শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি এখনো ফুটনোটেই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০২১, ১২:০৬ এএম

হাইজিন বা স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি এখনো বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের একটি সাব-সেক্টর হয়েই রয়ে গেছে। যার কারণে বরাবরই এ খাতে বরাদ্দ কম দেয়া হয়। তবে এ বছর এই খাতে যথাযথভাবে মনোযোগ না দেয়া হলে মহামারী আরো দীর্ঘায়িত হতে পারে। করোনা অতিমারির এই সময়ে হাইজিনকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট বরাদ্দের পাশাপাশি তা সুনির্দিষ্টভাবে খরচ হলো কি না, তার নজরদারি জরুরি।

গতকাল রোববার ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে বরাদ্দ বিষয়ে বাজেটপূর্ব এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আলোচকরা এসব কথা বলেন। ওয়াটার এইড বাংলাদেশ, এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ ওয়াশ অ্যালায়েন্স, এফএসএম নেটওয়ার্ক, ফ্রেশওয়াটার অ্যাকশন নেটওয়ার্ক সাউথ এশিয়া, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল, ইউনিসেফ, পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, জনসমাগমস্থল, হাট-বাজার, বাস টার্মিনাল, সরকারি ও বেসরকারি অফিসসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য হাতধোঁয়ার স্থানে পানি, হ্যান্ড ওয়াশ বা সাবানের ব্যাপক স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শহর কিংবা গ্রামের পাশাপাশি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে কার্যকরী নানা সুযোগ-সুবিধাসহ হাতধোঁয়ার ব্যবস্থা রাখা খুবই প্রয়োজন।

এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, করোনা অতিমারির সময়েও হাইজিনকে বাজেটে নির্দিষ্ট উপখাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। এর দায় সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে এনজিও এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোকে নিতে হবে। হাইজিন বিষয়ে সরকারের দলিলপত্রের অভাব নেই উল্লেখ করে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, দলিলপত্রে ভালো ভালো কথাও লেখা আছে। তবে তা কাগুজে দলিলে পরিণত হয়েছে। এগুলোর বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, করোনার সময়ও দেখা যাচ্ছে, কোনো একটা মার্কেটে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন বানানো হয়েছে। বানানোর সময় তাতে সাবান, পানি সবই ছিল। তবে কয়েক দিন পরেই তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে রয়েছে। অর্থাৎ এগুলোর দেখভাল কে করবে বা বাজেট কোথা থেকে আসবে, এ বিষয়গুলোর সমাধান করা হয়নি। একইভাবে শৌচাগার বানানো হলেও তার আর ব্যবহার করার উপায় থাকছে না। অর্থাৎ যে টাকা ব্যয় করা হলো, তারও অপচয় হলো।

জাতীয় বাজেটের বড় আরেকটি দুর্বলতা হচ্ছে শহর-গ্রাম অথবা শহর-শহরের মধ্যে বৈষম্য জিইয়ে রাখার প্রবণতা এ বিষয়টি উল্লেখ করে হোসেন জিল্লুর রহমান এ বৈষম্য দূর করার বিষয়ে বাজেটসংশ্লিষ্ট সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পানি, শৌচাগার বা স্বাস্থ্যবিধি শুধু শহরের বা বড় শহরের মানুষের প্রয়োজন এ চিন্তা থেকে বের হতে না পারলে তা কোনো কাজে লাগবে না বলে মনে করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, করোনা মোকাবিলায় হাত ধোয়া, মাস্ক পরার বিকল্প নেই। হাত ধোয়ার ব্যবস্থাপনার জন্য সিটি করপোরেশন এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের জন্য বাজেট বরাদ্দ থাকতে হবে। গত বছর করোনার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম বা শহুরে এলাকা। তবে এবার দেখা যাচ্ছে সীমান্তবর্তী জেলা বা উপজেলাগুলোয় করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। বাজেট বরাদ্দে এ বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।

হাসিন জাহান বলেন, ওয়াটার এইড বাংলাদেশের এক গবেষণা বলছে, করোনায় খরচ বেড়ে গেছে। খরচ কমানোর জন্য যে নারী বা মেয়েরা করোনার আগে মাসিকের সময় স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করত তা তারা এখন আর ব্যবহার করছে না। এই নারী ও মেয়েরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে আবার কাপড় ব্যবহার করছে। করোনায় সহায়তার তালিকায় চাল-ডালের পাশাপাশি স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখা এবং সরকার যাতে স্যানিটারি ন্যাপকিনকে কর ও ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখে এবং দামটা কমায়, সে দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, গত বছর বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি থোক বরাদ্দ ছিল। তবে এ বরাদ্দ কীভাবে বা কারা ব্যবহার করবে, তার কোনো নির্দেশনা ছিল না। ফলে, টাকাটা আদৌ খরচ হয়েছে কি না, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তা জানেন না।
ওয়াটারএইড ও ইউনিসেফ-এর সহযোগিতায়, পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এর এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ বেশ প্রশংসনীয়। কারণ, ওয়াশ খাতে ২০০৭-২০০৮ সাল থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে অর্থ বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। এ সময় ২ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা হয়েছে। বিগত বছরগুলোর বাজেটে এ খাতে আর্থিক বরাদ্দের ধারা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও ২০২০-২১ অর্থবছরে এডিপির অধীনে ওয়াশ খাতে ৫ শতাংশেরও কম বরাদ্দ করা হয়েছিল।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভৌগলিক অবস্থান বিচারে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়াশ বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রেও রয়েছে অসমতা। গ্রামাঞ্চল, চর, পার্বত্য অঞ্চল ও উপক‚লীয় এলাকায় ওয়াশ বাজেট বরাদ্দের অত্যধিক প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্বেও বিগত বছরগুলোতে শহর ও মহানগরগুলো তুলনামূলকভাবে বরাদ্দের শতাংশ বেশি। সংবাদ সম্মেলনে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে সম্মিলিতভাবে সাতটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন