শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

সিন্ডিকেট ব্যবসা জোরদার, দ্রব্যমূল্য নিয়ে ভোক্তাদের দুশ্চিন্তা

যশোর থেকে শাহেদ রহমান | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০২১, ৬:৩২ পিএম

সরকার নির্ধারণ করে দেয়ার পরও সয়াবিন তেলের মূল্য বেড়েই চলেছে। আটা, ডাল, চিনি, শুকনো মরিচ, পেঁয়াজ ও রসুনের মূল্য বাড়ছে লাফিয়ে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে মোটেও কার্যকর হচ্ছে না। নিয়ন্ত্রণ ঢিলেঢালা হওয়ায় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা অতিমাত্রায় তৎপর হয়ে উঠেছে। যশোর, খুলনা, মাগুরা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বেশীরভাগ জেলায় বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। জেলায় জেলায় বাজার কর্মকর্তা আছেন, আছে জেলা মনিটরিং সেল। মাঝেমধ্যে জোরদার মিটিং হয়। কিন্তু বাস্তবে কার্যকর ভূমিকা নেয়ার বিষয়টি অনুপস্থিত থাকছে। যার জন্য বাজার বিপদ নিয়ে ভোক্তাদের দুশ্চিন্তা বাড়ছেই। গত এক মাসের ব্যবধানে এই অঞ্চলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিহার রীতিমতো অস্বাভাবিক।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মোটা চাল টাকা ৩৮ থেকে ৪৩ টাকা, মাঝারী সরু ৪৬ টাকা থেকে ৫৪ ও ৫৬ টাকা, বাসমতি ৫৮ টাকা থেকে ৬৬ ও ৬৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আটা কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৬ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৩৫ টাকা থেকে ৪৫ টাকা হয়েছে। চাইনা রসুন ১১০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা, মুগ ডাল ১৩০ টাকা ও সয়াবিনের লিটার ১৩০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। দেশের মোট চাহিদার ৬৫ ভাগ সবজি উৎপাদন রেকর্ড সৃষ্টির এলাকা যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। সবজির বাজারেও সিন্ডিকেট ব্যবসা জোরদার হয়েছে। সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে বাজারে। তারপরেও মূল্য বেড়েই চলেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির ‘বিপদ’ থেকে সাধারণ মানুষ রেহাই পাচ্ছেন না। মূল্যের উর্ধ্বমুখী প্রবণতা রোধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া না হলে আরো লাগামছাড়া হওয়ার আশংকা করছেন সচেতন ও পর্যবেক্ষক মহল।

দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য সরকার বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। মাঝেমধ্যেই জেলা বাজার কমিটির বৈঠক হচ্ছে। দাবী করা হচ্ছে মাঠেও নামছেন কর্মকর্তারা। কিন্তু বাস্তবে মাঠ পর্যায়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে ঢিলেঢালা অবস্থা দেখে কোনভাবেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না ভোক্তা সাধারণ। একেক বাজারে একেক মূল্য হাঁকছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। মূল্যবৃদ্ধির জন্য তারা দোষারোপ করছেন পাইকারী ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের। যশোর, খুলনা ও কুষ্টিয়াসহ কয়েকেটি জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা মনিটরিং কমিটি নিয়ন্ত্রণ করার যতটুকু চেষ্টা করছে তা মূলত শহরকেন্দ্রিক। গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে খোঁজ নেয়ারও কেউ নেই। শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজার ও মুদি দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য আরো বেশী। বেশ কয়েকজন ভোক্তা মšতব্য করেছেন, অবাক ব্যাপার সবজিতে বাজার ভরে গেছে অথচ মূল্য কমছে না। মাঠের মূল্যে চেয়ে ৮/১০গুণ বেশীতে বিক্রি হচ্ছে তবু টনক নড়ছে না। তারপরেও মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। চাল, ডাল, সয়াবিন, পেঁয়াজ, রসুন ও মাছের মূল্য কেন অস্বাভাবিক হচ্ছে তা তদšত করা হচ্ছে না। মাছের মূল্যের ক্ষেত্রে বিক্রেতাদের মর্জির ওপর নির্ভর করতে হয়। সকালে এক দাম আর বিকালে আরেক। কিভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব তার ফর্মুলাও খুঁজে বের করা তাগিদ নেই।

সূত্রমতে, গতানুগতিক ধারায় কোনমতেই দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা যাবে না। তাছাড়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় গলদটা কোথায় আগে সেটি চিহ্নিত করা জরুরী। বাজারে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক। কোন কারণ ছাড়াই দ্রব্যমূল্য বাড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন হাট-বাজারে সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ক্রয়ের সময় বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয়। তাদের সবার বক্তব্য প্রায় অভিন্ন, কথা একটিই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ তো হচ্ছেই না, বরং সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামাফিক মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে ভোক্তা সাধারণকে দিশেহারা করছে। সীমিত ও স্বল্প আয়ের পরিবারের মাসিক খরচের বাজেটে বড় ধাক্কা দিচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় সিন্ডিকেট মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা কোন নিয়মনীতির ধার ধারছে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন