আরবি ভাষায়, ভূমিকম্পকে ‘যালযালাহ’ বলা হয়। ‘যালযালাহ’ শব্দটির ব্যবহার আল কোরআন ও হাদীসে লক্ষ্য করা যায়। এতে প্রতীয়মান হয় যে, ভূমিকম্প একটি সত্য ব্যাপার।
এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। গভীর মনোযোগের সাথে কোরআনুলন কারীম অধ্যয়ন করলে দেখা যায় যে, আল কোরআনের ৯৯ নং সূরাটির নাম ‘আয যিলযাল’। অর্থ ভূকম্পন। ইরশাদ হয়েছে : ‘পৃথিবী যখন তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে।’ (সূরা যিলযাল : আয়াত-১)। এই আয়াতে প্রথম শিংগা ফুৎকারের পূর্ববর্তী অবস্থা বোঝানো হয়েছে নাকি দ্বিতীয় ফুৎকারের পরবর্তী ভূকম্প বোঝানো হয়েছে, এ বিষয়ে মতভেদ আছে। প্রথম ফুৎকারের পরবর্তী ভূকম্পনে মৃতরা জীবিত হয়ে কবর থেকে উত্থিত হবে। তবে এ পর্যায়ে দ্বিতীয় ভূকম্পন বোঝানোর অভিমতই প্রবল। কেননা, এরপর কেয়ামতের অবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আল কোরআনের ২২ নং সূরা হজ্জের প্রথম আয়াতে ‘যালযালাহ’ শব্দটির ব্যবহার হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : ‘এ লোক সকল? তোমাদের পরওয়ারদিগারকে ভয় কর। নিশ্চয়ই কেয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার।’ এতে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, এই ভূকম্পন কেয়ামতের পূর্বে অথবা পরেও হতে পারে। ভূকম্পন হওয়া নিশ্চিত।
আল কোরআনের ৩৩ নং সূরা আল আহযাবের ১১ নং আয়াতে ‘যালযালাহ’ বা ভূকম্পনের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : ‘সে সময়ে মুমিনগণ পরীক্ষায় নিপতিত হয়েছিল এবং ভীষণভাবে প্রকম্পিত হচ্ছিল’। (সূরা আহযাব : আয়াত-১১)। এই আয়াতে কারীমার আলোকে বুঝা যায় যে, ভূকম্পন সত্য।
আল কোরআনের ২ নং সূরা বাক্বারাহ-এর ২১৪ নং আয়াতেও যালযালাহ বা ভূকম্পনের আলোচনা এসেছে। ইরশাদ হয়েছে : ‘(হে বিশ্বাসীরা) তোমরা কি মনে করেছ যে, এমনিতেই বেহেশতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমরা এখনও তোমাদের পূর্ববর্তীদের অবস্থার মধ্যে পড়নি। বিপদ ও দুঃখ তাদের স্পর্শ করেছিল এবং তারা এত ভীত ও কম্পিত হয়েছিল যে রাসূল ও বিশ্বাসীরা বলে উঠেছিল আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? সতর্ক হও, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটবর্তী।’ এই আয়াতেও তীব্র ভূকম্পনের বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে।
ভূকম্পন বা ভূমিকম্প আল্লাহপাকের কুদরতে কামেলার একটি বিশেষ নিদর্শন। এই পৃথিবীর বৈচিত্রময় অবস্থা অবলোকন করে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। এই পৃথিবীর বুকে ভূমিকম্প জনিত কারণে বহু অঞ্চল, বহু জাতি চির বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যেগুলোর ধ্বংসাবশেষ আজও এ কথারই সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। মোট কথা, ভূমিকম্প আল্লাহর আয়াত সমূহের মধ্যে একটি আয়াত তা’ অনায়াসে স্বীকার করে নেয়া যায়। তবে স্বভাবতই মনের কোণে এই প্রশ্নের উদয় হয় যে, ভূমিকম্পের আযাব কেন আসে? এর উত্তর অত্যন্ত সহজ।
যখন পৃথিবীর বাসিন্দা মানুষ পাপাচার, অন্যায় ও অত্যাচারে নিমজ্জিত হয়ে যায় এবং তাদের ওপর আযাব আপতিত হওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়ে তখন তাদের পাপের মাত্রা অনুসারে কখনো কখনো আল্লাহপাক ভূমিকমম্পের আযাব নাযিল করেন। বস্তুত : এই পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে, এর জ¦লন্ত সাক্ষীই হলো ভূমিকম্প। সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মনোহরা ধরনী ধ্বংসের হাত থেকে রেহাই পাবে নাÑ এ বার্তাটিই দিয়ে যায় ভূমিকম্প।
পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) ‘যালযালাহ’ বা ভূমিকম্পের কথা বলে গেছেন। তিনি বলেছেন : ‘দাজ্জাল মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে না। ফিরিশতাদের প্রহরার কারণে সেখান থেকে বিফল মনোরথ হয়ে মদীনা মনোয়ারার দিকে ধাবিত হবে। মদীনা শরীফের চতুরদিকে ফিরিশতাদের প্রহরাবেষ্টনী থাকায় তাতেও প্রবেশ করতে পারবে না। সে সময় মদীনাতে তিনবার প্রবল ভূকম্পন অনুভূত হবে। দুর্বল ঈমানদারগণ ভূকম্পনে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে মদীনা হতে বের হয়ে যাবে। এবং দাজ্জালের ফাঁদে পড়ে ঈমানহীন হয়ে পড়বে।’
হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ইস্পাহানের সত্তর হাজার ইয়াহুদী অধিবাসী দাজ্জালের অনুসারী হয়ে তার পিছে পিছে অনুগামী হয়ে চলতে থাকবে। (সহীহ মুসলিম : ২/৪০৫)। যাই হোক উপরোল্লিখিত আলোচনার নিরিখে একথা স্পষ্টতই বলা যায় যে, ভূমিকম্প আল্লাহপাকের একটি নির্দশন। এই নিদর্শন যাদের ওপর বাস্তবায়িত হয় তাদের রক্ষা নেই। আল্লাহপাক আমাদেরকে ভূমিকম্পের করাল ছোবল হতে রক্ষা করুন, আমীন!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন