বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

যাচাই-বাছাই ছাড়া কিছু বলা ও প্রচার করাও মিথ্যা

মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : তোমরা সত্যকে অবলম্বন কর। কারণ সত্যবাদিতা ভালো কাজে উপনীত করে। আর ভালো কাজ উপনীত করে জান্নাতে। যে মানুষ সত্য বলে ও সত্যবাদিতার অন্বেষায় থাকে, একপর্যায়ে সে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসেবে লিখিত হয়ে যায়। আর তোমরা মিথ্যা থেকে দূরে থাক। কারণ মিথ্যা উপনীত করে পাপাচারে। আর পাপাচার উপনীত করে জাহান্নামে। যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে ও মিথ্যার অন্বেষায় থাকে, এভাবে একসময় আল্লাহর কাছে সে চরম মিথ্যুক হিসেবে লিখিত হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬০৭)।

হাদীসের অর্থ একেবারেই সরল। মর্ম খুবই প্রাঞ্জল। অর্থাৎ সত্যবাদিতা যেমন একটি ভালো গুণ, তার বৈশিষ্ট্য হলো, মানব-জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও এটি ভালো প্রভাব সৃষ্টি করে, ভালোর দিকে পরিচালিত করে। ফলে লোকটির ঠিকানা হয় জান্নাত। পক্ষান্তরে মিথ্যা খোদ একটি মন্দ ও ঘৃণিত স্বভাব। সাথে তার একটি মন্দ প্রতিক্রিয়া এ-ও যে, এটি মানুষের মধ্যে পাপাচার ও অবাধ্যতার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করে। পুরো জীবনটাকে অন্যায় ও অনাচারে কলুষিত করে তোলে। ফলে তার পরিণতি হয় জাহান্নাম। (দ্র. মিরকাতুল মাফাতীহ ৯/১৪০ মাআরেফুল হাদীস, মনযুর নুমানী, হাদীস ১৯৪)।

আরেকটি হাদীসে এসেছে : মুমিনের চরিত্রে সবকিছুর অবকাশ থাকতে পারে, কিন্তু প্রতারণা ও মিথ্যা নয়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২১৭০)। অর্থাৎ কেউ যদি প্রকৃত মুমিন হয়ে থাকে, তাহলে অন্য কোনো দোষ-ত্রæটি ও দুর্বলতা তার মধ্যে হয়ত থাকতে পারে, কিন্তু মিথ্যা ও খেয়ানতের কোনো অংশ তার চরিত্রে জায়গা করতে পারে না। ঈমানের সাথে মিথ্যা ও খেয়ানতের মতো মুনাফিকসুলভ বিষয় একত্রিত হতে পারে না। কাজেই কারো মধ্যে যদি মিথ্যা এবং প্রতারণার মতো মন্দ কোনো স্বভাব থাকে, বুঝতে হবে- ঈমানের হাকীকত এখনও তার অর্জিত হয়নি। (দ্র. মাআরেফুল হাদীস)

মিথ্যার রয়েছে বহু ক্ষেত্র। ইসলামী শরীয়তে সবিস্তারে মিথ্যার পরিধি বর্ণনা করা হয়েছে। এমন কিছু মিথ্যা আছে, যেগুলোকে অনেকসময় মিথ্যাও মনে করা হয় না। ইসলাম সেগুলো থেকেও বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। মিথ্যার একটি সু² রূপ, যাচাই-বাছাই ছাড়া যা শোনে তাই বলে বেড়ানো।

কারণ এর মাধ্যমে অনায়াসেই একটি ভুল তথ্য সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। কাজেই আল্লাহ তাআলা বলেন : হে মুমিনগণ! কোনো ফাসেক যদি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে ভালোভাবে যাচাই করে দেখবে, যাতে তোমরা অজ্ঞতাবসত কোনো সম্পদ্রায়ের ক্ষতি না করে বস! ফলে নিজেদের কৃতকর্মের কারণে তোমাদের আনুতপ্ত হতে হয়। (সূরা হুজুরাত : আয়াত ৬)।

হাদীসে এসেছে : কারো মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে (কোনো বাছ-বিচার ছাড়া) তাই প্রচার করতে থাকে। (সহীহ মুসলিম : হাদীস ৫)।

আর যদি দ্বীনী বিষয় হয় তখন তো ব্যাপারটা আরো ভয়াবহ হয়ে দাঁড়ায়! পরিভাষায় একে বলা হয়, ‘আলকাযিবু আলাল্লাহি ওয়া রাসূলিহি’-আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ব্যাপারে মিথ্যা বলা। কারণ এর মাধ্যমে শরীয়তের ভুল ব্যাখ্যা প্রকাশিত হয়। এর দায় কখনো ওই ব্যক্তি এড়াতে পারে না, যার অসতর্কতার কারণে এই ভুল তথ্যটি প্রচারিত হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস- ‘যে আমার ব্যাপারে মিথ্যা বলল, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়!’ (সহীহ বুখারী : হাদীস ১০৭)।

কোনো বর্ণনায় আছে- ‘যে ‘ইচ্ছাকৃত’ আমার ব্যাপারে মিথ্যা বলবে...।’ বলা বাহুল্য, অসাবধানতা, অসতর্কতা, যাচাই-বাছাই ছাড়া দ্বীনের ব্যাপারে বেপরোয়া ও বল্গাহীন বলতে থাকাও প্রকারান্তরে ইচ্ছাকৃত বলার শামিল। তাই স্যোশাল মিডিয়া বা অন্য কোনো মাধ্যমে মুখরোচক যা শোনে তা-ই প্রচার করার ব্যাপারে সতর্ক থাকা কাম্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Ibena Masud ২ জুলাই, ২০২১, ১:৩৯ এএম says : 0
মিথ্যা বলা ও প্রচার করা একটি মারাত্মক অন্যায়।
Total Reply(0)
Imran Selim ২ জুলাই, ২০২১, ১:৩৯ এএম says : 0
সমাজ জীবনে অনেক বিশৃঙ্খলা ঘটে মিথ্যার ফলে, আবার পারলৌকিক জীবনও মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হয় মিথ্যার কারণে।
Total Reply(0)
Mamunur Rashid ২ জুলাই, ২০২১, ১:৩৯ এএম says : 0
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা মিথ্যাবাদীদের সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘দুর্ভোগ প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপীর জন্য।’ (সূরা জাসিয়া : ৭)
Total Reply(0)
MD FOKHRUL ISLAM ২ জুলাই, ২০২১, ১:৪০ এএম says : 0
ইন্টারনেট বিপ্লবের ফলে আমাদের সামাজিক যোগাযোগের বড় মাধ্যম ফেসবুক যেমন আমাদের যোগাযোগকে সহজ করেছে তেমনি ভুয়া সংবাদের অন্যতম উৎস হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে এটি। এখানে সবাই যেন ‘সাংবাদিক’। লাইক কমেন্ট পেতে অনেকেই যেমন ‘মক্কা শরিফের খাদেম স্বপ্নে দেখেছেন... শেয়ার করলে এ পুরস্কার।’ এ ধরনের ধর্মীয় আবেগপূর্ণ ভুয়া পোস্ট করেন তেমনি ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানো বা বিশেষ স্বার্থ অর্জন করার জন্যও নিছক ফটোশপের কারসাজির মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ছড়ানো হয়। এ ধরনের মিথ্যা বলা, লেখা, প্রচার করা ইসলামের দৃষ্টিতে ভয়াবহ কবিরা গুনাহ। একটি কবিরা গুনাহই একজন মানুষকে জাহান্নামে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
Total Reply(0)
Md Faruque Ahmed ২ জুলাই, ২০২১, ১:৪০ এএম says : 0
মিথ্যা সংবাদ বলা বা পোস্ট করা যেমন গুনাহের কাজ তেমনি তা শেয়ার করে প্রচার করাও গুনাহ। একজন মুসলমানের জন্য কারও নিয়ে আসা এ ধরনের কোনো খবর যাচাই না করে বিশ্বাস ও প্রচারের কোনো সুযোগ নেই।
Total Reply(0)
Ibrahim Ctg Khalil ২ জুলাই, ২০২১, ১:৪০ এএম says : 0
সংবাদভিত্তিক পোস্টে লাইক/কমেন্ট করার আগে জেনে নিতে হবে সংবাদটির উৎস সঠিক কিনা। পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ! কোনো পাপাচারী ব্যক্তি যদি তোমাদের কাছে কোনো খবর নিয়ে আসে তাহলে তোমরা তা যাচাই করে দেখবে। যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।’ (সূরা আহজাব : ৬)।
Total Reply(0)
Kamrul Sharif ২ জুলাই, ২০২১, ১:৪১ এএম says : 0
যাচাই না করে কোনো সংবাদ বলে বেড়ানো বা শেয়ার করে প্রচার করা মিথ্যার শামিল। নবীজি (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যাই শুনবে (সত্যতা যাচাই না করে) তাই বর্ণনা করবে।’ (সহিহ মুসলিম)
Total Reply(0)
Younus Foridy ২ জুলাই, ২০২১, ১:৪১ এএম says : 0
মিথ্যা পোস্ট করা এবং তা শেয়ার করে ছড়ানো যেমন কবিরা গুনাহ তেমনি কোনো নির্দোষ লোককে বিপদে ফেলতে বা তার সম্মানহানি করতে তার নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে সে আইডি থেকে সমাজবিরোধী পোস্ট করা আরও মারাত্মক অন্যায়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন