বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

পশু কোরবানি ইসলামের নিদর্শন : এর কোনো বিকল্প হয় না-১

মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

কোভিড ১৯ এর সময়ে কোরবানি না করে টাকা পয়সা দান করে দিলেও হয় বলে যারা প্রস্তাব করছেন, তাদের এ চিন্তা ইসলামের দৃষ্টিতে সঠিক নয়। কেননা, কোরবানি ইসলামের মৌলিক নিদর্শনসমূহের অন্যতম। ইসলামের কোনো বাহ্যিক অবয়ব নেই। ইসলাম প্রকাশ পায় তার নিদর্শনসমূহের মধ্য দিয়ে। মসজিদ, নামাজ, রোজা, রমজান, রমযানের রোজা, দুই ঈদ, হজ্ব পালন, জাকাত প্রদান, কোরবানি করা- এজাতীয় মৌলিক নিদর্শন ও আলামতগুলোর মধ্য দিয়ে ইসলামের রূপ ও অবয়বটি প্রকাশ পায়। এই নিদর্শনগুলোর অন্যতম হলোÑ আলউযহিয়্যা তথা কোরবানি। কোরবানি এমন একটি ইবাদত যে, নবীজী (সা.) মদীনায় হিজরতের পর যখন থেকে কোরবানি করা শুরু করেন, তারপর থেকে আর কখনো বাদ দেননি। অর্থাৎ কোনো ঈদুল আজহার সময় কোরবানি না করে থাকেননি। যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের অনেক ফজিলতের কথা হাদীস শরীফে আছে। যিলহজের নবম তারিখের রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে, আগের এক বছর ও পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। কিন্তু যিলহজের দশম তারিখ বা ইয়াওমুন নাহর সম্পর্কে বলা হয়েছেÑ এই দিনটিতে কোরবানি করার চেয়ে উত্তম আমল আর নেই।

কোরবানি বা উযহিয়্যা ইসলামের অন্যতম প্রতীক। কোরবানির ইতিহাস সম্পর্কে যারা জানেন, তারা এর উৎসের ঘটনাটি সম্পর্কেও অবগত। আল্লাহ তাআলা তাঁর খলীল হযরত ইবরাহীম আ.-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর ছেলেকে কোরবানি করার জন্য। তিনি তাঁর হুকুমের সামনে সমর্পিত হয়েছিলেন, সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তখন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে কোরবানির জন্য পশু যবেহ করার নির্দেশ আসে। সেখান থেকেই পশু কোরবানি করার বিধান এসেছে। এই কোরবানি অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল ও ইবাদত। এটি কোনো সাধারণ পর্যায়ের নফল আমল কিংবা সাধারণ পর্যায়ের সুন্নত আমল নয় যে, সুযোগ হলে পালন করলাম, মনে চাইল না- পালন করলাম না। কোরবানির ইবাদতটি এমন নয়।

এই ঈদের নামই দেয়া হয়েছেÑ ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ইসলামের দুটি ঈদের প্রথমটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর, যা রমজানের পর পহেলা শাওয়াল আদায় করা হয়। এটা এক দিন। আর দ্বিতীয়টি ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহার সময়কাল তিন দিন। একে বলে, আইয়ামুল আজহা। কোরবানির ঈদের জন্য এই তিন দিন মেয়াদ নির্ধারণেরও একটি হেকমত এটি যে, পৃথিবীর সব অঞ্চলের মুসলমানরা যেন প্রথম দিন না পারলে দ্বিতীয় দিন, দ্বিতীয় দিন না পারলে তৃতীয় দিন হলেও কোরবানি আদায় করতে পারেন। কোরবানি করতে পারার সুবিধার্থেই এই ঈদে দিনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ থেকেও কোরবানির আমলের গুরুত্ব বুঝে আসে।

সুতরাং কোরবানি নিয়ে যারা ভিন্ন কথা বলতে চান কোরবানির ইতিহাস, এর প্রাণ, এ ইবাদতের তাৎপর্য নিয়ে তাদের ভেবে দেখা উচিত। একইসঙ্গে সব ইবাদতের বিষয়েই তাদের গভীরভাবে জেনে-বুঝে কথা বলা উচিত। এ ধরনের উদ্ভট মতামত দিতে গিয়ে যারা ফরয নামাজ, রমজান-রোজা, যাকাত-হজ্ব নিয়ে কথা বলতে চান তাদের সতর্ক হওয়া উচিত। এসব ইবাদতের ক্ষেত্রে বিকল্প পথ দেখিয়ে দেওয়া চিন্তার ক্ষেত্রে একটা সর্বাত্মক নৈরাজ্য উসকে দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে এবং করতে পারে।

যেমন দেখুন, নামাজের ব্যাপারে কোনো ‘বুদ্ধিজীবী’ যদি বলে দেনÑ নামাজের উদ্দেশ্য তো আল্লাহকে স্মরণ করা, তো এর জন্য কষ্ট করে মসজিদে গিয়ে পদ্ধতিগতভাবে সব বিধি-বিধান পালন করে নামাজ পড়ার কী দরকার! ঘরে বসে একটু ধ্যান করে নিলে অথবা এক-দু শ বার কিংবা এক-দুই হাজার বার আল্লাহর যিকির-তাসবীহ পড়ে নিলেই তো হয়- সেই কথিত বুদ্ধিজীবীর কথা আপনি কীভাবে নেবেন! তার এই কুমতামত কি গ্রহণ করা আপনার উচিত হবে? একইভাবে হজ্ব-ওমরা নিয়েও কারো কারো মতামত এমন থাকতে পারে- কষ্ট করে এত অর্থ খরচ করে মক্কায় যাওয়ার কী দরকার, টাকাটা গরিবদের মধ্যে দান করে দিলেই তো হয়। দুঃখজনক হলো, হজ¦-ওমরা নিয়ে কেউ কেউ এমন কথা এখন বলেও থাকে। তো ইবাদত নিয়ে ‘বস্তুবাদী বুদ্ধিজীবীদের’ এসব অন্তঃসারশূন্য ও নৈরাজ্যকর মতামতের কোনো মূল্য নেই। এবং তাদের এসব মতামতের পেছনে কোনো সুফল বা সদুদ্দেশ্যও নেই।

কোরবানি না করে অন্য খাতে টাকা খরচ করার এজাতীয় উদ্ভট ‘বিকল্প প্রস্তাব’ আমরা শুধু এবছরই দেখছি না, প্রায় প্রতি বছরই এজাতীয় আওয়াজ শোনা যায়। অথচ এজাতীয় প্রস্তাব উত্থাপনকারীদেরকে সংকটগ্রস্ত মুসলমানদের নিয়ে কখনো কথা বলতে দেখা যায় না। ব্যক্তিগত জীবনে ইসলাম পালনেও তাদের অনেকের কোনো আগ্রহ বা অনুশীলনের নজির পাওয়া যায় না। কিন্তু দেখবেন, কোরবানি নিয়ে ‘বস্তুবাদী বুদ্ধিজীবী মতামত’ দিতে এরাই চলে আসেন গণমাধ্যমে। তাদের চরিত্র ও বক্তব্যে এসব বিষয় মিলিয়ে দেখলে এদের উদ্দেশ্য ও মতামতের ফাঁকটা ধরতে পারবেন।

এসব প্রস্তাব ও যুক্তিতর্কের অবতারণার উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষকে দ্বীন থেকে, ইসলামের শিআর থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার গভীর একটা পাঁয়তারা। তবে এসব পাঁয়তারা চালিয়ে তারা অতীতে সফল হয়নি, ভবিষ্যতেও ইনশাআল্লাহ সফল হতে পারবে না। এসব মতলবী যুক্তিতর্কের পরেও শিআরে ইসলাম বা ইসলামের প্রতীক ঠিক থাকবে। কোনো রকম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যুক্তিতর্কে বিশ্বাস করে এসব ইবাদতে মুসলমানরা কোনো ছাড় দেবেন না ইনশাআল্লাহ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Saiful Alom Nazrul ১৬ জুলাই, ২০২১, ৩:১৭ এএম says : 0
কেউ চাইলে ধার করে, ঋণ করে কোরবানি করতে পারেন যদি পরবর্তীতে এই ঋণ শোধ করার সৎউদ্দেশ্য তার থাকে তাহলে তিনি ঋণ করে কোরবানি করতে পারেন।
Total Reply(0)
সাইফ আহমেদ ১৬ জুলাই, ২০২১, ৩:১৭ এএম says : 0
জাগতিক যেকোন কাজ যেমন আমরা ঋণ করে লোন করে করতে পারি; রাসুলে কারিম (সঃ) নিজের জীবনেও তিনি লোন করেছেন, সাহাবায়ে ইকরামের অনেকে লোন করেছেন; অতএব লোন করে তিনি কোরবানি করতে পারেন।
Total Reply(1)
Mohammad Sirajullah, M.D. ১৬ জুলাই, ২০২১, ৮:৪৯ এএম says : 0
Qurbani as used in Islam is the sacrifice of a halal animal. The idea is by performing this act the person is preparing to sacrifice his own life when necessary for Islam. Qurbani can not be replaced by payment of money to the poor or Sadaka. On the same way JAKAT can not be replaced by giving some amount of money to the poor. It needs to be calculated and 2.5% of your net worth is due as Jakat. Without calculation some people give Jakat. It will not be considered as Jakat but it will be SADAKA. Islam should not be changed as one's own wish. It is better not to do things instead of distorting it. Non-believers should be better than these so called Muslims with dubious ideas to distort Islam.
নোমান মাহমুদ ১৬ জুলাই, ২০২১, ৩:১৮ এএম says : 0
কোরবানি হচ্ছে ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত। তাৎপর্যমণ্ডিত আমল এটি। কোরবানির সঙ্গে নিজের ভালোবাসার বৃহৎ ত্যাগ জড়িত।
Total Reply(0)
রুবি আক্তার ১৬ জুলাই, ২০২১, ৩:১৮ এএম says : 0
ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টি থেকে যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকার পরও যদি কেউ কোরবানি না করে তাহলে তাদের গুনাহ হবে।
Total Reply(0)
শেখ আল হেলাল ১৬ জুলাই, ২০২১, ৯:০১ এএম says : 0
হে আল্লাহ! যে/যারা আখিরী নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশিত পন্থার বিপরীতে মনগড়া ইবাদত করতে চায় তার/তাদেরকে হেদায়েত দান করুন। এবং আমাদেরকেও হেদায়েত দান করুন,যেন দ্বীন হতে পিছলে না পড়ি।
Total Reply(0)
Shafiqul Islam ১৬ জুলাই, ২০২১, ৯:৫৫ এএম says : 0
ঈদের দু চার দিন আগ্র বাজার থেকে পশু কিনে কোরবানী দিলেই কি হয়ে গেল?? আল্লাহ তো প্রিয় জিনিসের কোরবানী চান।
Total Reply(0)
Kamal uddin Ahmad ১৬ জুলাই, ২০২১, ১০:৩৭ এএম says : 0
ইসলাম একটি দেহ। যার‌‌ প্রতিটি অঙ্গই মূল্যবান ও প্রয়োজনীয়। দেহের একটি অঙ্গ কেটে ফেললে দেহ যেমন পঙ্গু। তেমনি ইসলামের একটি বিধান বাদ দিলে তা পঙ্গু ইসলাম।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন