‘বুলবুল’ ও ‘আম্পান’-এর পরে গত বুধবার ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ দক্ষিণ উপক’লের কৃষি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ ছাড়াও পানি সম্পদ অবকাঠামোর ব্যপক ক্ষতি করল। প্রাথমিক হিসেবে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলায় এসব খাতের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অর্ধ সহশ্রাধীক কোটি টাকা। ভোলা, বরগুনা ও পটুয়াখালীর বিস্তির্ণ এলাকা এখনো পানির তলায়। ভোলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পনিবন্দী গত ৪ দিন ধরে। ইয়াস-এ ভর করে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ারে উপক’লভাগের বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ, নদী তীর রক্ষা বাঁধ এবং পানি অবকাঠামো ছাড়াও উপক’লের বিপুল সংখ্যক চিংড়ি ঘের সহ বিভিন্ন ধরনের বদ্ধ জলাশয়ের কোটি কোটি মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এ দুটি সেক্টরেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রাথমিকভাবে আড়াইশ কোটি টাকারও বেশী বলে জানা গেছে।
টাকার হিসেবে কৃষি সেক্টরের ক্ষতির হিসেব নিরুপিত না হলেও তাও শত কোটি টাকার কম নয় বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করছেন মঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে প্রায় ১ হাজার হেক্টরের আউশ বীজতলা, ৪ হাজার হেক্টরের রোপা আউশ, ৩ হাজার ৩৪ হেক্টরের সবজি, ১৯৯ হেক্টরের পান বরজ, পৌনে ২শ হেক্টরের পাট, ২শ হেক্টরে কলা, ১২৫ হেক্টরের মরিচ, ৪১ হেক্টরের তিল ও ২১ হেক্টর জমির পেপে বাগান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে, বুধবার ‘ইয়াস’এ ভর করে ফুসে ওঠা সাগর থেকে ধেয়ে আসা ঝড়ো হাওয়ার সাথে প্রবল জোয়ারে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন উপক’লীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ও নদী তীর রক্ষা বাঁধের ১৭৯টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। যার দৈর্ঘ প্রায় ৪.১৬ কিলোমিটার। এরমধ্যে ৪৯টি স্থানে প্রায় ২৫ কিলামিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। এছাড়াও বিভিন্নস্থানের বাঁধের ২২৩টি পয়েন্টে আংশিক ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। যার দৈর্ঘ প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। এছাড়াও ৩৬টি স্থানে সংরক্ষিত নদী তীর বাঁধের প্রায় সোয়া ৬ কিলোমিটার সিসি ব্লক বাঁধও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর বাইরেও ৪৫টি ফ্লাসিং স্লুইস ও ড্রেনেজ স্লুইস ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে উপক’লে পানি সম্পদ অবকাঠামোর ক্ষতির পরিমান প্রায় ১৪০ কোটি টাকা।
অপরদিকে ইয়াস’এর প্রবল জোয়ার আর শ্রোতে দক্ষিনাঞ্চলের প্রায় ৩ হাজার হেক্টরের ১৭ হাজার ২০৯টি পুকুর, দিঘি ও ঘের থেকে আড়াই হাজার টনেরও বেশী চিংড়ী সহ বিভিন্ন ধরনের মাছ ভেসে গেছে । এছাড়াও ঘের, পুকুর, দিঘী সহ বিভিন্ন ধরনের মৎস্য অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে মৎস্য সেক্টরে ক্ষতির পরিমানও ১শ কোটি টাকার মত। অতীতে ‘আম্পান’ ও ‘বুলবুল’এ দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য সেক্টরে ব্যপক ক্ষতি হলেও কোন পূণর্বাশন কর্মসূচী গ্রহন করা হয়নি। এবার তার কোন ব্যতিক্রম হবে কিনা তা বলতে পারনেনি কেউ।
২০০৭-এর ১৫ নভেম্বর রাতে ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’এর ভয়াল থাবার পরে ২০০৯-এর মে মাসে ‘আইলা’ এবং ২০১৩’র মে মাসে ‘মহাশেন’এর ছোবলে দক্ষিনাঞ্চলের বিশাল উপক’লীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ও নদী তীর সংরক্ষন বাঁধের ব্যপক ক্ষতি মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে। সেসব অবকাঠামোর পূণর্বাসন ও মেরামত সম্পন্ন হবার আগেই ২০১৯-এর নভেম্বরে ‘বুলবুল’ ও গত বছর ২০মে ঘূর্নিঝড় ‘আম্পান’ দক্ষিণ উপক’লের বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ সহ বিভিন্ন নদী তীর রক্ষা বাঁধের ব্যপক ক্ষতি করে। এসব ঘূর্ণিঝড়ে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ সেক্টরের ক্ষয়ক্ষতিও ছিল ব্যপক। একের পর এক ঝড়Ñজলোচ্ছাস উপকুল যুড়ে মৎস্য, কৃষি, প্রণিসম্পদ, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বুধবার ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ দক্ষিনের কৃষি, পানি সম্পদ, মৎস্য ও প্রণি সম্পদ সেক্টরের আরেকদফা বিপর্যয় সৃষ্টি করলে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন