দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদের খুশি নিয়ে পশ্চিম আকাশে উদিত হয় শাওয়ালের চাঁদ। শাওয়াল আরবি বর্ষপঞ্জির দশম মাস। এই মাসটি তার অবস্থান ও মর্যাদার কারণে ইসলামী জীবনব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। আরবি বছর ১২টি মাসের সমন্বয়ে গঠিত। এই মাসগুলোর ছয়টি মাসের অবস্থান বেজোড় সংখ্যার সাথে সংশ্লিষ্ট। যেমন ১ সংখ্যার সাথে লেগে আছে মহররম। ৩ সংখ্যার সাথে মিশে আছে রবিউল আউয়াল। ৫ সংখ্যার সাথে জড়িত আছে জুমাদাল উলা। ৭ সংখ্যার সাথে জড়িত আছে রজব। ৯ সংখ্যার সাথে জড়িত আছে রমজান। ১১ সংখ্যার সাথে সম্পৃক্ত জিলকদ। উপরোক্ত ছয়টি মাসের বেজোড় সংখ্যাগুলোর যোগফল দাড়ায় (১+৩+৫+৭+৯+১১)=৩৬। এখন এই ৩৬-এর একক হলো (৩+৬)=৯। এই নয় সংখ্যাটিও বেজোড় এবং বৃহত্তম সংখ্যা। এই সংখ্যাটির কোনো রকম ব্যতিক্রম ও রূপান্তর হয় না। সকল অবস্থায় ৯ই থাকে।
আর আরবি বর্ষপঞ্জির যে ছয়টি মাস জোড় সংখ্যার সাথে জড়িত তা নিম্নরূপ। ২ সংখ্যার সাথে জড়িত মাস হলো সফর। ৪ সংখ্যার সাথে সংশ্লিষ্ট হলো রবিউস সানী। ৬ সংখ্যার সাথে জড়িত হলো জুমাদাস সানী। ৮ সংখ্যার সাথে মিশে আছে শাবান। ১০ সংখ্যার সাথে মিশে আছে শাওয়াল। আর ১২ সংখ্যার সাথে জড়িত আছে জিলহজ। এই ছয়টি মাসের জোড় সংখ্যাগুলোর যোগফল দাঁড়ায় (২+৪+৬+৮+১০+১২+)=৪২। এই ৪২ সংখ্যাটির একক হলো (৪+২)=৬। এবার বেজোড় সংখ্যার একক ৯ ও জোড় সংখ্যার ৬-এর যোগফল (৬+৯)=১৫ হয়। সুবাহানাল্লাহ। আল্লাহ পাকের সৃষ্টি কৌশলের ক্রমধারার মাঝে কোনোই পরিবর্তন, পরিবর্ধন নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বীয় কুদরতি কামেলার মাধ্যমে সব কিছুই সুনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
শাওয়াল মাসের আমলের বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বাণীতে মূর্ত হয়ে ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা পরিপূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আদায় করবে, সে এক বছর নফল রোজা পালনের পুণ্য অর্জনে সক্ষম হবে।’ এটা আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের একটি পরম ও চরম অনুগ্রহ। এই অনুগ্রহের ফসল নিজের আমলনামায় যুক্ত করতে চাইলে সামর্থ্যবান মুমিন-মুসলমান নারী ও পুরুষ উভয়েরই উচিত শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা পালন করা। এই রোজা একাধিক্রমে যেমন আদায় করা যায়, তেমনি বিরতি সহকারেও আদায় করার বিধান আছে। সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা নিজেদের সুবিধামতো আমল করলেই তা যথেষ্ট বলে বিবেচিত হবে।
এই মাসে নফল সিয়াম পালনের সাথে অন্যান্য নেক আমল আদায় করাও খুবই উপকারী। যেমন- দান-খয়রাত করা, নিরন্নকে খাদ্য দান করা, বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান করা, অসহায়ের প্রতি সহানুভূতির হাত প্রসারিত করা, দুর্বল ও পীড়িত লোকদের প্রতি সহায়তার হাত সম্প্রসারিত করা, পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির খেদমতে তাওফিক অনুসারে নিজেকে সংযুক্ত করা ইত্যাদি। বস্তুত শাওয়াল মাসটি হজ ও জিয়ারতের প্রস্তুতিপর্ব হিসেবেই বিশেষভাবে পরিচিত। এই মাসে হজ ও জিয়ারতে গমনকারী বান্দাগণ নিজেদের এর জন্য প্রস্তুত করার কাজে মনোনিবেশ করে থাকেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন