হাঁপানি রোগীদের জন্য শীতল আবহাওয়া, সর্দি-কাশি-ফ্লু বা ঠান্ডাজ্বর প্রচন্ড কষ্ট আর বিপদের কারণ হতে পারে। প্রতি বছর শীতে শিশুদের ৮০ শতাংশ এবং বড়দের ৪০ শতাংশ হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এর প্রধান কারণগুলো হলো: এই সময়ে ঠান্ডা, জ্বর বা ফ্লুর প্রকোপ, ঠান্ডা-শুষ্ক বাতাসে শ্বাসতন্ত্রের সংকোচন ধুলাবালু ও ধোঁয়ার প্রকোপ, কুয়াশা, বদ্ধ গুমোট পরিবেশ ইত্যাদি। এসবই শ্বাসতন্ত্রের সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দেয়, ফলে হাঁপানি রোগীর কষ্ট বাড়ে। হাঁপানি দুরারোগ্য ব্যাধি, করোনাকালে যাদের হাঁপানির সমস্যা রয়েছে তারা বেশি সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছে। তাই এই সময় অবশ্যই হাঁপানি রোগীদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। হাঁপানি হচ্ছে একটি ক্রনিক সমস্যা, যা শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা তৈরি করে। এটি এমন একটি সমস্যা, যা প্রাণঘাতীও হয়। এক একজনের ক্ষেত্রে হাঁপানির সমস্যা এক একরকমের হতে পারে। হাঁচি, কাশি, বুকে চাপা ভাব, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ইত্যাদি হাঁপানির অন্যতম লক্ষণ। হাঁপানি, ক্রনিক ব্রংকাইটিস, আইএলডি ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভুগছেন যাঁরা, তাঁদের শ্বাসতন্ত্র নাজুক থাকে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে তাই তাঁদের জটিলতার আশঙ্কা বেশি। এ ধরনের রোগীর তীব্র নিউমোনিয়াই শুধু নয়, অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোমও (এআরডিএস) হতে পারে। এআরডিএসে ফুসফুসের টিস্যু পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। কিছু কিছু খাবার আছে, যা হাঁপানি রোগীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দেয়। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশের শ্বাসতন্ত্রীয় সমস্যা ছিল। যেসব ফুসফুসীয় রোগ করোনা জটিলতার উচ্চ ঝুঁকি বহন করে, তা হলো অ্যাজমা ও ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি)। সিওপিডির মধ্যে ক্রনিক ব্রংকাইটিস ও এল্ফিম্ফসেমা উভয়ই রয়েছে। সিওপিডির প্রধান কারণ হচ্ছে ধূমপান। তাই যারা বছরের পর বছর ধরে ধূমপান করে আসছেন, তাদের করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সৃষ্ট জটিলতার বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে।
হাঁপানি এমন একটি দুরারোগ্য ব্যাধি যাতে একবার আক্রান্ত হলে দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে রোগীকে সারা জীবন কাটাতে হয়, হাঁপানি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কখনো সামাজিক বা পারিবারিক আনন্দ উল্লাসে যোগদান করতে পারে না, পারে না কোনো পরিশ্রমের কাজে অংশ নিতে, তাকে অনেক সময় গৃহবন্দি অবস্থা দিন কাটাতে হয়। অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই ঠান্ডা আবহাওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক। বর্ষার ঠান্ডায়, শীতের ঠান্ডায় রোগ বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে ব্রংকিয়াল হাঁপানি শীতকালে বাড়ে। শীতের ঠান্ডা রোগীর অসহ্য। শীতকালে নাকে একটুখানি ঠান্ডা বাতাস বা কুয়াশা প্রবেশ করলেই প্রথমে হাঁচি নাকঝরা ও পরে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। বর্ষা কালে দু’ এক ফোটা বৃষ্টির পানি গায়ে পড়লে, খোলা জানালার পাশে রাতে ঘুমালে, ভেজা বাতাসে ভ্রমণ করলে রোগের লক্ষণ বৃদ্ধি পায়। সুতরাং, শীতে হাঁপানি রোগীদের অত্যন্ত সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে। পাশাপাশি, করোনা সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতেও সতর্কতা ও সাবধানতা অপরিহার্য।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন