শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হাজার রাতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ যে রজনী

মাওলানা আবু আহমাদ মুসান্না | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

(১) আমি এ (কোরআন) নাজিল করেছি কদরের রাতে। (২) তুমি কি জানো, কদরের রাত কী? (৩) কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও বেশি ভালো। (৪) ফেরেশতারা ও রূহ এই রাতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রতিটি হুকুম নিয়ে নাজিল হয়। (৫) এ রাতটি পুরোপুরি শান্তিময় ফজরের উদয় পর্যন্ত।

শুধু একটি রাতকে কেন্দ্র করে নাজিল হওয়া একটা সম্পূর্ণ সূরা, সূরা কদরই বলে দেয় শবে কদরের গুরুত্ব কতখানি। আলহামদুলিল্লাহ, বলতে গেলে আমরা কেউই শবে কদরের মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে কম ওয়াকিবহাল নই। অতএব, এ রাতের ফজিলত থেকে বঞ্চিত হওয়া হবে নিতান্তই এক দুর্ভাগ্য।

প্রশ্ন হচ্ছে, শবে কদর আসলে কবে? বুখারি ও মুসলিমের হাদিস থেকে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, আমাকে শবে কদর দেখানো হয়েছিল; কিন্তু পরে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অতএব, তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে তা অনুসন্ধান করো। সে হিসাবে, আমরা বেশির ভাগই ধরে নিই যে, ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজানের যেকোনো এক রাতে শবে কদর।

তবে আমরা যদি সালাফদের দিকে তাকাই, তাহলে দেখব যে, অনেকেই ব্যাখ্যা করেছেন শুধু বিজোড় রাত নয়, যেকোনো জোড় রাতেও শবে কদর হয়ে যেতে পারে! শবে কদরের হাদিসগুলো নিয়ে ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রা.) এর ব্যাখ্যাটি সত্যিই আকর্ষণীয়।

আলহামদুলিল্লাহ, নিশ্চয়ই রমজানের শেষ দশকের কোনো এক রাত হচ্ছে শবে কদর। আর এ রাতটি হচ্ছে কোনো এক বিজোড় রাত, যেভাবে হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। আর সাধারণত এই বিজোড় রাতটি ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজানের যেকোনো এক রাতে ধরে নেয়া হয়।

কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত অন্য এক হাদিস থেকে জানা যায়, ‘রমজানের (শেষ দশকের) অবশিষ্ট নবম রাতে, অবশিষ্ট সপ্তম রাতে, অবশিষ্ট পঞ্চম রাতে এবং অবশিষ্ট তৃতীয় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান করো।’ (আবু দাউদ, তিরমিযী)।

এ হাদিস থেকে আমরা দেখতে পারি যে, যদি কোনো রমজান মাস ৩০ দিনের হয়, তাহলে অবশিষ্ট নবম রাতটি হবে ২২ রমজানের রাত, অবশিষ্ট সপ্তম রাতটি হবে ২৪ রমজানের রাত, অবশিষ্ট পঞ্চম রাতটি হবে ২৬ রমজানের রাত এবং অবশিষ্ট তৃতীয় রাতটি হবে ২৮ রমজানের রাত! আর এভাবেই আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা.) শবে কদরের রাত সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন।

অন্য দিকে, যদি কোনো রমজান মাস ২৯ দিনের হয়, তাহলে উক্ত হাদিস অনুযায়ী শবে কদরের রাত পড়বে শেষ দশকের বিজোড় তারিখের রাতগুলোর যেকোনো এক রাতে। অতএব, মুমিনের উচিত, রমজানের শেষ দশ রাতের প্রতিটি রাতেই শবে কদর অনুসন্ধান করা।’

সুতরাং পুরো রমজান মাসেই শবে কদরের তালাশে থাকা উচিত। রমজানের প্রত্যেকটি রাত যদি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানো যায়, তবে শবে কদর অবশ্যই ভাগ্যে মিলবে বলে আশা করা যায়। আর তা সম্ভব না হলে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে জাগ্রত থেকে জিকির-আজকার, নফল নামাজ ও কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদির মাধ্যমে যদি কাটানো যায়, তবে শবে কদর মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

এটা সম্ভব না হলে, অন্তত এই রাতগুলোতে যেন এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করা হয়। এতে আশা করা যায়, শবে কদরের ফজিলত থেকে মাহরুম হতে হবে না। কারণ, হাদিস মতে এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় সম্পূর্ণ রাত ইবাদত করার সমতুল্য। আর যদি বেজোড় রাতগুলো পূর্ণভাবে ইবাদতের মধ্যে অতিবাহিত করার সুযোগ না হয়, তবে অন্তত ২৭ তারিখের রাতের গুরুত্ব দেয়া এবং পুরো রাত ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকা দরকার।

যে জন্য শেষ দশ দিন ইতিকাফ সুন্নত করা হয়েছে। নবী করিম (সা.) জীবনভর রমজানে ইতিকাফ করেছেন। যেন জোড়-বিজোড় প্রতিটি রাতেই মানুষ শবে কদর তালাশ করার সুযোগ পায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
মোঃ নাজমুল ইসলাম ৯ মে, ২০২১, ১:২৫ এএম says : 0
পবিত্র রমজান মাসের পুরো সময় বরকতপূর্ণ। আর রমজানের শেষ ১০ দিন সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ। এরমধ্যে লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ। কোরআন ও হাদিসে কদরের রাতকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলা হয়েছে
Total Reply(0)
সাইফ আহমেদ ৯ মে, ২০২১, ১:২৬ এএম says : 0
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় নামাজ পড়ে, তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস নং : ২০১৪)
Total Reply(0)
গাজী ফজলুল করিম ৯ মে, ২০২১, ১:২৬ এএম says : 0
রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। রাসুল (সা.)-কে মহিমান্বিত রাত সম্পর্কে জানানো হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তা ভুলে যান। তবে রাসুল (সা.) সবাইকে শেষ ১০ দিনে কদরের রাত অনুসন্ধান করতে বলেছেন। এবং এ রাতের কিছু বৈশিষ্ট বর্ণনা করেছেন।
Total Reply(0)
ক্ষণিকের মুসাফির ৯ মে, ২০২১, ১:২৭ এএম says : 0
মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য এ রাতের মাহাত্ম্য ও সম্মান হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ করেছেন। লাইলাতুল কদরে পরবর্তী এক বছরের হায়াত, মওত, রিযিক প্রভৃতি বিষয়ের তাকদীর লেখা হয়। লওহে মাহফুজ থেকে তা নকল করে সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাদের কাছে সোপর্দ করা হয়।
Total Reply(0)
হীরা হীরক ৯ মে, ২০২১, ১:২৭ এএম says : 0
লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব অপরিসীম। হাজার মাস ইবাদত করে যে সওয়াব হয়, কদরের এক রাতের ইবাদতে তার চেয়ে বেশি সওয়াব হয়।
Total Reply(0)
নূরুজ্জামান নূর ৯ মে, ২০২১, ১:২৮ এএম says : 0
লাইলাতুল কদরের সঠিক তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
Total Reply(0)
দেওয়ান মাহদী ৯ মে, ২০২১, ১:২৮ এএম says : 0
তবে হাদিসে এ রাতের কিছু বৈশিষ্ট্য এসেছে। সেই রজনী চন্দ্রালোকিত রজনীর মতো উজ্জ্বল, পরিষ্কার, নীরব ও নাতিশীতোষ্ণ হবে। সকাল পর্যন্ত কোনো তারকা খসে পড়বে না। পরের দিন সকালের সূর্যকিরণ পূর্ণিমার চাঁদের মতো উষ্ণতাহীন হবে। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস ২২৭৬৫)
Total Reply(0)
নুর নাহার আক্তার নিহার ৯ মে, ২০২১, ১:২৯ এএম says : 0
হাজার মাসে ইবাদত করলে যত ছওয়াব ও যত মর্যাদা পাওয়া যায়, এই এক রাতে ইবাদত করলে তার চেয়ে বেশি ছওয়াব ও মর্যাদা পাওয়া যায়। এভাবে আল্লাহ তায়ালা মুমিন বান্দার আমল বাড়িয়ে নেওয়া সুযোগ করে দিয়েছেন কদরের রাত দিয়ে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন