শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নিজের মনমতো কোরআনের ব্যাখ্যা ও ব্যবহার

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

সংসদে পবিত্র কোরআনের ব্যাখা হচ্ছে। বক্তৃতায় এর উদ্ধৃতি ও নিজের দাবি প্রমাণে এর ব্যবহারও চলছে। এমনকি বলা হচ্ছে যে, ধর্মনিরপেক্ষতা পবিত্র কোরআনেই আছে। কোরআনে আছে কথাটির অর্থ ধরতে হবে ইসলামে আছে। কারণ ইসলামের মৌলিক সব বিষয় কোরআনে বিস্তারিতভাবে থাকে না। এটি রাসূল (সা.) এর নিকট আল্লাহর ওহির মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গরূপে বিবৃত হয়ে কোরআন বা সুন্নাহ যে ভাবেই হোক বাস্তবে রূপান্তরিত হয়। এখানে কোরআনে আছে কি না, এর অর্থ ইসলাম একে সমর্থন করে কি না।

এখানে প্রথমেই পাঠককে জানতে হবে যে, ধর্ম নিরপেক্ষতা কী। যদি একটি সমাজে সব ধর্মের লোকেদের নাগরিক সম্প্রীতি, সামাজিক সহাবস্থান ও সবার নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার বুঝানো হয়, তাহলে উত্তরে বলা যাবে যে, এমন ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহাবস্থান ইসলামে আছে। আর যদি ধর্ম নিরপেক্ষতাকে কেউ পশ্চিমা পরিভাষা সেক্যুলারিজমের সরাসরি অনুবাদ তথা সমার্থবোধক শব্দ হিসাবে নিয়ে বলতে চান, এটি কি কোরআনে বা ইসলামে আছে? তাহলে এক কথায় জবাব হবে, না অবশ্যই নেই। থাকতে পারে না। কারণ ইসলাম একটি ধর্ম। কোরআন এর ধর্মগ্রন্থ। নবী করিম (সা.) নিজে এই ধর্মের রাসূল। যিনি নিজে একটি ধর্মের প্রবক্তা তিনি কী করে ধর্ম নিরপেক্ষ হতে পারেন। একটি ধর্মগ্রন্থ কী করে ধর্ম নিরপেক্ষ হতে পারে। ইসলাম একটি ধর্ম হয়ে সেটি কী করে ধর্ম নিরপেক্ষ হয়।

এ নিয়ে আলাপ খুবই দীর্ঘ। সীমিত অর্থে ধর্মীয় স্বাধীনতা, সহাবস্থান ও সম্প্রীতি বোঝাতে ধর্ম নিরপেক্ষতা শব্দ ব্যবহার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এসব তো ইসলামী সমাজ ও সভ্যতা ও স্বীকৃত ও যুগে যুগে যথাযথ উপায়ে পরিচালিত কিন্তু এ শব্দটির মূল পরিভাষা সেক্যুলারিজম কোনোভাবেই ইসলামসম্মত নয়। এটি একটি ঈমান ইসলাম ও কোরআনবিরোধী পরিভাষা যাতে কোনো মুসলমান বিশ্বাসী হতে পারে না।

ইসলামের প্রথমদিকে মক্কার কাফির মুশরিকরা আল্লাহর নবীর নিকট একটি সমঝোতা প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল যে, কিছুদিন আপনি আমাদের উপাস্য দেবদেবীর উপাসনা করবেন আর কিছুদিন আমরা আপনার আল্লাহর ইবাদত করব। সব ধর্মের একটি সমন্বিত ধর্মীয় সংস্কৃতি চালুর চিন্তা থেকেই এ প্রস্তাব তারা দিয়েছিল। এর জবাবে আল্লাহ তার রাসূল (সা.) কে নির্দেশ দিলেন, ‘হে রাসূল, আপনি বলে দিন, হে অবিশ্বাসীরা, তোমরা যাদের উপাসনা কর আমি তাদের উপাসনা করি না। আমি যার ইবাদত করি তোমরা তার ইবাদতকারী নও। তোমরা যাদের উপসনা কর আমি তার ইবাদতকারী নই। আমি যার ইবাদত করি তোমরা তার উপসনাকারী নও। তোমাদের ধর্মকর্ম ও পরকালীন পরিণামফল তোমাদের আর আমার ধর্মকর্ম ও পরকালীন পরিণাম ফল আমার।’ যার শেষ পংক্তিটির আরবি হলো, ‘লাকুম দীনুকুম ওয়ালিয়া দীন।’

এখানে কাফির মুশরিকদের সাথে ধর্মকর্ম, বিশ্বাস ও উপসনা এক হওয়া যে কোনোদিনই সম্ভব নয়, সে কথাটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, তোমাদের ধর্ম ও পারলৌকিক প্রতিফল একরকম, আমার ধর্ম ও পারলৌকিক প্রতিফল অন্যরকম। এটি সব ধর্মের গ্রহণযোগ্যতার মিউচুয়াল ঘোষণা নয়। কোরআন বরং এখানে অন্যান্য ধর্ম থেকে নিজেকে দায়মুক্ত ও স্বতন্ত্র ঘোষণা করেছে। অতএব, এ আয়াতের অর্থ মর্ম বক্তব্য ও বার্তা অনুধাবন করেই এর প্রকৃত ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত। এর মনমতো ব্যাখ্যা বা গড়পড়তা ব্যবহার কোরআনের উদ্দেশ্যের সাথে যায় না। হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি নিজের মনমতো কোরআনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করবে সে যেন জাহান্নামে তার আসন নির্ধারণ করে নেয়। সুতরাং পূর্ণ আত্মবিশ্বাস ছাড়া পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, উদ্ধৃতি, তরজমা ও তাফসির না করাই অধিক মঙ্গলজনক। দুনিয়ার অন্য সব কাজের মতো আল্লাহর কিতাব নিয়ে খামখেয়ালি মোটেও ঠিক কাজ নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (13)
Nayeem Islam ১০ জুলাই, ২০২১, ১:২৪ এএম says : 0
· রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন ওই জাতি কখনই সফলতা অর্জন করতে পারবে না, যে জাতি তাদের বিষয়গুলোকে কোনো নারীর দায়িত্বে সোর্পদ করে দেয়’। [সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৪২৫, ৭০৯৯]
Total Reply(0)
Sohal Rana ১০ জুলাই, ২০২১, ১:২৬ এএম says : 0
কামারের দোকানে কোরআন পাঠ করে কি লাভ হবে।এরা হচ্ছে ইসলামের চরম শত্রু এদেরকে মুসলিম জাতির সামনে তুলে ধরে চিহ্নিত করা দরকার।
Total Reply(0)
Muhammad Shams Uddin Siddiqi ১০ জুলাই, ২০২১, ১:২৭ এএম says : 0
সংসদে উনি উপর্যুক্ত আয়াতের শানে নুজুলই জানেন না। অর্থটাও বলেছেন একদম ভুল। আল্লাহ সকলকে ছহি বুঝ ও জ্ঞান দান করুন।
Total Reply(0)
Sagar Wts Sagar Wts ১০ জুলাই, ২০২১, ১:২৭ এএম says : 0
আল্লাহ পাক যেন সবাইকে হেদায়েত দান করেন।
Total Reply(0)
সোয়েব আহমেদ ১০ জুলাই, ২০২১, ১:২৭ এএম says : 0
জাতীয় সংসদে এ বক্তব্য প্রদান করে মূলত পবিত্র কুরআন মাজিদের অপব্যাখ্যা করেছেন। একজন মুসলিম হিসাবে এটা মোটেই কাম্য নয়।
Total Reply(0)
তৌহিদুজ জামান ১০ জুলাই, ২০২১, ১:২৮ এএম says : 0
পবিত্র কুরআনের কোথাও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী পবিত্র কুরআনের সূরা কাফিরুনের ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। সূরা কাফিরুনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম আর আমার জন্য আমার ধর্ম। অর্থাৎ তোমরা তোমাদের ধর্মের পক্ষে, আর আমি আমার ধর্মের পক্ষে। এর দ্বারা কখনই ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়নি বা কোনো ধর্মের অনুমোদন দেয়া হয়নি। বরং তা নাকচ করা হয়েছে।
Total Reply(0)
তানিম আশরাফ ১০ জুলাই, ২০২১, ১:২৮ এএম says : 0
ধর্মনিরপেক্ষতার প্রচলিত ধারণা হলো রাষ্ট্রের সাথে ধর্মের কোনো সম্পর্ক না রাখা। ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা রাখা অর্থাৎ রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে নিরপেক্ষ রাখা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা আলে ইমরানের ৮৫ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘যদি কেউ ইসলাম ছাড়া ভিন্ন কোনো ধর্ম তালাশ করে, তবে তা কখনই গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ কাজেই কোনো মুসলমান ধর্মের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকতে পারে না।
Total Reply(0)
সাইফ আহমেদ ১০ জুলাই, ২০২১, ১:২৯ এএম says : 0
ক্ষমতাসীনরা এভাবেই নিজেদের স্বার্থেথে কুরআনের অপবেক্ষা করে।
Total Reply(0)
salman ১০ জুলাই, ২০২১, ৫:৫৬ এএম says : 0
হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি নিজের মনমতো কোরআনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করবে সে যেন জাহান্নামে তার আসন নির্ধারণ করে নেয়। akhon ......................ar ki hobay?
Total Reply(0)
Mohiuddin ১০ জুলাই, ২০২১, ৯:২০ এএম says : 0
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন ওই জাতি কখনই সফলতা অর্জন করতে পারবে না, যে জাতি তাদের বিষয়গুলোকে কোনো নারীর দায়িত্বে সোর্পদ করে দেয়’। [সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৪২৫, ৭০
Total Reply(0)
Noman ১০ জুলাই, ২০২১, ১০:০৪ এএম says : 0
ইসলামের প্রথমদিকে মক্কার কাফির মুশরিকরা আল্লাহর নবীর নিকট একটি সমঝোতা প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল যে, কিছুদিন আপনি আমাদের উপাস্য দেবদেবীর উপাসনা করবেন আর কিছুদিন আমরা আপনার আল্লাহর ইবাদত করব। সব ধর্মের একটি সমন্বিত ধর্মীয় সংস্কৃতি চালুর চিন্তা থেকেই এ প্রস্তাব তারা দিয়েছিল। এর জবাবে আল্লাহ তার রাসূল (সা.) কে নির্দেশ দিলেন, ‘হে রাসূল, আপনি বলে দিন, হে অবিশ্বাসীরা, তোমরা যাদের উপাসনা কর আমি তাদের উপাসনা করি না। আমি যার ইবাদত করি তোমরা তার ইবাদতকারী নও। তোমরা যাদের উপসনা কর আমি তার ইবাদতকারী নই। আমি যার ইবাদত করি তোমরা তার উপসনাকারী নও। তোমাদের ধর্মকর্ম ও পরকালীন পরিণামফল তোমাদের আর আমার ধর্মকর্ম ও পরকালীন পরিণাম ফল আমার।’ যার শেষ পংক্তিটির আরবি হলো, ‘লাকুম দীনুকুম ওয়ালিয়া দীন।’ এখানে কাফির মুশরিকদের সাথে ধর্মকর্ম, বিশ্বাস ও উপসনা এক হওয়া যে কোনোদিনই সম্ভব নয়, সে কথাটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, তোমাদের ধর্ম ও পারলৌকিক প্রতিফল একরকম, আমার ধর্ম ও পারলৌকিক প্রতিফল অন্যরকম। এটি সব ধর্মের গ্রহণযোগ্যতার মিউচুয়াল ঘোষণা নয়। কোরআন বরং এখানে অন্যান্য ধর্ম থেকে নিজেকে দায়মুক্ত ও স্বতন্ত্র ঘোষণা করেছে। অতএব, এ আয়াতের অর্থ মর্ম বক্তব্য ও বার্তা অনুধাবন করেই এর প্রকৃত ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত। এর মনমতো ব্যাখ্যা বা গড়পড়তা ব্যবহার কোরআনের উদ্দেশ্যের সাথে যায় না। হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি নিজের মনমতো কোরআনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করবে সে যেন জাহান্নামে তার আসন নির্ধারণ করে নেয়। সুতরাং পূর্ণ আত্মবিশ্বাস ছাড়া পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, উদ্ধৃতি, তরজমা ও তাফসির না করাই অধিক মঙ্গলজনক। দুনিয়ার অন্য সব কাজের মতো আল্লাহর কিতাব নিয়ে খামখেয়ালি মোটেও ঠিক কাজ নয়।
Total Reply(0)
রফিক ১০ জুলাই, ২০২১, ১০:২৪ এএম says : 0
কোরআন নিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যা করা উচিত নয়।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ ইউনুছ মিয়া ১০ জুলাই, ২০২১, ২:৩৯ পিএম says : 0
যেই দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কোরআন হাদিসের কোন কিতাব পড়ানো হয়না, সেই দেশের সংসদে জাহেলিয়াত ছাড়া আর কি আশা করতে পারি।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন