মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নাসারা সম্প্রদায় চির পথহারা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

হযরত ঈসা (আ.)-এর বাসস্থানের নাম ছিল ‘নাসরানা’ বা ‘নাসিরা’ বা ‘নাসুরিয়্যাহ’। ওই স্থানের দিকে সম্বন্ধ করে তথাকার অধিবাসীদেরকে নাসারা বলা হয়। তারা নিজেদেরকে হযরত ঈসা (আ.)-এর অনুসারী বলে মনে করে। তাদেরকে ঈসাই বা মাসিহী বলা অনুচিত্র। কেননা ঈসাই বা মাসিহী শব্দের অর্থ হলো হযরত ঈসা (আ.)-এর ভক্ত বা অনুসারী। অথচ তারা বাস্তবে হযরত ঈসা (আ.)-এর অনুসারী নয়। বরং তারা হযরত ঈসা (আ.)-এর শিক্ষা হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং তাঁর মূল শিক্ষাকে বিকৃত করেছে। এ জন্যই কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে তাদেরকে ঈসাই নামে আহ্বান করা হয়নি। বরং ‘নাসারা,’ ‘আহলে কিতাব’ বা ‘আহলে ইঞ্জিল’ বলা হয়েছে। খুব সম্ভব খৃস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দির প্রথম দিকে তারা নাসারা নামে বা উপাধীতে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরেছে।

আল কোরআনে ‘নাসারা’ শব্দটি ১৪ বার এসেছে। যথা : সূরা বাকারাহ-এর ৬২, ১১১, ১১২, ১১৩, ১২০, ১৩৫, ১৪০, নং আয়াতে। সূরা মায়েদাহ-এর ১৪, ১৮, ৫১, ৬০, ৮২ নং আয়াতে। সূরা তাওবাহ-এর ৩০ নং আয়াতে। সূরা হজ্জ-এর ১৭ নং আয়াতে। আর ‘আহলে কিতাব’ শব্দটি এসেছে ৩২ বার। যথা : সূরা বাকারাহ-এর ১০৫, ১০৯ নং আয়াতে। সূরা আলে ইমরানের ৬৪, ৬৫, ৬৯, ৭০, ৭১, ৭২, ৮৫, ৯৮, ৯৯, ১১০, ১১৩, ১৯৯, নং আয়াতে। সূরা নিসা-এর ১২৩, ১৫৩, ১৫৯, ১৭১ নং আয়াতে।

সূরা মায়েদাহ-এর ১৫, ১৯, ৫৯, ৬৫, ৬৮, ৭৭ নং আয়াতে। সূরা আনকাবুতের ৪৯ নং আয়াতে। সূরা আহযাব-এর ২৬ নং আয়াতে। সূরা হাদীদ-এর ২৯ নং আয়াতে। সূরা হাশ্র-এর ২, ৭, ১১ নং আয়াতে। সূরা বাইয়্যিনাহ-এর ১, ৬ নং আয়াতে। আর ‘আহলে ইঞ্জিল’ শব্দটি এসেছে মাত্র ১ বার। সূরা মায়েদাহ-এর ৪৭ নং আয়াতে।

এই সম্প্রদায়ের ধারণা ও দাবি এই যে তারা হযরত ঈসা (আ.)-এর অনুসারী। ইঞ্জিল তাদের ঐশী গ্রন্থ। কিন্তু তাদের কল্পিত ধর্মীয় বিশ্বাস পুরাপুরি কুফর ও শিরকের ওপর প্রতিষ্ঠিত। যেমন তারা তিন ইলাহতে বা ঈশ্বরে বিশ্বাসী। অর্থাৎ তারা দাবি করে যে, উলুহিয়্যাত বা প্রভুত্বের তিনটি অংশ ও মূল উপাদান রয়েছে।

যেমন (ক) স্বয়ং আল্লাহতায়ালা পিতা (খ) হযরত ঈসা (আ.) পুত্র (গ) রুহুল কুদুস বা হযরত জিব্রাঈল (আ.)। তারা একথাও বিশ্বাস করে যে, হযরত ঈসা (আ.)-কে শুলিতে চড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। তারা এ কথাও বলে যে, হযরত আদম নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করার কারণে তার বংশধর ধ্বংস হওয়ার যোগ্য হয়ে পড়েছে। আল্লাহ তায়ালা তার বন্দাদের প্রতি করুণা করে স্বীয় কালেমা ও চিরস্থায়ীপুত্র হযরত ঈসা (আ.)-কে বাহ্যিক আকৃতি দান করে হযরত জিব্রাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে হযরত মারয়ামের গর্ভে (নিকটে) প্রেরণ করেন।

হযরত মারয়াম (আ.) উক্ত অনাদি কালেমাকে গর্ভে ধারণ করার পর তাঁকে জন্ম দেয়ায় তিনি প্রভুর মাতা হয়ে গেছেন। অতঃপর নিষ্পাপ হওয়ার পরও হযরত ঈসা (আ.) শুলিতে চড়ে আত্মোতসর্গ করা বরণ করেছেন যাতে তিনি হযরত আদম (আ.)-এর গোনাহের প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যেতে পারেন।

নাসারাদের মধ্যে অনেক দল উপদল রয়েছে। কিন্তু তাদের মৌলিক ভ্রান্ত বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণায় সকলেই একমত। যদিও শাখা প্রশাখাগত মতভেধ আছে। নাসারাগণ তাহলে কিতাব। কিন্তু তিন খোদায় বিশ্বাস, হযরত ঈসা (আ.)-এর খোদা হওয়ার ধারণা, নাবুওয়াত ও রিসালাতে মোহাম্মাদিয়ার ওপর অস্বীকৃতি ও অবিশ্বাস এবং অন্যান্য কুফরী ও শেরেকি আকীদার কারণে তারা কাফির ও মুশরিক বলে গণ্য।

সুতরাং যারা তাদেরকে অথবা ইহুদীদেরকে সত্য ধর্মাবলম্বী বলে বিশ্বাস করে অথবা তাদের জান্নাতী হওয়ার বা জাহান্নামী না হওয়ার আকীদা পোষণ করে তারাও কাফির এবং ইসলামের গণ্ডি হতে বহির্ভূত বলে গণ্য হবে। নাসারাও ইয়াহুদীরা আসমানী কিতাব তাওরাত, যাবুর ও ইঞ্জিলে যথেষ্ট পরিমাণে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও বিকৃতি সাধন করেছে। বর্তমানে তাওরাত, যাবুর ও ইঞ্জিল নামে যে কিতাব পাওয়া যায়, তা প্রকৃত আসমানী কিতাব নয়। বরং এগুলো বিকৃত ও পরিবর্তিত। (তথ্য সূত্র : ১, আল আদইয়ান ওয়াল ফিরাক : ৩০-৩১। ২. আল আকিদাতুল হানাফিয়্যাহ : ১৪১-১৪২। ৩. আল ফছল ফিল মিলাল : ১/৪৪, ৬৪, ২৪১)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Ruchi ১২ নভেম্বর, ২০২২, ৮:১০ এএম says : 0
নাসারা কি chrestian?
Total Reply(0)
হাসান সোহাগ ৯ জুন, ২০২১, ৩:৩৭ এএম says : 0
বিষয়টি সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা পেলাম
Total Reply(0)
Mahabub Islam ৯ জুন, ২০২১, ৭:৪৪ এএম says : 0
লেখক এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী সাহেব ও দৈনিক ইনকিলাবকে অসংখ্য মোবারকবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
বাশীরুদ্দীন আদনান ৯ জুন, ২০২১, ৭:৪৬ এএম says : 0
আমাদেরকে একমাত্র আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে হবে। তার নিয়মের কোন পরিবর্তন করা ঠিক হবে না। পরিবর্তন করলেই আমরা পথ হারা হয়ে যাবো
Total Reply(0)
মমতাজ আহমেদ ৯ জুন, ২০২১, ৭:৫৩ এএম says : 0
কোরআনের আলোকে তথ্যভিত্তিক এই লেখাটির মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারলাম। কিছু বিষয় নিয়ে কনফিউজ ছিলাম সেগুলো ক্লিয়ার হলো
Total Reply(0)
নিয়ামুল ৯ জুন, ২০২১, ৭:৫৪ এএম says : 0
দৈনিক ইনকিলাবের এই লেখাগুলো নিয়মিত পড়ি। এর মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে অনেক স্পষ্ট ধারণা পাই
Total Reply(0)
তফসির আলম ৯ জুন, ২০২১, ৭:৫৪ এএম says : 0
আল্লাহ লেখক ও দৈনিক ইনকিলাব সংশিল্ষ্টদেরকে উত্তম জাযাহ প্রদান করুক।
Total Reply(0)
Md: abir Yasir ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৪:৩৮ পিএম says : 0
Very good
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন