ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চল সহ সমগ্র উপক’লভাগে হালকা থেকে মাঝরী বর্ষন শুরু হয়েছে। প্রচন্ড তাপদহের পরে সেরামবার রাত ৯টার দিকে দক্ষিণাঞ্চলে স্বস্তির বৃষ্টি শুরু হয়ে ঘন্টা খানেকের বৃষ্টিতে জনজীবনে স্বস্তি নেমে আসে। রাতভর থেমে থেমে হালকা বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১১ মিলিমিটারের পরে দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত আরো ৩.২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বরিশালে। পটুয়াখালী,বরগুনা ও ভোলার কিছু কিছু নিচু চরাঞ্চল মঙ্গলবার প্রায় ২ফুট জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। গলাচিপা ও রাংগাবালীর নিচু চরগুলোর কিছু ছিন্নমূল মানুষ সেচ্ছায় স্থানীয় প্রাইমারী স্কুল সহ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।
সমগ্র দক্ষিণ উপকুল যুড়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সব প্রস্তুতি চুড়ান্ত হয়েছে ইতোপূর্বেই। রেড ক্রিসেন্টের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর প্রায় ৭৫ হাজার সেচ্ছাসেবক উপক’লের ১৩ জেলার ৪১টি উপজেলায় ৭০১টি ইউনিটে বিভক্ত হয়ে সার্বক্ষনিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে। যেকোন পরিস্থিতিতে ঝুকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে সরিয়ে নিতে প্রস্তুত রয়েছেন তারা। তবে এখনো ৪ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষনা না দেয়ায় উপকুলে কোন ধরনের পতাকা উত্তোলন বা মাইক-মেগাফোন থেকে সতর্কবার্তা প্রচার করা হয়নি। এলক্ষেও সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে সিপিপি সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে আবহাওয়া বিভাগের সর্বশেষ বুলেটিনে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর অবস্থান মঙ্গলবার দুপুর ৩টায় পায়রা বন্দর থেকে ৪২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। পায়রা সহ সব সমুদ্র বন্দরকে ৩নম্বর স্থনীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সব নদী বন্দরকে ১নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সব ধরনের নৌ যোগাযোগ স্বভাবিক রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার দুপুর নাগাদ ভারতের উত্তর উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপক’ল অতিক্রমের কথা জানিয়ে এর প্রভাবে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর,ঝালকাঠী সহ দক্ষিন-পশ্চিম উপক’লের সব জেলা ও তার অদুরবর্তি দ্বীপসমুহের ওপর দিয়ে ৮০Ñ১শ কিলোমিটর বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। পাশাপাশি এসব জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপসমুহ স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৪ ফুট উচু জলোচ্ছাসে প্লাবিত হবার কথাও বলা হয়েছে।
তবে বুধবার পূর্ণিমা সহ পূর্ণ চন্দ্রগ্রহন ছাড়াও ব্লাড মুন দৃশ্যমান হবার কারনে আবহাওয়া স্বভাবিকের চেয়ে কিছুটা বিরূপ হবার সম্ভনাই বেশী বল জানা গেছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ষিঝড় সমুহ পূর্ণিমা ও অমাবশ্যার জোয়ারে ভর করেই আঘাত হেনে থাকে। বিআইডব্লিউটিএ’র টাইড টেবিল অনুযায়ী বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে হিরন পয়েন্টে পূর্ণ জোয়ারের পরে ভাটা শুরু হবে। আবার বিকেল ৫টা ১ মিনিট থেকে শুরু হয়ে রাত ১০টা ৪১ মিনিট পর্যন্ত পূর্ণ জোয়ার অব্যাহত থাকবে।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষকদের মতে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর প্রভাব বুধবার পূর্ণিমার ভরা কাটালে সন্ধার অগে-পরের পূর্ণ জোয়ারেই দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপক’লে পড়তে পারে। আবহাওয়া বিভাগেরর সর্বশেষ বুলেটিনে ইয়াস-এর কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ৮৯ কিলোমিটার থেকে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন