বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেছেন, করোনাকালেও বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে। শুধু গত বছরেই ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব পেয়েছে বেজা। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে এসব তথ্য জানান তিনি। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ‘বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনে বেজা ও বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) মধ্যে ‘ডেভেপলমেন্ট চুক্তি’ সই হয়। চুক্তিতে সই করেন বেজার পক্ষ থেকে নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী এবং বেপজার পক্ষে এর নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, বিশেষ অতিথি হিসেবে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম। পবন চৌধুরী বলেন, বেজা ও বেপজার মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের এই চুক্তি সই করে বেজা আরেকটি মাইলফলক রচনা করলো। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়ন এবং একটি শিল্পোন্নত, সমৃদ্ধ ও সুখী সোনার বাংলা বিনির্মাণে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে গেলাম। অচিরেই বেজার অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে অবস্থিত বেশকিছু কারখানা পুরোদমে উৎপাদনে যাবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের একসঙ্গে এগিয়ে চলতে হবে এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে যে বৃহৎ কিছু অর্জন করা সম্ভব, এ চুক্তি তারই প্রমাণ বহন করে। মেজর জেনারেল নজরুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে রফতানি বৃদ্ধি, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে বেপজা ইতোমধ্যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, ইপিজেডগুলোর মতো অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিচালনায়ও বেপজা সাফল্যের পরিচয় দেবে। এক্ষেত্রে উভয় (বেজা ও বেপজা) সংস্থার মধ্যে এ সমন্বয় ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে।
হেলালুদ্দীন আহমেদ জানান, বেজাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়নে সরাসরি সহযোগিতা প্রদানে তার মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দ্রুত এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হবে এবং সুফল পাওয়া যাবে।
বেজার তথ্যমতে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা, ১৫ বছরের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিবছর অতিরিক্ত ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় প্রত্যাশা নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড ও মিরসরাই উপজেলা এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। ইতোমধ্যে ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এখানে নিশ্চিত হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে জাপানের নিপ্পন, ভারতের এশিয়ান পেইন্টস, যুক্তরাজ্যের বার্জার পেইন্টস, সিঙ্গাপুরের উইলমারসহ আরও অনেকে। দেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে পিএইচপি, বসুন্ধরা গ্রুপ, টি কে গ্রæপ ছাড়াও আরও নানা বিনিয়োগকারী। এ শিল্পনগরে ইতোমধ্যে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সাথে বেজার সমন্বয়ের ফলে নির্মিত হয়েছে শেখ হাসিনা সরণি, দেশের সর্বপ্রথম সুপারডাইক, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গ্যাস সংযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ। এ শিল্পনগরে বর্তমান ১৩টি শিল্প নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে, আরও ১৫টি প্রতিষ্ঠান শিল্প নির্মাণের অংশ হিসেবে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। জুলাই মাস নাগাদ কমপক্ষে দুটি শিল্প কারখানা উৎপাদনে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ শিল্পনগরে মাধ্যমে ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কোভিড-১৯ মহামারির সময়েও এ শিল্পনগরের জন্য প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন