শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল্লাহর প্রিয় হওয়ার একটি আমল

মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

আপনি এত কষ্ট করছেন, অথচ আপনার পূর্বাপর সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে!Ñ বলেছিলেন আম্মাজান আয়েশা রা. দো-জাহানের সরদার হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে উদ্দেশ্য করে। রাত জেগে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পড়তে তাঁর পা মোবারক ফুলে যেত, তাই এই অনুযোগ। উত্তরে নবীজী (সা.) বলেছিলেন : ‘আমার কি উচিত নয় যে, (এই মহা অনুগ্রহের জন্য আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে) আমি একজন পূর্ণ শোকর আদায়কারী বান্দা হব?’ (সহীহ বুখারী : ৪৮৩৭)।

কিয়ামুল লাইলÑ রাত জেগে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ, মুমিনের মর্যাদার সিঁড়ি। জান্নাতের যাওয়ার অন্যতম উপায়। সফলতার চাবিকাঠি। আল্লাহর একান্ত ও প্রিয় হওয়ার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। রাসূলে কারীম (সা.) কখনও তাহাজ্জুদ ছাড়েননি। ছুটে গেলে কাযা করতেন। নিজে আদায় করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উৎসাহিত করতেন।

মুমিনের মর্যাদার সোপান : জিবরীল (আ.) আল্লাহর হুকুমে নবীজির খেদমতে আসতেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মাঝে ওহীর জ্ঞান ও ঊর্ধ্বজগতের খবর পৌঁছানোর গুরুদায়িত্বটা ন্যস্ত ছিল তাঁর কাঁধে। নবীজীর কাছে আসতেন এবং কিছু উপদেশ ও নসীহত শুনিয়ে আবার সরে যেতেন মানবপরিবেশ থেকে। একদিন উপদেশ শোনানোর পর তিনি নবীজীকে একটি অসাধারণ দর্শন জানালেন : হে মুহাম্মাদ! মুমিনের মর্যাদা কিয়ামুল লাইল- রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় ও বিভিন্ন বন্দেগীর মধ্যে, আর তাঁর সম্মান মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতার মধ্যে। (মুসতাদরাকে হাকেম : ৭৯২১)।

ফরয নামাজের পরেই যার স্থান : পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মুমিনের পরিচয়। এর গুরুত্ব অপরিসীম। এর পরই যে নামাজ আল্লাহর কাছে প্রিয় তা হলো তাহাজ্জুদ। হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদীস; নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন : রমজানের পর রোজা রাখার উত্তম সময় মুহাররম মাস আর ফরয নামাজের পর উত্তম নামাজ রাতের নামাজ, অর্থাৎ তাহাজ্জুদ। (সহীহ মুসলিম : ২৭২৫)।

যে আমল নবীজী কখনো ছাড়েননি : প্রিয় জিনিস কি কেউ কখনও ছাড়তে চায়? আর যদি সাথে যুক্ত হয় মজবুত ঈমান ও সওয়াবের আশা, হৃদয়ে থাকে প্রভুর প্রতি ভালোবাসা এবং আমলের অদম্য প্রেরণা; তখন কঠিন কাজও হয়ে যায় অতি সহজ। হাঁ, আমাদের জন্য এর সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত প্রিয়নবী (সা.)। তাঁর জীবনসঙ্গীনী ও মুমিন-জননী হযরত আয়েশা রা.-এর যবান থেকেই এর একটি বিবরণ শুনুন।

উরওয়া রাহ. বলেন, আয়েশা রা. বলেন : (নবীজী) রাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এত বেশি নামাজ পড়তেন যে, তাঁর পাও মোবারক ফুলে যেত। এ দেখে তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এত কষ্ট করছেন, অথচ আপনার পূর্বাপর সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে! রাসূল (সা.) বললেন, ‘আমার কি উচিত নয় যে, (এই মহা অনুগ্রহের জন্য আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে) আমি একজন পূর্ণ শোকর আদায়কারী বান্দা হব?’ (সহীহ বুখারী : ৪৮৩৭)।

স্বেচ্ছায় তো ছাড়তেনই না, কখনো অনিচ্ছায় ছুটে গেলেও কাযা করে নিতেন। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকেই বর্ণিত, রোগ-ব্যাধি কিংবা অন্য কোনো কারণে যদি রাসূল (সা.) তাহাজ্জুদ আদায় করতে না পারতেন, তবে দিনের বেলায় বারো রাকাত আদায় করে নিতেন। (সহীহ মুসলিম : ৭৪৬)।

অন্য বর্ণনায় আছে, আবদুল্লাহ ইবনে কাইস রা.-কে হযরত আয়েশা রা. বললেন : হে আবদুল্লাহ! কিয়ামুল লাইল কখনো ছেড় না! কেননা নবীজী (সা.) তা কখনো ছাড়েননি। কখনো অসুস্থতা বা দুর্বলতা বোধ করলে বসে আদায় করতেন। (সুনানে আবু দাউদ : ১৩০৯)।

পাপ মুছে দেয় : তাহাজ্জুদ গোনাহ মিটিয়ে দেয় এবং মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে। হযরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেন : তোমরা কিয়ামুল লাইলের প্রতি যত্নবান হও। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী সালেহীনের অভ্যাস এবং রবের নৈকট্য লাভের বিশেষ মাধ্যম। আর তা পাপরাশী মোচনকারী এবং গোনাহ থেকে বাধা প্রদানকারী। (জামে তিরমিযি : ৩৫৪৯)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মিনহাজ ২ জুন, ২০২১, ২:০৮ এএম says : 0
অসংখ্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)
Abdul Malek ২ জুন, ২০২১, ৭:৫৩ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি রাত জেগে দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
গোলাম কাদের ২ জুন, ২০২১, ৭:৫৫ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদেরকে বেশি বেশি এই আমল করার ক্ষমতা দান করুক।
Total Reply(0)
গিয়াস উদ্দিন ২ জুন, ২০২১, ৮:১৭ এএম says : 0
রাতে কম ঘুমিয়ে নামাজে মশগুল থাকা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা নেককার, পরহেজগার ও মুত্তাকিদের অন্যতম বিশেষ গুণ।
Total Reply(0)
কাওসার আহমেদ ২ জুন, ২০২১, ৮:১৮ এএম says : 0
কিয়ামুল লাইল হলো এমন এক বিশেষ নফল নামাজ, যে নামাজকে তাহাজ্জুদ বলেই আমরা জানি। গভীর রজনীতে আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য ও নৈকট্য অর্জনের আশায় দুনিয়ার সব ব্যস্ততাকে দূরীভূত করে কায়মনোবাক্যে নিজের মস্তক অবনত করা। আল্লাহর খালিস বান্দা হওয়ার জন্য, নিজের মনের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা, দুঃখ-বেদনা, আকুতি পেশ করার উত্তম মাধ্যম হলো কিয়ামুল লাইল (তাহাজ্জুদ) নামাজ।
Total Reply(0)
নাবিল আব্দুল্লাহ ২ জুন, ২০২১, ৮:২০ এএম says : 0
নফল নামাজের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতময় নামাজ হচ্ছে কিয়ামুল লাইল
Total Reply(0)
fastboy ২ জুন, ২০২১, ৬:৩৯ পিএম says : 0
নিজের মনের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা, দুঃখ-বেদনা, আকুতি পেশ করার উত্তম মাধ্যম হলো কিয়ামুল লাইল (তাহাজ্জুদ) নামাজ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন