আজান ইসলামের তাৎপর্যমণ্ডিত প্রতীক। নামাজের জন্য আহ্বান করার ওহী নির্দেশিত কতিপয় বাক্য। আজানের আহকাম ও বরকত সম্পর্কে হুজুর (সা.)-এর বিভিন্ন হাদিস রয়েছে। হজরত মোয়াবিয়া (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘কেয়ামতের দিন মোয়াজ্জিন হবে সবচেয়ে দীর্ঘ গর্দান বিশিষ্ট। অর্থাৎ সবচেয়ে সম্মানিত এবং নৈকট্য লাভকারী।’ (মুসলিম)।
আজানের বরকত সম্পর্কে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হুজুর (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি সাওয়াব লাভের জন্য সাত বছর পর্যন্ত আজান দিয়েছে, তার জন্য দোজখ হতে মুক্তি লিখে দেয়া হয়েছে।’ (তিরমিজি)। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, হুজুর (সা.) বলেছেন, ‘ইমাম হচ্ছে জামিন (জিম্মাদার) এবং মোয়াজ্জিন আমিন। হে খোদা! তুমি ইমামদের সঠিক পথ প্রদর্শন করো এবং মোয়াজ্জিনদের ক্ষমা করো।’ (আবু দাউদ)।
কোরআন ও হাদিসে অসংখ্য স্থানে শয়তানের প্ররোচনা-প্রতারণার বিবরণ রয়েছে এবং সেগুলোতে আজানের ক্ষেত্রে শয়তানের পরাজিত ভূমিকার বিষয়টাও স্থান লাভ করেছে। আজানের শব্দ শুনে শয়তান দিশেহারা হয়ে কিভাবে পলায়ন করে, সে সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : ‘আজানের আওয়াজ শুনে শয়তান পিঠ ফিরিয়ে পলায়ন করতে থাকে, বায়ু নির্গত হতে থাকে। আজানের পর সে আবার প্রত্যাবর্তন করে। এরপর যখন ইকামত বলা হয়, আবার ফিরে আসে এবং নামাজীদের অন্তরে নানা কুমন্ত্রণা দিতে থাকে, যাতে নামাজী ভুলে যায়, সে কত রাকাত নামাজ পড়েছে এবং কী পড়েছে।’ (বোখারী মুসলিম)।
আজানের শব্দ শুনে শয়তানের পলায়ন করার কারণ এই যে, আজানের শব্দ শুনে সে এ কারণে পালাতে চায় যে, কেয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট তাকে যেন সাক্ষী দিতে না হয়। কেননা হুজুর (সা.) বলেছেন : ‘কেয়ামতের দিন জিন, মানব এবং জমিনের প্রতিটি বস্তু, যারাই আজানের শব্দ শুনবে, সবাই সাক্ষী হবে।’
মোহাদ্দেসীন ও উলামায়ে কেরামের বিভিন্ন বর্ণনা হতে জানা যায় যে, শয়তান ও তার লস্কর মানুষকে সত্যের পথ হতে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য সর্বদা ব্যস্ত এবং কুফর ও বাতিলে লিপ্ত রাখার জন্য সর্বপ্রকারের অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। কাফের মুশরেকের কথা বাদ দিয়ে মুসলমানের ক্ষেত্রে শয়তান এতই তৎপর থাকে যে, তাদের ইবাদত-বন্দেগীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে তার সর্বশক্তি নিয়োগ করে থাকে। তাদের নিদ্রা-শয়ন, ওজু-গোসল, নামাজ এবং নামাজের বাইরে এমন কি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সর্বাবস্থায় তাদের পেছনে লেগে থাকার বিষয় কোরআন ও হাদিস হতে জানা যায়।
হজরত মোজাহেদের বর্ণনা হতে জানা যায়, শয়তানের সাত ছেলের মধ্যে ‘লাকীস’ ও ‘ওয়ালহান’ নামাজীর ওজু ও নামাজে গোলমাল সৃষ্টির জন্য নিয়োজিত। অপর বর্ণনা অনুযায়ী, নামাজে সন্দেহের সৃষ্টির জন্য নিয়োজিত শয়তানের নাম ‘খিনজিব’। ক্বারীদের সর্দার হজরত ওবাই ইবনে কাব (রহ.) বলেন, হুজুর (সা.) বলেছেন : ‘ওজুর এক বিশেষ শয়তান আছে, তার নাম ওয়ালহান। তোমরা পানির প্ররোচনা হতে বেঁচে থাক।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজা প্রভৃতি)।
নামাজের শয়তান ‘খিনজিব’ সম্পর্কে হজরত উসমান ইবনে আবিল আছ (রা.) বলেন, ‘আমি রসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট অভিযোগ করি যে, শয়তান আমার ও আমার নামাজের মধ্যে ক্বেরাতে সন্দেহের সৃষ্টি করে। তার থেকে আমি কিভাবে রক্ষা পেতে পারি?’ হুজুর (সা.) বললেন : ‘এ একটি বিশেষ শয়তান, যার নাম খিনজিব। যখন তুমি তাকে অনুভব করো তখন আল্লাহর কাছে তার থেকে পানাহ চাও এবং পাঠ করো আউজুবিল্লাহি মিনাশায়তানির রাজিম এবং তোমার বাম দিকে তিনবার থুথু করো।’ (মুসলিম, নাসায়ী, আহমদ প্রভৃতি)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন