দীনি ইলম অন্বেষী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা করাতে দ্বিগুণ সওয়াব রয়েছে। ১. গরিবের সাহায্য করা। ২. দীনি ইলমের প্রসার। এসব শিক্ষার্থীকে যদি মাদরাসায় পড়ার সুযোগ দেয়া না যেত তাহলে ভাগ্য তাদের সমাজিবিরোধী শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারত। এ সুনাগরিকটিই ধার্মিক ও সৎ না হয়ে হতে পারত অপরাধজগতের কেউ। মাদরাসার ফান্ড নিয়েও ইসলামবিদ্বেষীদের অপপ্রচার চালাতে দেখা যায়।
মাদরাসার নামে দেশ বিদেশ থেকে টাকা আসে, সেসব নাকি পরিচালকরা তসরুপ করেন। এর হিসাব নিকাশ রাখা, অডিট করানো, কমিটির অনুমোদন ও জনসমক্ষে বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ এর স্বাভাবিক নিয়ম। যেসব মিডিয়া বা আইনশৃঙ্খলা কর্মকর্তা মাদরাসা নিয়ে উচ্চকণ্ঠ তারা কিন্তু ভিন্ন ধর্মের প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়, শিক্ষাঙ্গন নিয়ে নিশ্চুপ। তাদের কেউ হাজার হাজার এনজিও সম্পর্কে কথা বলে না।
বিদেশ থেকে টাকা আনাই যাদের কাজ এমন এনজিওদের আয় ব্যয় এবং কর্তাব্যক্তিদের বিলাসিতা নিয়ে তারা নীরব। মাদরাসা কোনো এনজিও নয়। তাদের এনজিও ব্যুরোর লাইসেন্স না থাকায় তারা বিদেশ থেকে অর্থ সাহায্য আনতে পারে না। তাদের জন্য প্রবাসীরা কিছু দান সাহায্য পাঠালেও তা দেশীয় আত্মীয় স্বজনের কাছে পাঠানো টাকা থেকে মাদরাসায় দিয়ে থাকে। যার ব্যয়ের হিসাব স্থানীয় দাতারা প্রতি বছর বুঝে নিতে পারেন।
নাস্তিক মুরতাদপন্থী কিছু লোক মাদরাসাবিরোধী প্রচারণার পাশাপাশি সমাজে বিরূপ বার্তা ও ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টা করে। বলে মাদরসায় সাহায্য সহযোগিতা করবেন না। হিফজখানা এতিমখানায় দান করবেন না। এরা মূলত এ দেশ থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের উৎখাত করতে চায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহর নবী (সা.) এর নিকট অবস্থানকারী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে সেসময়কার ধর্মবিদ্বেষীদের উক্তি মহান আল্লাহ আমাদের শিক্ষার জন্য উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন, তারা বলেÑ ‘রসূলের সঙ্গী সাথীদের জন্য অর্থ ব্যয় করো না, শেষে তারা এমনিতেই সরে পড়বে।’ আসমান ও যমীনের ধন ভান্ডার তো আল্লাহরই, কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না। (সূরা মুনাফিকুন : ৭)।
বাংলাদেশের মুসলমানদের ধর্মপ্রাণ সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার পেছনে মাদরাসার ভূমিকা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা যে অনুধাবন করতে পারে সেই বুঝবে মাদরাসার কী প্রয়োজনীয়তা। যারা এ দেশ থেকে ইসলাম ও ঈমানের চিহ্ন মুছে দিতে চায় তারাই মাদরাসার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ঘৃণা ছড়াতে চেষ্টা করে।
তাদের উচিত মাদরাসাগুলোর ভেতরগত অবস্থা সম্পর্কে জানা। সরকারি মঞ্জুরি ও এমপিওভুক্তি ছাড়া মাদরাসা কীভাবে চলে? শিক্ষার্থীরা কত কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে পড়াশোনা করে। শিক্ষকরা কত কম বেতনে, তাও মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে, কী ধরনের কষ্ট সহ্য করে কোরআন সুন্নাহর বাধ্যতামূলক শিক্ষাগুলো শিক্ষার্থী ও জনগণের মধ্যে বিতরণ করেন। এরপর যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে তা নিতান্ত ব্যতিক্রম ঘটনা। এর তদন্ত ও বিচার হওয়া চাই। তবে যেভাবে অপপ্রচার চালানো হয়, এর উদ্দেশ্য যে ভালো নয়, তা সকলকে বুঝতে হবে। অন্তত বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে অনিয়ম ও দুর্নীতির যে সয়লাব চলছে সে তুলনা মসজিদ মাদরাসা ও ধর্মীয় অঙ্গনকে দুর্নীতিমুক্ত বললেও ভুল হবে না।
পাশ্চাত্যে ফান্ড রেইজিং বলতে একটি কথা প্রচলিত আছে। চ্যারিটির প্রচলনও পশ্চিমা জগতেই বেশি। ‘দশের লাঠি একের বোঝা’ হিসাবে সেখানে বড় কোনো কাজের ব্যয় বহনের জন্য চাঁদা তোলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত রীতিমতো চাঁদা তুলে নির্বাচনের ব্যয় বহন করেন। বড় বড় নেতা ও সেলিব্রেটিরা চাঁদা তুলে মানবতার সেবা করেন। সেখানে চাঁদা জমা করার ক্ষেত্রে কমিশনও থাকে।
এটাকে তো তারা মন্দ বলে না। সে দেশের মিডিয়া ও সুশীলসমাজ তো এর বিরুদ্ধে কথা বলে না। আমাদের বাংলাদেশের এক শ্রেণির আঁতেল, সুশীল ও মিডিয়া শুধুমাত্র মাদরাসা ও আলেম সমাজের বিরুদ্ধে দান, ভিক্ষা, চাঁদা ইত্যাদির প্রোপাগাণ্ডা চালাতে পছন্দ করে। অথচ নানা অপকর্মে অন্যায় চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে তাদের কোনো কথা নেই। কথা নেই চরম লুটপাট ও সর্বগ্রাসী দুর্নীতির বিরুদ্ধে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন