দুনিয়াবী তথা পার্থিব দিক থেকে রমজানের এমন কিছু বৈশিষ্ট তাৎপর্য রযেছে যেগুলো ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে গোটা মানব জাতির মঙ্গল কল্যাণে ভূমিকা রাখে এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও রমজানের অবদান লক্ষ্য করা যায়। রমজানের মাসব্যাপী রোজদার ইফতার সেহরীর মাধ্যমে সমাজসেবা ছাড়াও মাসব্যাপী সাদকা, দান-খয়রাত ইত্যাদির মাধ্যমে মানবতার কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়। ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক, জাতীয়, রাষ্ট্রীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল পর্যন্ত রমজান মাসের রোজার সুপ্রভাব নানাভাবে প্রত্যক্ষ করা যায়, যদিও রমজান মাসের রোজা পালনের মাধ্যমে উপবাস যাপন কেবল মুসলমানদের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত বিধান। তবে এর পার্থিব বৈশিষ্ট্যাবলির ফলাফল গোটা মানবজাতি ভোগ করতে পারে। এটি ইসলামের এক অপূর্ব বৈশিষ্ট্য।
রমজানকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্য নতুন বিষয় নয়, আগেকার দিনেও তার প্রচলন ছিল। বর্তমান ইফতারের প্রধান সামগ্রী খোর্মাসহ রমজান সংক্রান্ত আরো যেসব দ্রব্যসামগ্রী বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। বিভিন্ন দেশ হতে আমদানি হয়ে এসব পণ্য আসে। এটি একটি দিক। কিন্তু রমজানের সর্বব্যাপী বৈষয়িক দিক হচ্ছে। মানবিক এবং এর বাকি দিক বা রূপগুলো হচ্ছে খণ্ডিত সীমিত।
ইসলামে প্রতিটি পর্যায়ে সমাজসেবা ও মানবতার আদর্শ-শিক্ষার নমুনা প্রত্যক্ষ করা যায়। কোরআন ও হাদীসে কয়েক প্রকারের অভাবী, হত দরিদ্র লোকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের সাহায্য-সহায়তা প্রদান করা ধনী বিত্তশালীদের ওপর দায়িত্ব হিসেবে আরোপ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ফকির, মিসকিন, গরিব, মুফলেস, এতীম, অভাবী আপন-স্বজন প্রভৃতি শ্রেণির লোক রয়েছে এবং ধনী অর্থশালীদের ওপর তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। মানবতা বিবেচনায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেকেই অর্থশালীদের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা লাভের অধিকারী। তাদের প্রতি ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই এ দিকে এগিয়ে আসার আহ্বান রয়েছে।
সহানুভূতি ও সহমর্মিতা রোজার (রমজান মাসের) প্রধান বৈশিষ্ট্য। হুজুর (সা.) বলেছেন : আমি ধনী গুণীদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের কথা বলিনি; দরিদ্র, অভাবী, ফকির, মিসকিন, অসহায়দের প্রতি ধনীদের সহানুভূতি প্রদর্শনের কথাই বলেছি। আর্থিকভাবে সক্ষম-স্বচ্ছল লোকেরাই দরিদ্র, অভাবী, অসহায়দের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করবে। রমজান মাসে মোমেনের রিজিক বৃদ্ধি পায় বলে রসূলুল্লাহ (সা.) উল্লেখ করেছেন। তাই সাহাবায়ে কেরাম এই মাসে বিশেষভাবে দান-খয়রাত অধিক পরিমাণে করতেন এবং তাদের বদান্যতা আত্মত্যাগের প্রবণতা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন