শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

গাছ লাগান

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

ইসলাম গাছ লাগাতে উৎসাহিতই করেনি, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করেছে। এ ব্যাপারে মহানবী (সা.) এর একটি হাদিসই যথেষ্ট বলে গণ্য হতে পারে, যেখানে তিনি বলেছেন: যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে, কেয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা রোপণ করা যায়, তবে সেই চারাটি রোপণ করবে। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৪৭৯)।
এই হাদিসে মানবজীবনের জন্য গাছ কতটা প্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য, সেটা বিশেষভাবে প্রতীয়মান হয়। যদি নিশ্চিতই জানা যায় যে, কেয়ামত এসে গেছে, তখন কারোরই কোনো কিছু করায় উৎসাহ থাকার কথা না। মানবজীবনের যখন চিরদিনের জন্য ইতি বা সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে হবে, তখন সব কিছুই অপ্রয়োজনীয় ও মিছা হয়ে যাবে। তখন কেয়ামতই সবদিক আচ্ছন্ন করে ফেলবে। মানুষ হতবিহবল ও বেদিশা হয়ে পড়বে। সেই অবস্থায়ও রাসূল (সা.)-এর নির্দেশ: ‘হাতের চারাটি রোপণ করবে’।

গাছ আমাদের পরিবেশের অনিবার্য অনুসঙ্গী ও অংশ। আমরা আমাদের চরদিকে যা কিছু দেখি, যেমন, গাছপালা, তৃণলতা, পাহাড়-পর্বত, নদী-সমুদ্র, জীব-জন্তু, পাখ-পাখালি ইত্যাদি সবকিছুর সমষ্টিই পরিবেশ। পরিবেশের উপাদান হিসেবে গাছের কথা বলে শেষ করা যাবে না। মানুষ অক্সিজেন ছাড়া বাঁচতে পারে না। একেকটি গাছ অক্সিজেনের একেকটি কারখানা। গাছ না থাকলে মানুষের পাঁচ মিনিট বেঁচে থাকাও সম্ভব নয়। মানুষ যে কার্বনডাই অক্সাইড ত্যাগ করে বা অন্যান্যভাবে যে কার্বনডাই অক্সাইড পরিবেশে জমা হয়, গাছ তা গ্রহণ করে পরিবেশ পরিশুদ্ধ করে। গাছ ছায়া দেয়, আশ্রয় দেয়, ঘর ও আসবাবের কাঠ দেয়, রান্নার উপকরণ দেয়, ফল দেয়, ফুল দেয়, ওষুধের উপাদান দেয়, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেয়। বন-জঙ্গল বন্যপ্রাণী ও পাখির নিরাপদ খাদ্য ও আশ্রয়স্থল। গাছ ভূমিক্ষয় রোধ করে এবং ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে প্রাণীকূলকে সুরক্ষা দেয়। গাছের কাছে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীকূলের অশেষ ঋণ। গাছ ছাড়া পৃথিবী সহজ, সতেজ ও প্রাণময় থাকা সম্ভব নয়।

গাছের এই ভূমিকা ও অবদানের কথা স্মরণ করলে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর গাছ লাগানোর নির্দেশের তাৎপর্য ও গভীরতা সম্যকে উপলব্ধি করা যায়। এখন বর্ষাকাল, গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। এমন এক সময় ছিল, যখন আমাদের দেশে গাছ লাগানোর কথা কেউ চিন্তাও করেনি। দেশে সবুজ ও শ্যামলের সমারোহ এত বেশি ছিল যে, এই সবুজ শ্যামলের সঙ্গে দেশ-পরিচিতি একাকার হয়ে গিয়েছিল। বলা হতো, ‘সবুজ বাংলা’, ‘শ্যামল-বাংলা’, ‘সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশ।’

এখন এসব পরিচয় ফিকে হয়ে গেছে। কাম্য পরিবেশের জন্য একটি দেশের মোট আয়তনের অন্তত ২৫ শতাংশে গাছ বা বন থাকা প্রয়োজন। অথচ, আমাদের আছে অর্ধেকের সামান্য বেশি। এতে পরিবেশের ভারসাম্যের ক্রমাগত অবনতি ঘটছে। বৃক্ষ নিধন এবং বনভূমি উজাড় হচ্ছে নির্বিচারে। এক শ্রেণির বৃক্ষচোর ও বনখেকো গাছ ও বনভূমি ধ্বংস করছে লোভ ও লাভের বশবর্তী হয়ে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে পরিবেশের ক্ষতি ও বিপর্যয় অবধারিত। প্রতি বছর সরকারিভাবে বৃক্ষরোপণ অভিযান পরিচালিত হয়। এটা অবশ্যই একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু ইতোমধ্যেই তা লোক দেখানো বা আনুষ্ঠানিকতা প্রদর্শনের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

বৃক্ষরোপণ পরিবেশের ভারসাম্য সুরক্ষার জন্য আবশ্যক। তেমনি অর্থনৈতিক কল্যাণের জন্যও জরুরি। বৃক্ষ রোপণের বেশুমার ফজিলত যেমন দুনিয়াতে আছে, তেমনি আখেরাতেও আছে। রাসূল (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষ রোপণ করে তার বিনিময়ে তাকে ওই বৃক্ষের ফলের সমপরিমাণ প্রতিদান আল্লাহপাক দান করবেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ১২৯০২)। অহেতুক-অকারণ বৃক্ষনিধনকে ইসলাম বারন করেছে। যুদ্ধের সময় প্রতিপক্ষের গাছপালা ও শস্যক্ষেত্র ধ্বংস করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন রাসূল (সা.)। বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা ও রাসূল (সা.)-এর বৃক্ষপ্র্রীতির কথা আমলে নিয়ে আসুন, আমরা সবাই গাছ লাগাই, গাছের যত্ন করি এবং যতটা সম্ভব গাছ কাটা থেকে বিরত থাকি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Mizan Rahman ১৯ জুন, ২০২১, ২:২৯ এএম says : 0
স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা জরুরি। আর ভারসাম্যপূর্ণ ও দূষণমুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা বৃক্ষের
Total Reply(0)
মুক্তিকামী জনতা ১৯ জুন, ২০২১, ২:২৯ এএম says : 0
বৃক্ষ শুধু পরিবেশ রক্ষার জন্যই নয়; বরং ধর্মীয় কারণেও মানুষের বৃক্ষরোপণ করা চাই। মহানবী (সা.) পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণ ও তা পরিচর্যার কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন হাদিসে উৎসাহ ও নির্দেশনা দিয়েছেন।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ১৯ জুন, ২০২১, ২:৩০ এএম says : 0
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর মোট উদ্ভিদ প্রজাতির ভেতরকার ২৫ শতাংশই বৃক্ষ। বৃক্ষ ছাড়া প্রাকৃতিক পরিবেশের কল্পনা করা অবান্তর।
Total Reply(0)
সোয়েব আহমেদ ১৯ জুন, ২০২১, ২:৩০ এএম says : 0
ইসলাম সঙ্গত কারণেই পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণে জনসচেতনতা তৈরিতে উদসাহ ও নির্দেশনা দিয়েছে
Total Reply(0)
রেজাউল করিম ১৯ জুন, ২০২১, ২:৩০ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণ হিসেবে ফলবান বৃক্ষরাজি ও সবুজ-শ্যামল সৃষ্টি করেছেন। বনভূমির মাধ্যমে পৃথিবীকে সুশোভিত ও অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন। গাছপালার মাধ্যমে ভূমণ্ডল ও পরিবেশ-প্রাকৃতিক ভারসাম্য সংরক্ষণের শিক্ষা দিয়েছেন।
Total Reply(0)
সততাই উৎকৃষ্ট পন্থা ১৯ জুন, ২০২১, ২:৩১ এএম says : 0
বৃক্ষরাজি যে কত বড় নিয়ামত, পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতের মাধ্যমে তা প্রতীয়মান হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—‘তারা কি লক্ষ করে না, আমি ঊষর ভূমির ওপর পানি প্রবাহিত করে তার সাহায্যে উদগত করি শস্য, যা থেকে তাদের গবাদি পশু এবং তারা নিজেরা আহার গ্রহণ করে। ’ (সুরা সাজদা, আয়াত: ২৭)
Total Reply(0)
বদরুল সজিব ১৯ জুন, ২০২১, ২:৩১ এএম says : 0
হাদিসে এসেছে, ‘যদি কোনো মুসলমান একটি বৃক্ষ রোপণ করে অথবা কোনো শস্য উৎপাদন করে এবং তা থেকে কোনো মানুষ কিংবা পাখি অথবা পশু ভক্ষণ করে, তবে তা উৎপাদনকারীর জন্য সদকা (দান) স্বরূপ গণ্য হবে। ’ (বুখারি, হাদিস: ২৩২০, মুসলিম, হাদিস: ১৫৬৩/১২)
Total Reply(0)
রুকাইয়া খাতুন ১৯ জুন, ২০২১, ২:৩১ এএম says : 0
গাছ-বৃক্ষ প্রকৃতি ও পরিবেশের ‘বন্ধু’। তাই নির্বিচারে গাছ না কেটে প্রচুর বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
Total Reply(0)
হাফেজ মোঃ আরিফ হাসান ১৯ জুন, ২০২১, ৯:৫৭ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ গতকাল এই বিষয়ে জুমার নামাজে বিস্তারিত আলোচনা করেছি যাক লেখকের সাথে আমি অধমের আলোচনা মিলে গিয়েছে । তবে আমি গাছ লাগানোর ফজিলত এবং বিনা কারণে গাছ কাটার অপরাধ / গোনাহ সম্পর্কে আলোচনা করেছি
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন