ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা, তিস্তা, ধরলার পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পানি ক্রমান্বয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। যমুনা নদীর পানি বিপদ সীমার ১.৪১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলার পানিও প্রতিদিনই বাড়ছে। তিস্তা-ধরলার ৬৩ চর প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। এই ভাঙনে নদীর পাড়ের মানুষ রয়েছেন আতঙ্কে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদন :
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, ইতোমধ্যে পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার নদী তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার শক্ত কাঠামো বাঁধসহ নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙছে নদী, জনপদ, বিভিন্ন স্থাপনা, বসতভিটা, কালভার্ট, রাস্তাঘাট ও হাজারো মানুষের কপাল। তাই নদী তীরবর্তী ভাঙন কবলিত মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, গত ১ জুলাই যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রচন্ড ঘূর্ণাবর্তার সৃষ্টি হয়ে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধে ধস নামে। মুহুর্তের মধ্যে প্রায় ১৫০ মিটার ধসে পড়ে ভাঙন রাস্তায় এসে পড়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলে ধস নিয়ন্ত্রণে আনলেও যমুনা পাড়ের মানুষের আতঙ্ক কাটেনি। কাজিপুর উপজেলার মাইজবাড়ী ইউনিয়নের তেতুলিয়ার যমুনা নদী তীরবর্তী নির্মানাধীন ইকো পার্কের নির্ধারিত স্থানে ধস নেমেছে।
অপরদিকে, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১৩টি গ্রাম নদীর ভয়াবহ ভাঙনের মহাতান্ডব শুরু হয়েছে। চৌহালীতে চলছে একই অবস্থা।
এ ব্যাপারে জালালপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য রহিমউদ্দিন বলেন, এলাকার সব বাড়ি ঘর ভেঙে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মানুষজন ঘরবাড়ি হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে এসব গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। নদী তীরবর্তী চৌহাল উপজেলা মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাচ্ছে। এখানে নদী তীররক্ষা বাঁধে প্রায় ১৫-১৬ বার ভাঙনের শিকার হয়েছে। এখনও স্থায়ী সমাধান ঘটেনি। তবে অচিরেই বাঁধ নির্মাণ কাজ নতুন করে শুরু করা হবে বলে জানান পানি উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার।
এ উপজেলার এনায়েতপুরেও ভাঙন তীব্্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় চার শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত খাজা ইউনুছ আলী মেডিকেল কলেজ।
লালমনিরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল রোববার বিকেলে দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্যারাজ রক্ষায় ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, রোববার সকাল ৯টা থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সকাল ৯টায় ৫২ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার, দুপুর ২টায় ৫২ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার ও সন্ধ্যা ৬টায় ৫২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার স্পর্শ করে। ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে তিস্তার পানি।
জানা যায়, তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জেলার তিস্তা-ধরলা বেষ্টিত ৬৩ চর এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া ওই এলাকা গুলোতে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এদিকে হাতীবান্ধা উপজেলার নিজ গড্ডিমার গ্রামে একটি সড়ক পানিতে ডুবে গিয়েছে।
সদরের রাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন বলেন, তিস্তার পানি হু হু করে বাড়ছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। গত ২৪ ঘন্টায় তার ইউনিয়নের ১৩টি বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে কয়েক’শ ঘরবাড়ি।
অপরদিকে সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ধরলা নদীর পানি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আছে আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছি। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের ঢল অব্যাহত রয়েছে।
মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে মৎস্য শিকারিদের নিয়মিত মাছ ধরার জন্য হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলা রক্ষা বাঁধ। উপজেলা সদর রক্ষায় বয়ড়া, হারুকান্দি ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পদ্মাপাড় রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করা হয়। এ বাঁধের পাশ ঘেঁষে আন্ধারমানিক খালপাড় বয়রা, দাশকান্দি বয়রা, দড়িকান্দি, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বকচর, আলগীচর, জগনাথপুুর, রামকৃষ্ণপুর, হারুকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁদপুর, হারুকান্দি এলাকায় জিও ব্যাগ কেটে চায়না দোয়ারি (জাল), সাধারণ দোয়ারি ও জিও ব্যাগে বাঁশ দিয়ে গর্ত করে ভেশাল (মাছ ধরার জাল) দেয়ায় বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন