হযরত ঈসা (আ.)-এর বাসস্থানের নাম ছিল ‘নাসরানা’ বা ‘নাসিরা’ বা ‘নাসুরিয়্যাহ’। ওই স্থানের দিকে সম্বন্ধ করে তথাকার অধিবাসীদেরকে নাসারা বলা হয়। তারা নিজেদেরকে হযরত ঈসা (আ.)-এর অনুসারী বলে মনে করে। তাদেরকে ঈসাই বা মাসিহী বলা অনুচিত্র। কেননা ঈসাই বা মাসিহী শব্দের অর্থ হলো হযরত ঈসা (আ.)-এর ভক্ত বা অনুসারী। অথচ তারা বাস্তবে হযরত ঈসা (আ.)-এর অনুসারী নয়। বরং তারা হযরত ঈসা (আ.)-এর শিক্ষা হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং তাঁর মূল শিক্ষাকে বিকৃত করেছে। এ জন্যই কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে তাদেরকে ঈসাই নামে আহ্বান করা হয়নি। বরং ‘নাসারা,’ ‘আহলে কিতাব’ বা ‘আহলে ইঞ্জিল’ বলা হয়েছে। খুব সম্ভব খৃস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দির প্রথম দিকে তারা নাসারা নামে বা উপাধীতে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরেছে।
আল কোরআনে ‘নাসারা’ শব্দটি ১৪ বার এসেছে। যথা : সূরা বাকারাহ-এর ৬২, ১১১, ১১২, ১১৩, ১২০, ১৩৫, ১৪০, নং আয়াতে। সূরা মায়েদাহ-এর ১৪, ১৮, ৫১, ৬০, ৮২ নং আয়াতে। সূরা তাওবাহ-এর ৩০ নং আয়াতে। সূরা হজ্জ-এর ১৭ নং আয়াতে। আর ‘আহলে কিতাব’ শব্দটি এসেছে ৩২ বার। যথা : সূরা বাকারাহ-এর ১০৫, ১০৯ নং আয়াতে। সূরা আলে ইমরানের ৬৪, ৬৫, ৬৯, ৭০, ৭১, ৭২, ৮৫, ৯৮, ৯৯, ১১০, ১১৩, ১৯৯, নং আয়াতে। সূরা নিসা-এর ১২৩, ১৫৩, ১৫৯, ১৭১ নং আয়াতে।
সূরা মায়েদাহ-এর ১৫, ১৯, ৫৯, ৬৫, ৬৮, ৭৭ নং আয়াতে। সূরা আনকাবুতের ৪৯ নং আয়াতে। সূরা আহযাব-এর ২৬ নং আয়াতে। সূরা হাদীদ-এর ২৯ নং আয়াতে। সূরা হাশ্র-এর ২, ৭, ১১ নং আয়াতে। সূরা বাইয়্যিনাহ-এর ১, ৬ নং আয়াতে। আর ‘আহলে ইঞ্জিল’ শব্দটি এসেছে মাত্র ১ বার। সূরা মায়েদাহ-এর ৪৭ নং আয়াতে।
এই সম্প্রদায়ের ধারণা ও দাবি এই যে তারা হযরত ঈসা (আ.)-এর অনুসারী। ইঞ্জিল তাদের ঐশী গ্রন্থ। কিন্তু তাদের কল্পিত ধর্মীয় বিশ্বাস পুরাপুরি কুফর ও শিরকের ওপর প্রতিষ্ঠিত। যেমন তারা তিন ইলাহতে বা ঈশ্বরে বিশ্বাসী। অর্থাৎ তারা দাবি করে যে, উলুহিয়্যাত বা প্রভুত্বের তিনটি অংশ ও মূল উপাদান রয়েছে।
যেমন (ক) স্বয়ং আল্লাহতায়ালা পিতা (খ) হযরত ঈসা (আ.) পুত্র (গ) রুহুল কুদুস বা হযরত জিব্রাঈল (আ.)। তারা একথাও বিশ্বাস করে যে, হযরত ঈসা (আ.)-কে শুলিতে চড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। তারা এ কথাও বলে যে, হযরত আদম নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করার কারণে তার বংশধর ধ্বংস হওয়ার যোগ্য হয়ে পড়েছে। আল্লাহ তায়ালা তার বন্দাদের প্রতি করুণা করে স্বীয় কালেমা ও চিরস্থায়ীপুত্র হযরত ঈসা (আ.)-কে বাহ্যিক আকৃতি দান করে হযরত জিব্রাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে হযরত মারয়ামের গর্ভে (নিকটে) প্রেরণ করেন।
হযরত মারয়াম (আ.) উক্ত অনাদি কালেমাকে গর্ভে ধারণ করার পর তাঁকে জন্ম দেয়ায় তিনি প্রভুর মাতা হয়ে গেছেন। অতঃপর নিষ্পাপ হওয়ার পরও হযরত ঈসা (আ.) শুলিতে চড়ে আত্মোতসর্গ করা বরণ করেছেন যাতে তিনি হযরত আদম (আ.)-এর গোনাহের প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যেতে পারেন।
নাসারাদের মধ্যে অনেক দল উপদল রয়েছে। কিন্তু তাদের মৌলিক ভ্রান্ত বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণায় সকলেই একমত। যদিও শাখা প্রশাখাগত মতভেধ আছে। নাসারাগণ তাহলে কিতাব। কিন্তু তিন খোদায় বিশ্বাস, হযরত ঈসা (আ.)-এর খোদা হওয়ার ধারণা, নাবুওয়াত ও রিসালাতে মোহাম্মাদিয়ার ওপর অস্বীকৃতি ও অবিশ্বাস এবং অন্যান্য কুফরী ও শেরেকি আকীদার কারণে তারা কাফির ও মুশরিক বলে গণ্য।
সুতরাং যারা তাদেরকে অথবা ইহুদীদেরকে সত্য ধর্মাবলম্বী বলে বিশ্বাস করে অথবা তাদের জান্নাতী হওয়ার বা জাহান্নামী না হওয়ার আকীদা পোষণ করে তারাও কাফির এবং ইসলামের গণ্ডি হতে বহির্ভূত বলে গণ্য হবে। নাসারাও ইয়াহুদীরা আসমানী কিতাব তাওরাত, যাবুর ও ইঞ্জিলে যথেষ্ট পরিমাণে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও বিকৃতি সাধন করেছে। বর্তমানে তাওরাত, যাবুর ও ইঞ্জিল নামে যে কিতাব পাওয়া যায়, তা প্রকৃত আসমানী কিতাব নয়। বরং এগুলো বিকৃত ও পরিবর্তিত। (তথ্য সূত্র : ১, আল আদইয়ান ওয়াল ফিরাক : ৩০-৩১। ২. আল আকিদাতুল হানাফিয়্যাহ : ১৪১-১৪২। ৩. আল ফছল ফিল মিলাল : ১/৪৪, ৬৪, ২৪১)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন