শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

কোরআনের আয়াতের মর্যাদা যেভাবে ভূলুন্ঠিত

মুন্সি আব্দুল কাদির | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

পূব প্রকাশিতের পর

যারা কোরআনকে ভালবাসে। কোরআনের বিধান মেনে চলার চেষ্টা করে। কোরআনের বিধান প্রতিষ্ঠার জন্যও প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু আশানুরূপ সেই চেষ্টা সফল হয় না। ব্যবসায়িক উন্নতি হচ্ছে হয়তো, বিধান বাস্তবায়ন ঠিক ঐ ভাবে হচ্ছে না। এটা খুব একটা চিন্তার বিষয়। এটি হতেই পারে। নূহ আলাইহিস সালাম ৯৫০ বৎসব দাওয়াত দিয়ে আল্লাহর বিধানের রাজ কায়েম করতে পারেন নি। ঈসা আলাইহিস সালাম পারেন নি। আল্লাহ তাঁকে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। অনেক নবী আলাইহিমুস সালাম আছেন, যারা পরকালে একজন দুইজন সহচর নিয়ে হাশরে উঠবেন।

আমার চিন্তা একটু ভিন্ন জায়গায়, ভিন্ মাত্রায়। কল্যাণের আশায় চিন্তা করতে, ভাবতে কারো কোন দোষ নেই। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কেউ যদি কোন বিষয় নিয়ে ইজতেহাদ করে, চিন্তা গবেষনা করে, সে যদি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছতে পারে তবে দুটি সওয়াব আর যদি ভুল সিদ্ধান্তে পৌছে তবে একটি সওয়াব পাবে।

অনেক ইসলামী সংঘঠন, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের মনোগ্রামে কোরআনের আয়াত অংকিত করেন। বেশির ভাগ পোষ্টার লিফলেট, দাওয়াত পত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লিখা হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কেউ ওয়ায়তাসিমু বিহাবলিল্লাহি জামিয়া, কেউ আন আকিমুদ্দীন, কেউ ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক, কেই আহাল্লাল্লাহু বাইয়া ওয়া হাররামার রিবা ইত্যাদি লিখে থাকেন। যারা লিখেন অবশ্যই বরকতের আশায় লিখে থাকেন। এখানে কোন সন্দেহ করার সুযোগ নেই। কোরআনকে ভালবেসে লিখেন এখানেও কোন সন্দেহ নেই। যে বিষয়টি নিয়ে আয়াত লিখেন এই বিষটির প্রতিষ্ঠা চান এতেও সন্দেহ নেই। চিন্তা হল মানুষ যা প্রতিষ্ঠা করতে চায় তা মাথায় রাখে, বক্ষে ধারন করে। মাথা আর বক্ষের লালিত জিনিসটি জ্ঞাতে অজ্ঞাতে যখন পায়ে চলে যায়। তখন যতই চাওয়া হোক এটা আর প্রতিষ্ঠা করা যায় না। তার প্রতি আবেগ থাকলেও ভালবাসা আর দরদ পূর্ণ আবেগ কাজ করে না। তার অমর্যাদায় চোখ থেকে কষ্টের লোনা পানি প্রবাহিত হয় না। সব যেন দায়সারা গোছের হয়ে যায়।

কোরআনকে ভালবেসে কোরআনের আয়াত সম্বলিত মনোগ্রাম থাকতেই পারে। সুলাইমান আলাইহিস সালাম যখন রাণী বিলকিস কে চিঠি লিখেন। তখন বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাহ যখন কোন চিঠি প্রেরন করতেন। তাও বিসল্লিাহ দিয়েই শুরু করতেন। কিন্তু যত্রতত্র ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন জাগে।
আমরা যেভাবে আয়াতকে ব্যবহার করছি। আমাদের অজ্ঞাতে কত মানুষের পায়ের তলায় এমনকি আমাদের নিজেদের পায়ের তলায় কোরআনের আয়াত পিষ্ট হচ্ছে। কত বার ফুটবলের মত কোরআনের আয়াত লাথি খাচ্ছে। কত আয়াতে কারীমা ময়লাব বাগাড়ে নাপাকীর সাথে লুটুপুটি খাচ্ছে। অফিস বা বাসার ময়লার বালতিতে ছেড়া কাগজটি রাখছি, যাতে আয়াতে কারীমরা লিখা রয়েছে। অথবা আয়াত সম্বলিত প্রয়োজনীয় কাগজের বাল্ডিলটি পায়ের কাছে রাখছি। সে লাথি খাচ্ছে। আবার এই আয়তটিই আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সারা দিন এই নিয়ে চিন্তা ফিরির, পরিশ্রম। আমরা কি সত্যিই ভাবতে পারি! এর ফলে কি হচ্ছে কোরআনের ভালবাসার স্থান পেট আর পদের ভালবাসায় দখল করেছে। সব খানে এখন দুনিয়াবী স্বার্থ প্রাধান্য পাচ্ছে। কোরআনকে রাখছি তার বাহন হিসাবে। সব মুসলমানের কি এ নিয়ে ভাবা উচিত নয়। বিশেষ করে যারা আলেম সমাজ, যারা আমাদের দ্বীনের রাহবার এ নিয়ে ভাবা এবং উম্মাহকে নির্দেশনা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করি। এই একটু অসতর্কতায় কোরআনের মান আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাচেছ। কোরাআনের প্রতি হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা অন্তর থেকে উঠে যাচ্ছে। কোরআনের রাজ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। অনেক কাজ অনেক আমল করছি। কিন্তু ঝুড়ির তলা ফুটো হওয়ার কারনে সারা জীবনেও ঝুড়ি ভরছে না। আমলের তাছির জীবনের উপর তেমন প্রভাব ফেলছে না। সারা দিন, সপ্তাহ, মাস, বৎসর কাজ করেও মনে হয় শূন্যই রয়ে গেলাম। কাজের কোন বরকত পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এই ছোট বিষয়টাকে একটু বড় করে দেখার চেষ্টা করি। আমার দ্বারা যেন আয়াতে কারীমা বাহ্যিক ভাবে অপমানিত অপদস্ত না হয় একটু খেয়াল রাখি। তবে আশা করা যায়, চিন্তায়, কাজে, মননে গতি আসবে। রহমতের চাদরে ঢেকে যাবে আমার প্রতিটি কাজ। রহমতের শীতল পরশ অনুভব করব হৃদয় গহীনে। ফতোয়া আর মন্দ বলা নয়, নিজে নিজের কাজের মূল্যায়ন করি, নিজের কাজ নিজের ভাবনায় আনি। আসুন সকলে সকলকে নিয়ে কল্যাণের নিয়তে চিন্তা করি। কোরআনের আয়াতের স্থান বুকে, পায়ে নয়। কখনও ভুলে পায়ে চলে গেলে মাওলার কাছে মাফ চেয়ে নেব। আর ইচ্ছাকৃত আর অবহেলায় এটি ঘটলে দুজাহানে হিরা মুতি নয় ছাই জুটবে কপালে। অন্য দিকে যখন এই অবস্থা ব্যপকতর হয়ে যায় তখন চিন্তা থেকে এই বিষয়টি হারিয়ে যায়। হারিয়ে গেছেও মনে হয়।

পুরো কোরআন আল্লাহর কালাম বা বাণী। প্রত্যেকটি আয়াত আল্লাহর কালাম। আমরা যদি পুরো কোরআন বা আয়াতের নির্দেশকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তাহলে ঐ আয়াতে মর্যাদার দিকেও আমাদের খেয়াল দেয়া উচিত। ঐ আয়াতের অবমাননা করে, কখনই ঐ আয়াত সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে না। ঐ আয়াতের বরকতে হয়তো দুনিয়ার কিছু চাকচিক্য পেতে পারি। কিন্তু সমূহ কল্যান ভাগ্যে জুটবে কি না সন্দেহ। পৃরো পৃথিবী বিক্রয় করলে কি মাওলার একটি কালামের মূল্য হবে? কোরআনের আয়াতকে এমন ভাবে রাখি যেন কখনও পায়ে না যায়। ময়লার বাগারে না যায়। ঘরের ময়লার ডাস্টবিনটাতে না যায়।

আমরা আরও একটু চিন্তা করতে পারি। কোন নাস্তিক, মুরতাদ যদি কোরআনের কোন আয়াতের অবমাননা করে। আমরা সকলে প্রতিবাদ করি। মিছিল মিটিংয়ে সারা পৃথিবী উত্তাল হয়ে উঠে। হওয়াও উচিত। কোরআনের ইজ্জতের জন্য জীবন দিতেও পিছপা হই না। জুলুম নির্যাতনকে পুরোয়া করি না। কিন্তু এই আমার দ্বারা অনেক যায়গায় কোরআনের আয়াতের বাহ্যিক অবমাননা হয়। বিষয়টি ভাবার প্রয়োজন। বাস্তব জীবনের অনেক ক্ষেত্রে কোরআনের আমল করতে পারি না। অন্তত কোরআনের কোন আয়াত যেন আমার দ্বারা অপদস্ত না হয়। পরিশেষে মাওলানা মহিউদ্দীন খান রাহঃ সংকলিত খাজাইনুল ইরফান বই থেকে একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। হযরত বিশরে হাফি রাহঃ একদিন বিসমিল্লাহ লিখিত এক টুকরো কাগজ কুড়িয়ে পেলেন, সেটি যত্নের সাথে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে পকেটে থাকা টাকা খরচ করে সুগন্ধি কিনলেন এবং ঐ টুকরোটিতে লাগালেন। সে রাতেই বিশরে হাফি রাহঃ স্বপ্নে দেখলেন, আল্লাহ তায়ালা তাকে বলছেন, হে বিশর, তুমি আমার নামের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতঃ সেটিকে যেভাবে সুগন্ধ মন্ডিত করেছ, তেমনি আমিও তোমার নাম দুনিয়া ও আখিরাতে উজ্জ্বল ও সুগন্ধমন্ডিত করে দেব।
লেখক : গবেষক, ইসলামী চিন্তাবিদ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন