাবে মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে এবং সর্বাবস্থায় হালাল-হারামের বিষয়গুলো অনুসরণীয় হলেও পবিত্র রমজানে যারা মাসব্যাপী ফরজ রোজা পালন করে থাকেন, তাদের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন হালাল উপায়ে অর্জিত হালাল মাল দ্বারা রোজা পালন করা এবং হালাল দ্বারা দান-সদকা করা। এ মাসের অসীম বরকত-সৌভাগ্য লাভ করতে রোজাগুলো যেমন ত্রুটিমুক্ত হওয়া উচিত, তেমনি হালাল মাল দ্বারা দান-সদকা করাও একান্ত আবশ্যক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
বুলবুল আহমেদ ৫ মে, ২০২১, ২:৫৯ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদেরকে হারাম আয় থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান করুক।
Total Reply(0)
হাবীব ৫ মে, ২০২১, ৩:০০ এএম says : 0
ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হালাল রিজিক
Total Reply(0)
কাওসার আহমেদ ৫ মে, ২০২১, ৩:০০ এএম says : 0
হালাল খাওয়ার বরকত ও হারাম খাওয়ার অকল্যাণ, অপকারিতা আর অনিষ্টতার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাঁর কালামে পাকে সুরা বাকারার ১৭২ নম্বর আয়াতে ইমানদারদের সম্বোধন করে বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী আহার করো, যেগুলো আমি তোমাদের রুজি হিসেবে দান করেছি এবং শুকরিয়া আদায় করো আল্লাহর, যদি তোমরা তাঁরই বন্দেগি করো।’
Total Reply(0)
হাবীব ৫ মে, ২০২১, ৩:০১ এএম says : 0
ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হালাল রিজিক
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ৫ মে, ২০২১, ৩:০১ এএম says : 0
এ কারণেই আল্লাহ তাঁর সব নবী-রাসুলের প্রতি হেদায়েতস্বরূপ ইরশাদ করেন, হে আমার রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র খাদ্য গ্রহণ করো এবং নেক আমল করতে থাকো [সুরা মুমিনুন, আয়াত ৫১]
Total Reply(0)
নাবিল আব্দুল্লাহ ৫ মে, ২০২১, ৩:০২ এএম says : 0
হিসাব করে দেখছি না ক্ষণিকের সুখ আর দুদিনের দুনিয়ার পেছনে পড়ে কিভাবে আখিরাতের অফুরন্ত সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দিচ্ছি। একবারও ভেবে দেখছি না, এ হারাম উপার্জনের কারণে আমার ইবাদত-বন্দেগি, নামাজ-রোজা, দান-খয়রাত সব বরবাদ হয়ে যাচ্ছে।
Total Reply(0)
Md.+Raju+Ahamed ৫ মে, ২০২১, ২:২৪ পিএম says : 0
আমরা কত বোকা, যে ক্ষনিকের জীবনের কত কিছু করছি অথচ চিরন্তন জীবনের জন্য কিছুই করছি না। আফসোস!!!!!!!!!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন