নিজের জায়গা-জমি থাকতেও গৃহহারা হওয়ার পথে ১০৫ বছরের বৃদ্ধা ফুলজান নেছা। তার বিধবা মেয়ে মোমেজা ও মেয়ের ভাগিনার সাথে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে থাকা বৃদ্ধা ফুলজান বেওয়া কোন মতে জীবন-যাপন করছে। অতিশয় এই বৃদ্ধার দেখভাল করছে তার বোন বৃদ্ধা বিধবা মোমেজা ও তার বোনের ছেলে ইমরান। অভিভাবক না থাকায় মোমেজার জমি দেখভাল করার কেউ না থাকায় যে যৎ সামান্য জায়গা জমি রয়েছে তা দখল করে নিয়ে চলেছে প্রতিবেশীরা। মাথা গোজার সামান্ন এই জমি হারিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া ফুলজানকে নিয়ে তার মেয়ে। অসহায় মোমেজার কোন অভিভাবক না থাকায় শুধুমাত্র রক্ষণা-বেক্ষনের অভাবে তার যৎ-সামান্য জায়গাজমিও সে রক্ষা করতে পারছে না। ফলে বসতবাড়ী সংলগ্ন তার ক্রয়কৃত জায়গাজমি অনায়াসেই বেদখল হয়ে যাচ্ছে। খাজনা খারিজ না করতে পারায় খাস হিসাবে ওই জমিতেই সরকার ঘর তৈরী করে অসহায় মানুষদের ঠাই করে দিচ্ছে। অথচ নিজ জমি থাকতেও নিঃস্ব হয়ে পরছে বিধবা নিঃসন্তান মোমেজা । তাকে সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে না আসায় সে দেশের সরকার প্রধানের আশু-হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। অসহায় পরিবার অতিশয় দয়ালু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সু-দৃষ্টি কামনা করে বলে যে সরকার অসহায়-দুঃখী মানুষের মুুখে হাঁসি ফোঁটানো লক্ষ্যে বাড়ি, আবাসন, গুচ্ছগ্রাম নির্মান, জমি আছে বাড়ী নেই তাদেরকে বাড়ী দিচ্ছে সরকারি জমিতে নতুন বাড়ী-ঘর নির্মান করে দিচ্ছে। তাদের নিজস্ব সম্পত্তি যৎসামান্ন জমিতে একটি ঘর করে দিলেই তারা মাথা গোজার ঠাই পাবে।
হৃদয় বিদারক এই ঘটনাটি রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার গোপীনাথপুর মৌজার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের। বিধবা ও নিঃসন্তান মমেজা খাতুন বাড়ী-ঘর নির্মানের জন্য পাশ্ববর্তী শ্রী জ্যোতিশ চন্দ্র রায়ের নিকট হতে ১৯৯৩ সালে .৪৩ শতক জমি ক্রয় করে। কবলা দলিল নম্বর- ৬২৮৮, তারিখ- ১৬/০৮/১৯৯৩ইং, খতিয়ান নং- ৩৫৮, তৌজি নং- ২০১,দাগ নং- ৩৮৭৬, জমির পরিমান- .৫৮ শতক। উক্ত জমি ক্রয় করার পূর্বে উহার একাংশে ঘর নির্মান করে বসবাস করে মমেজা। বসবাসকৃত জমি সি এস ও এস এ রেকর্ডিও মালিক রতেœশ্বর বর্মন রায় পুত্র জমি বিক্রেতা জ্যোতিশ চন্দ্র রায়। জমি ক্রয় করার পর থেকেই স্বামীর অসুস্থতার কারনে এবং নিজ সন্তান ও অভিভাবক না থাকায় নিজ নামে খারিজ করা সম্ভব হয়নি জমিটি। ইতি মধ্যেই মমেজা খাতুনের স্বামী বাচ্চা মিঞা মৃত্যুবরণ করলে তিনি আরো অসহায় হয়ে পরেন। ইত্যাবসরে জমি জরিপ কার্যক্রম শুরু হলেও মমেজা খাতুনকে না জানিয়ে তার অগোচরেই ৩৪৭৬ দাগে সেই জমিটি খাস খতিয়ান কিভাবে করা হলো এটাই প্রশ্ন? অথচ উক্ত জমির সি এস ও এস এ রেকর্ডিও ভূক্ত মালিক রতেœশর রায়। জমির রেকর্ডিও সম্পত্তি কিভাবে খাস খতিয়ান অন্তর্ভূুক্ত করা হয় এটাই এখন বড় প্রশ্ন বিবেকবানদের কাছে। জমির মালিক পক্ষ খাস খতিয়ানের বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত নয়। বিধবা-নিঃসন্তান মমেজা খাতুনকে সেটেলমেন্ট, এসি ল্যান্ড, তহশিলদারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেহই দুঃখী পরিবারটিকে জানায়নি। এস এ রেকর্ড উক্ত জমি খাস হয়ে যাবে আর সেই জমিতে সরকারের পক্ষে বাড়ী নির্মান, আবাসন, গুচ্ছগ্রাম করে দখলে নিয়ে এটাকে রাম রাজত্ব ছাড়া কিছুই না বলে মমেজা খুব কষ্ট প্রকাশ করে এ প্রতিবেদককে জানান। বিধবা মমেজা খাতুন আদালতেও আশ্রয় নিয়েছেন। মাননীয় বদরগঞ্জ সহকারী জজ আদালত বিবাদী জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার, সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার ও জেলা প্রশাসক রংপুরকে বিবাদী করে একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং- ১০৮/২০২১। আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার কারণ দর্শনো নোটিশ ২১/০৩/২০২১ তারিখে আদালত কর্তৃক জারী করা হয়। এবং ১০ দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার আদেশ দেয়। আদালতৎতে মামলা থাকা সত্বেও স্থানীয় তহশীলদার ইউএনও এর নির্দেশে উক্ত জমিতে ৫টি ঘর নির্মান করে ৩টি ঘর হস্তান্তর করে। বিধবা মমেজা খাতুনের আর্তনাত শুনবার কোন পক্ষ না থাকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষন করে দখলকৃত জমি বিধবা মমেজা খাতুনকে ফেরত দেওয়ার আহবান জানান। বিধবা মহিলা মমেজা খাতুনের ১০৫ বছরের বৃদ্ধা মা ফুলজান নেছা ও তার বোনের সন্তান ইমরান হোসেনকে নিয়ে বসবাস করছে। স্বামী প্রায় ১৫ বছর আগে মৃত্যুবরণ করলেই সে বাড়ীতেই অবস্থান করছে তারা। মমেজা খাতুনের স্বামী বাচ্চা মিঞা ১৫ বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করে। তখন থেকেই ১০৫ বছরের বৃদ্ধা মা ও পালিত সন্তান ইমরান হোসেনকে নিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে খুবই কষ্টের মধ্যে। মমেজা খাতুনের আর্তনাত শুনার মতো দেখার কেউ না থাকয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কষন করে দখলকৃত জমি উদ্ধার চায়। ঘটনাটি ঘটছে এ ব্যাপারে রংপুর জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন