শফিউল আলম : দেশের কোথাও মেঘ-বৃষ্টি দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া, কোথাও রোদের তেজ আর ভ্যাপসা গরম। এভাবে পাঁচমিশেলী মূলত গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ কেটে যাওয়ার পাঁচ দিন পরও গতকাল (রোববার) পর্যন্ত গুমোট ভাব কাটেনি। এলাকাভেদে তাপমাত্রায় বিরাজ করছে ব্যাপক তারতম্য। সিলেট, চট্টগ্রামে যেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮-২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ঢাকায় ৩৫ ডিগ্রি, যশোর, রাজশাহীতে ৩৬-৩৭ ডিগ্রির ঊর্ধ্বে। তবে সেই সাথে ‘মোরা’র পিছু নিয়ে জ্যৈষ্ঠের তৃতীয় সপ্তাহেই বর্ষার মৌসুমি বায়ুর আগমনে শুরু হয়ে গেছে আবহাওয়ার পালাবদল। এদিকে অভ্যন্তরীণ নৌ-বন্দরসমূহের জন্য সতর্কবার্তায় বলা হয়, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘন্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদী বন্দরসমূহকে ২নং নৌ হুশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া দেশের অন্যত্র পশ্চিম বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিমি বেগে বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১নং সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে চট্টগ্রামসহ সমুদ্র বন্দরসমূহকে কোনো সঙ্কেত দেখাতে হবে না। যদিও ‘মোরা’র বর্ধিত প্রভাবে সমুদ্র কিছুটা উত্তাল থাকায় জেলেরা অনেকেই ট্রলার নৌযান নিয়ে সাগরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। চট্টগ্রামে রোজার বাজারে রসনাবিলাসী কোরাল, রূপচাঁদা, পোয়া, লইট্টা, টুনাসহ হরেক জাতের সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ কমে গেছে, বেড়েছে দামও।
এদিকে ‘মোরা’ বিদায়ের জেরে শুরু হয়ে গেছে বাংলাদেশ ও আশপাশ অঞ্চলের আবহাওয়ার পালাবদল। বর্ষারোহী দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুমালা এখন রাজধানী ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চল, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে গেছে। আবহাওয়া বিভাগ বলছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে সারাদেশে মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করতে পারে।
গত পর পর দুই মাসে তীব্র কালবৈশাখী ঝড়, বজ্রপাত, তাপপ্রবাহ, ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতের পরও যেন পিছু ছাড়ছে না দুর্যোগের ঘনঘটা। চলতি জুন মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল (রাজশাহী-রংপুর), মধ্যাঞ্চল (ঢাকা-কুমিল্লা ও আশপাশ) এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের (বৃহত্তর সিলেট) কিছু কিছু স্থানে স্বাভাবিক বন্যার সতর্কতার কথা জানা গেছে। আবহাওয়া বিভাগ এ বিষয়ে জানায়, জুন (তথা জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়) মাসে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের কারণে এ বন্যা হতে পারে এবং যা বর্তমান সময়ের ‘স্বাভাবিক’ বন্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রদানের লক্ষ্যে গত ১ জুন অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির নিয়মিত বৈঠকে উপরোক্ত এলাকাওয়ারি ‘স্বাভাবিক’ বন্যার কথা জানানো হয়। ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ। আবহাওয়ার উপাত্ত, ঊর্ধ্বাকাশের আবহাওয়া বিন্যাস, বায়মÐলের বিভিন্নস্তরের বিশ্লেষিত আবহাওয়া মানচিত্র, জলবায়ু মডেল, এল-নিনো বনাম লা-নিনা’র অবস্থা ইত্যাদি উপাদান পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞরা মাসিক পূর্বাভাস দেন।
পূর্বাভাসে আরও জানা গেছে, চলতি জুন মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি মৌসুমি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যা বর্ষার বৃষ্টি স্বাভাবিক ঝরাবে। তবে গত মে মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে শতকরা ১৬ দশমিক ১ ভাগ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিভাগওয়ারি ময়মনসিংহে ১৩ শতাংশ ও রংপুরে ১০ ভাগ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকায় ২৫ ভাগ কম বৃষ্টিপাত হয়। দেশে বিগত এপ্রিল মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০৬ ভাগ ও মার্চে ১৫১ ভাগ বেশি বৃষ্টি ঝরে।
এদিকে আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
সর্বশেষ আবহাওয়া
আবহাওয়া বিভাগ গত সন্ধ্যায় জানায়, লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ ভারতের বিহার থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বি¯ৃÍত রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুমালা ঢাকা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। আজ (সোমবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী এবং সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
রাজশাহী ও পাবনা অঞ্চলসহ খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। এর পরবর্তী ৫ দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর বিস্তার লাভ করতে পারে। সেই সাথে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এদিকে গত সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সাতক্ষীরা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় ৩৭.৭ ডিগ্রি সে.। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩৪.২ ও ২৮.৬ ডিগ্রি সে.। দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয় ১৫৯ মিলিমিটার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন