শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

প্রভুর সামীপ্য লাভে তাহাজ্জুদের সালাত

আবু তালহা রায়হান | প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০২১, ১২:০৬ এএম

আকাশে তারার মৃদু স্ফুরণ, ঝিঁঝিপোকার মনমাতানো সুর,ছন্দ আর হিমশীতল দখিনা বাতাসে পৃথিবী যখন নীরব ঘুমায়—তখন একদল প্রেমিক চোখে অশ্রু,হাতে তাসবীহ,কণ্ঠে মহাগ্রন্থের মহাধ্বনি তুলে প্রভুর সামীপ্য খোঁজে। দিনের ক্লান্তি শেষে শান্ত রাতে পৃথিবী যখন নিজেকে প্রশান্তির চাদরে আবৃত করে— মুমিনবান্দা তখন আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ পড়ে। রবকে ডাকে। সিজদায় লুটে মাটির মানুষ মাটির গন্ধে মাতে,দু’হাত তুলে ভিখারির বেশে নিজেকে রব্বেকা’বার দরবারে উপস্থাপন করে। আল্লাহ,আল্লাহ বলে মধুর সুরে তাসবীহ জপে। এ এক স্নিগ্ধ অনুভূতি,দারুণ ভাল লাগা, যা প্রশান্তির সাগরে পবিত্রতার ঢেউ তোলে। পাপিষ্ঠ নাফসকে পুণ্যের মহাত্মায় জাগ্রত করে। আল্লাহর সঙ্গে বান্দার প্রেমময় সম্পর্ক স্থাপন করে।
মহামহিম আল্লাহ তায়ালা নশ্বর এ পৃথিবীর মালিক,সৃষ্টিকর্তা। সৃষ্টিজাত সকলেই স্বীয় ভাষা ও ভঙ্গির মাধ্যমে তাঁর একত্ববাদের উপাসনা করে। কিন্তু আল্লাহর কাছে মানুষের ইবাদত-বন্দেগি বেশ পছন্দনীয়। আর তাই মানবজাতিকে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইবাদতের উপযোগী করে জ্ঞান,বোধ ও কথা বলার শক্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন,শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দান করেছেন। যা অন্য কাউকে দেন নি। মানুষকে পাপ ও পুণ্যের পথ দেখিয়েছেন। মানুষ চাইলে পুণ্যের পথে নিজেকে উৎসর্গ করে চিরস্থায়ী সুখের ঠিকানা জান্নাতে যেতে পারে। আবার চাইলে নাফসের পূজায় লিপ্ত হয়ে পাপের পথে পা বাড়িয়ে জাহান্নামের পথিক হতে পারে । মানবজাতির মধ্যে যারা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হবে,তাদের উপর আল্লাহ তায়ালা প্রতিদিন পাঁচবার সালাত আদায় করার বিধান ফরজ করেছেন। ফজর,যোহর,আসর,মাগরিব,ইশা এই পাঁচওয়াক্ত সালাত প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ। প্রতিদিন পাঁচবার সালাত আদায়ে বান্দার কল্যাণ নিহিত। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,’নিশ্চয় সালাত মানুষকে অন্যায় ও অশোভন কাজ থেকে বিরত রাখে। (সূরা আনকাবূত- ৪৫)।
দৈনন্দিন পাঁচবার সালাত আদায়ের পাশাপাশি প্রভুর সামীপ্য লাভের জন্য আরো বিশেষ কিছু সালাত রয়েছে। যেগুলো আদায়ে বান্দার আল্লাহর সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন হয়। ইহকাল ও পরকালীন সাফল্য অর্জিত হয়। বান্দা যা চায়, আল্লাহ তা-ই দেন। এসব সালাতসমূহের অন্যতম হল তাহাজ্জুদের সালাত। তাহাজ্জুদের সালাত মানুষের চিন্তা-চেতনা ও চরিত্রকে নির্মল করে। হকের পথে মানুষকে অবিচল রাখে। আত্মতৃপ্তি দান করে মানুষকে দুনিয়া বিমুখ করে তোলে। আখিরাতের চিন্তায় বিভোর করে। এ সালাতের ফজিলত প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের সালাত কায়েম করুন, এটা আপনার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় আপনার রব আপনাকে মাকামে মাহমুদে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’(সূরা বনি ইসরাইল- ৭৯)। মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সূরা মুজ্জাম্মিলে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নিশ্চয় রাতে ঘুম থেকে উঠা মনকে দমিত করার জন্য খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কুরআন তিলাওয়াত বা জিকির একেবারে যথার্থ। ’ অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘আর আল্লাহর প্রিয় বান্দা তাঁরা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত্রিযাপন করে।’(সূরা ফুরকান-৬৪)। ইসলামের সূচনালগ্নে কাফিরদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ী হওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা ছিল শেষ রাতের ইবাদত, তাহাজ্জুদের সালাত। মুসলমানরা তখন রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ দরবারে চোখের পানি ফেলতেন, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাত্রিযাপন করে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। যেমন কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা ছিল কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল, অটল-অবিচল, সত্যের অনুসারী, পরম অনুগত। আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। ’ (সূরা আলে ইমরান- ১৭)।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md. Yousuf ২২ আগস্ট, ২০২১, ২:২২ পিএম says : 0
শুকরিয়া। রাতের আধাঁরে যারা সেজদাতে রয়; দুচোখের অশ্রুঁতে নদী যেন বয়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন