গজব যেন কিছুতেই ছাড়ছে না ভারতকে। করোনাভাইরাসের বিপর্যয় কাটিয়ে না উঠতেই দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় তাউকতে। গোয়া, কেরালা ও কর্ণাটকে তার শক্তিমত্তা প্রদর্শন করে গতরাতে গুজরাতে আঘাত হেনেছে ১৮৫ কিলোমিটার গতিবেগে। এ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাউকতের তাণ্ডবে ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে বহু মানুষ। তাউকতের ছোবলে বিধ্বস্ত হয়েছে অনেক গাছপালা, কাঁচা ঘর, বিদ্যুতের খুঁটি। অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় তাউকতের দাপটে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন জায়গায় গতকাল প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি হয়। রাস্তায় পানি জমে যাওয়ার পাশাপাশি ডোম্বিভ্যালি এবং ঠাকুলি রেল স্টেশনের মাঝে রাস্তায় বিভিন্ন গাছ ভেঙে পড়ে। ওভারহেড বিদ্যুতের তারও ছিঁড়ে যায়। তাতে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।
আবহাওয়া দফতর বা মৌসম ভবনের সূত্র জানায়, এতটা গতিবেগ হওয়ার কোন পূর্বাভাস ছিল না তাউকতের। তবে আচমকা অঙ্কে বদলে শক্তি বৃদ্ধিতে ভয়বাহ শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় তাউকতে। সাইকেলোনিক স্টর্ম থেকে ভেরি সিভিয়ার সাইকেলোনিক স্টর্ম বা অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় এখন তাউকতে। গতকাল রাত আটটার দিকে গুজরাট উপকূলে উনার কাছে আছড়ে পড়ে এই ঝড়। এর আগে ঘণ্টায় ১৮০ থেকে ১৯০ কিমি গতিবেগে গতি বাড়িয়ে ছুটে আসে তাউকতে। বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে উপকূল জুড়ে তাণ্ডবের আশঙ্কায় সর্তকতা জারি করা হয় গুজরাটসহ মুম্বাই উপকূলেও। প্রশাসনের তরফে স্যাটেলাইট চিত্রে নজর রেখে নেওয়া হয় ব্যবস্থা।
ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচাতে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ইতিমধ্যেই ১২ হাজারেরও বেশি বাসিন্দাকে মহারাষ্ট্রের উপকূল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হয় উপকূলে। ভারী বৃষ্টিপাতে ভেসে যায় বান্দ্রা কুরলা কমপ্লেক্স। বন্ধ হয়ে যায় বান্দ্রা ও ওরলি সি-লিঙ্ক থকে মুম্বাই এয়ারপোর্ট। বিপর্যয় মোকাবিলা টিম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। নজর রাখে ভারতীয় নৌবাহিনীও। তাউকতে বিপর্যয় মোকাবিলায় বৈঠক করে উদ্ধব ঠাকরে সরকার।
মুম্বাই উপকূলের গা বেয়ে গুজরাত উপকূলের দিকে এগোনো ঘূর্ণিঝড় তাউটের ফলে কেরল, তামিলনাড়ু, গোয়া উপকূলেও প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয়। শনিবার থেকেই কেরালায় প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। উপকূলবর্তী এলাকায় বয়ে যায় ঝোড়ো হাওয়া। কার্যত বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সে রাজ্যে।
কেরালার পর রোববার সকাল থেকে কর্ণাটকে শুরু হয়ে গেছে ঝড়ের তাণ্ডবলীলা। ৭৩টি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। রাজ্যের যে ছ’টি জেলায় ঝড়ের দাপট সবচেয়ে বেশি, তার মধ্যে তিনটি উপকূলবর্তী ও তিনটি পশ্চিমঘাট পর্বত সংলগ্ন। চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্ণাটক প্রশাসন। রাজ্যের ২৮৬টি জায়গায় প্রায় ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় উপকূলের জেলাগুলির ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা। সেখানে তিনি উদ্ধারকাজের পাশাপাশি ত্রাণ বণ্টনের উপর জোর দিয়েছেন। কর্ণাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোমানি বলেছেন, রাজ্যের উপকূলে তাউকতে আংশিক ভাবে আঘাত হেনেছে। ঘটনাস্থলে রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দল। এক হাজার মানুষ ২৪ ঘণ্টা জরুরি ভিত্তিতে কাজ করছে। বেলা বাড়তেই গোয়ায় ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে। উপড়ে গিয়েছে বহু গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি। যার জেরে বহু এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। মৌসম ভবন জানিয়েছে, ঝড়ের শক্তি অনুমান করার জন্য আগামী ১২ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করেছেন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত। করোনায় বিধ্বস্ত মহারাষ্ট্র। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সতর্ক উদ্ধব থ্যাকারে প্রশাসন। রাজ্যের পালঘর, রত্নগিরি, সিন্ধুদুর্গের মতো উপকূলীয় জেলায় ঝড়ের তীব্রতা বাড়তে পারে।
এর আগের খবরে বলা হয়, বন্যার আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই তৎপর হয়েছে প্রশাসন। নামানো হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। বেশ কিছু সমুদ্র তীরবর্তী গ্রামে পানি ছাপিয়ে ভাসাতে শুরু করেছে। লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে রাজ্যের তিরুবনন্তপুরম, কোল্লাম, পথনামতিত্থা, আলাপ্পুঝা ও এরনাকুলামে। কেরালার উত্তরের জেলাগুলি অর্থাৎ মলপ্পুরম, কোঝিকোড়ে, ওয়েনাদ, কান্নুর ও কাসুরগডেও বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। ঘূর্ণাবর্তের জেরে তৈরি হওয়া যে কোনওরকম পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে রাজ্য সরকার তৎপর বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।
গত রোববারই গোয়া উপকূলে আছড়ে পড়ে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তাউকতে। কার্যত লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় গোয়ার সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা। ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির জেরে গোয়াতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে একের পর এক বাড়ি। বেশ কয়েকটি জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। হাই অ্যালার্ট জারি করা হয় গুজরাট ও দিউ উপকূলে। অতিভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে কর্নাটকেও। সে রাজ্যের ছয়টি জেলায় শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টি। ইতোমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে চারজনের। মোট ৭৩টা গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেরালাতেও মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। সূত্র : নিউজ১৮, বর্তমান, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন