ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ বুধবার ভারত উপকূলে আছড়ে পরলেও তার রেসে ধরে বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ, নদী তীর রক্ষা বাঁধ এবং পানি অবকাঠামো ছাড়াও উপক’লের বিপুল সংখ্যক চিংড়ি ঘের সহ বিভিন্ন ধরনের বদ্ধ জলাশয়ের কোটি কোটি মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এ দুটি সেক্টরেই ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক পরিমান আড়াইশ কোটি টাকারও বেশী বলে জানা গেছে। কৃষি সেক্টরের ক্ষতির পরিমান জানা না গেলেও তাও শত কোটি টাকার কম নয় বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করছেন মঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী ও বিভিন্নস্তরের কর্মকর্তাগন বুধবার দিনভরই দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় সরেজমিনে পানি অবকাঠামোর খোজখবর রেখেছেন। ইতোমধ্যে ক্ষতির প্রাথমিক প্রতিবেদনও বোর্ডের সদর দপ্তর ও পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে পাঠান হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরও ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে অধিদপ্তর ও মন্ত্রনালয়কে জানিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে, বুধবার ‘ইয়াস’এ ভর করে ফুসে ওঠা সাগর থেকে ধেয়ে আসা ঝড়ো হাওয়ার সাথে প্রবল জোয়ারে দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন উপক’লীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ও নদী তীর রক্ষা বাঁধের ১৭৯টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। যার দৈর্ঘ প্রায় ৪.১৬ কিলোমিটার। এরমধ্যে ৪৯টি স্থানে প্রায় ২৫ কিলামিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। এছাড়াও বিভিন্নস্থনের বাঁধের ২২৩টি পয়েন্টে আংশিক ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। যার দৈর্ঘ প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। এছাড়াও ৩৬টি স্থানে সংরক্ষিত নদী তীরের প্রায় সোয়া ৬ কিলোমিটার সিসি ব্লক বাঁধও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর বাইরেও ৪৫টি ফ্লাসিং স্লুইস ও ড্রেনেজ স্লুইস ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে ইয়াস-এ ভর করা জোয়ারে দক্ষিণ উপক’লে পানি সম্পদ অবকাঠামোর ক্ষতির পরিমান প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। ক্ষয়ক্ষতির হিসেবে পটুয়াখালী,বরগুনা ও ভোলার অবস্থাই সবচেয়ে খারাপ। তবে সবগুলো জেলায়ই বেড়ী বাঁধ, বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ও উপক’লীয় বাঁধের ক্ষতি হয়েছে।
অপরদিকে বুধবারের ঝড় বয়ে আনা প্রবল জোয়ার আর শ্রোতে দক্ষিনাঞ্চলের প্রায় ৩ হাজার হেক্টরের ১৭ হাজার ২০৯টি পুকুর, দিঘি ও ঘের থেকে আড়াই হাজার টনেরও বেশী চিংড়ী সহ বিভিন্ন ধরনের মাছ ভেসে গেছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও ঘের, পুকুর, দিঘী সহ সহ বিভিন্ন ধরনের মৎস্য অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে মৎস্য সেক্টরে ক্ষতির পরিমানও ১শ কোটি টাকার মত।
মৎস্য সেক্টরে বিভিন্ন জেলার ক্ষয়ক্ষতির হিসেব বরিশাল বিভাগীয় দপ্তর হয়ে মৎস্য অদিধপ্তরে জানান হয়েছে। তবে অতীতে ‘আম্পান’ ও ‘বুলবুল’এ দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য সেক্টরে ব্যপক ক্ষতি হলেও যেমন কোন পূণর্বাশন কর্মসূচী গ্রহন করা হয়নি, এবার তা হবে কিনা তা বলতে পারনেনি স্থানীয় কতৃপক্ষ।
২০০৭-এর ১৫ নভেম্বর রাতে ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’এর ভয়াল থাবার পরে ২০০৯-এর মে মাসে ‘আইলা’ ও ২০১৩’র মে মাসে ঘূর্নিঝড় ‘মহাশেন’এর ছোবলে দক্ষিনাঞ্চলের বিশাল উপক’লীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ এবং বিভিন্ন নদী সংরক্ষন বাঁধের ব্যপক ক্ষতি চরম মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে। সেসব অবকাঠামোর পূূণর্বাশন ও মেরামত সম্পন্ন হবার আগেই ২০১৯-এর নভেম্বরে ‘বুলবুল’ ও গত বছর ২০মে রাতে ঘূর্নিঝড় ‘আম্পান’ দক্ষিণ উপক’লের বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ সহ বিভিন্ন নদী তীর সংরক্ষন বাঁধের ব্যপক ক্ষতি করেছে। এসব ঘূর্ণিঝড়ে মৎস্য সেক্টরের ক্ষয়ক্ষতিও ছিল বর্ণনার বাইরে। একের পর ঝড় জলোচ্ছাস উপকুল যুড়ে মৎস্য, কৃষি, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বুধবার ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ দক্ষিনের পানি ও মৎস্য সম্পদকে আরেকদফা বিপর্যয়ের মুখে ফেলল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন