শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

পাহাড়ে স্থবির অর্থনীতি

পার্বত্য চট্টগ্রামে মিলছে না ব্যাংক ঋণ বাড়ছে জনমনে ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি : | প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

পার্বত্য তিন জেলায় ব্যাংক ঋণ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মুখ থুবড়ে পড়ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনীতির চাকা। বেকার হয়ে পড়ছে অনেক ছোট-বড় ব্যবসায়ী। বাধাগ্রস্ত হয়ে প্রভাব পড়ছে ব্যাংকিং কার্যক্রম। আইনে বাধা না থাকলেও অলিখিতভাবে তিন পার্বত্য জেলা প্রশাসক কার্যলয় থেকে ভূমি বন্ধকের অনুমতি আটকে রাখায় এই জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিষয়টিকে ব্যবসায়ীরা আমলাতান্ত্রিক ইগো হিসেবে উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তা না হলে পাহাড়ে অভাব-অনটন দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ব্যবসায়ীদের মতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধির পর দুইশ’ বছর জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক ঋণ নেয়ার ধারাবাহিকতা চলে আসলেও হঠাৎ করে ওই আইনের অজুহাতে ঋণ কার্যক্রম বন্ধ রাখাটা যেমন অযৌক্তিক তেমনি অমানবিকও। পাশাপাশি এর মাধ্যমে সরকারের এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার সুক্ষ ষড়যন্ত্রও থাকতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বাজার ফান্ড এলাকার জমি নিয়েই মূলত এই জটিলতা তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনগুলোর নিরবতায় তিনজেলায় অন্তত ১৩০ থেকে ১৪০ কোটি টাকার ঋণ কার্যক্রম আটকে আছে। এই জটিলতায় শুধুমাত্র রাঙামাটির বাজার ফান্ড এলাকাগুলোতেই ৫০ কোটি টাকার ঋণ কার্যক্রম আটকে আছে। ঋণ নিতে না পেরে ইতিমধ্যেই রাঙামাটি থেকে অন্তত ৪০ জন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী অন্যত্র চলে গেছেন।
এ বিষয়ে রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ২০১৭ সালে জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান প্রথমবারের মতো বাজার ফান্ড এলাকায় ভূমি রেজিস্ট্রির মিউটেশন ও মিছ মামলাগুলো নিষ্পত্তি স্থগিত করে দেন। আমরা (ব্যবসায়ীরা) তার সাথে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে বুঝালেও তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ায় পরে এমপি দীপংকর তালুকদারের সহায়তা নেই। এক পর্যায়ে বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করার প্রস্তুতি নেই। আমরা ভিক্ষুক ফান্ডে অনুদান প্রদান করি এবং প্রক্রিয়াটি চালু হয়। পরবর্তিতে ডিসি মামুনুর রশিদ ২০১৯ সালের দিকে তিনি বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের বরাত দিয়ে রাঙামাটির বাজার ফান্ড এলাকার জমির ঋণ অনুমোদন কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।
চেম্বার সভাপতি বলেন, এখানে বড় কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই। তার উপর প্রায় ৪শ’ কোটি টাকার কাঠের ব্যবসাও বন্ধ রয়েছে। মরার উপর খড়ার ঘায়ের মতো একটি মিমাংসিত বিষয়ে অযথা বিতর্ক তুলে ব্যবসায়ীদের মাথায় বজ্রাঘাত করা হয়েছে।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ব্যাংক ঋণচুক্তি অনুমোদন ও নবায়ন প্রক্রিয়া তিন পার্বত্য জেলাতেই বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে পত্র দেয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা এখনও আসেনি। ব্যবসা বাণিজ্যের স্থবিরতার বিষয়টি আমার গোচরে নেই। প্রয়োজনে এ বিষয়টি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
রাঙামাটির সোনালী ব্যাংক প্রিন্সিপাল শাখার ব্যবস্থাপক সমীর কান্তি চাকমা জানিয়েছেন, প্রশাসনের সিদ্ধন্তহীনতায় বাজার ফান্ড এলাকায় ঋণ দিতে পারছি না। এদিকে মৌজা অধীন ভূমিগুলোর মূল্যমান কম থাকায় সেখানে বড় ধরনের ঋণ দেয়া যায় না।
ইসলামী ব্যাংক রাঙামাটির শাখার ব্যবস্থাপক মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, বাজার ফান্ডের অধীন জায়গাগুলোর প্রায় সবগুলোই শহর কেন্দ্রীক। ব্যবসায়ীদের মধ্যেও ৯০ শতাংশ শহরের বাসিন্দা। ডিসি অফিসের নিষেধাজ্ঞার কারণে নতুন উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নতুন বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না। রূপালী ব্যাংক বনরূপা শাখার ব্যবস্থাপক শামীম আহাম্মদ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, বাজার ফান্ড এলাকার গ্রাহকদের ঋণ প্রদান করতে পারছি না। এতে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির পথ রুদ্ধ হচ্ছে।
পাহাড়ের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজার ফান্ড প্রশাসকগণ তথা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানেরা স্পষ্টভাবে বিষিয়টির পক্ষে ইতিবাচক মতামত ও আইনি ব্যাখ্যা দেয়ার পরও কোন অদৃশ্য শক্তির ইঙ্গিতে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আটকে আছে তা খতিয়ে দেখা জরুরি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন