রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা গার্মেন্টসের শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরার সুবিধার্থে সারাদেশে গণপরিবহন চলাচলের ঘোষণায় মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রী ও যাত্রীবাহী গাড়ির চাপ বেড়েছে। পাশাপাশি নৌপথে লঞ্চ চলাচলও শুরু হয়েছে। লঞ্চ ঘাটে মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। সে সাথে ফেরি ঘাটে যানবাহনে চাপ বেড়েছে। আর স্বাস্থ্যবিধি নেই বললেই চলে।
যানা যায়, শনিবার থেকে গণপরিবহন চালুর ওই ঘোষণা রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে বাস ও লঞ্চ চলাচল করার কথা থাকলেও তা কেউ মানছেন না। অনেক জায়গাতেই দেখা গেছে, বাসে অর্ধেক আসনের জায়গায় পূর্ণ সংখ্যক আসনেই যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব না মেনেই যাত্রীরা চলাচল করছেন। শিমুলিয়া লঞ্চ টার্মিনাল লোকারণ্য, সেখানে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। একজন আরেকজনের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছেন লঞ্চে ওঠার অপেক্ষায়।
লঞ্চগুলোও মানছে না নিয়ম। শতভাগ আসনে যাত্রী নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে এগুলো। কোনো কোনো লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানো হচ্ছে। শিমুলিয়া নৌরুটে ৮৭টি লঞ্চের মধ্যে বেলা ১২টা পর্যন্ত ১৫টি চালু ছিলো। ১২টার পর থেকে ৪০টা লঞ্চ চালু রয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,অনেক যাত্রী, সরকার যে উদ্দেশ্যে লঞ্চ চলাচল খুলে দিয়েছে সেটা ১২টার মধ্যে পূরণ হবে না। সেজন্য লঞ্চ চলাচলের সময় আগামীকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।
লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও কমসংখ্যক লঞ্চ চলাচলের কারণ হিসেবে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটের লঞ্চ মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি ইকবাল হোসেন খান জানান, সরকারের হঠাৎ লঞ্চ চলাচলের ঘোষণায় চালকেরা আসতে পারেননি।
তিনি আরও জানান, রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৫টি লঞ্চ চালু ছিলো সময় বাড়ানোর ঘোসনার পর এখন ৪০টি লঞ্চ চলাচল করছে। সব গুলো লঞ্চ চালিয়ে তাদের পোষাবে না। তাই অনেক লঞ্চ মালিক এত সময়ের জন্য লঞ্চ চালাতে সম্মত হননি।
সরেজমিনে সকাল দিকে শিমুলিয়া ঘাটের প্রবেশমুখে দেখা যায়, চন্দ্রেরবাড়ি থেকে শিমুলিয়া ঘাট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার জুড়ে যাত্রীবাহী ও ব্যক্তিগত গাড়ির জটলা। কিছুতেই গাড়ি নড়ছিল না। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে সে চাপ কমতে থাকে।
রমিজ মিয়া ও সোবহান সরদার জানান, আজ গার্মেন্টস খোলা। তাই গাজীপুর যাচ্ছি। এ কদিন বাসায় বসে বসে ধার করে সংসার চালিয়েছি। কষ্ট হলেও যেতে হবে। ঋণ পরিশোধ করতে হলে কাজ করতে হবে। তাই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও যেতে হচ্ছে। সালমা আক্তার জানান, আমি ১১ বছর যাবত গার্মেন্টসে চাকরি করি। এ বছরের মতো এতো কষ্ট করিনি। পেটের দায়ে কাম করে খাই। সে কাম করার মধ্যেও এতো ভোগান্তি। সঞ্জয় দাস বলেন, সরকার কেনো পৃথিবীর কোন ব্যক্তির শক্তি নাই আমাকে সচেতন করানোর যদি আমি নিজে সচেতন না হই। আগে আমাদের সচেতন হতে হবে। লঞ্চে আসলাম প্রতিটি লঞ্চে গাদাগাদি ৫৫ টাকা ভাড়া দিলাম কিন্তু গাদাগাদি করে আসতে হলো। তাহলে কেনো এতো টাকা বেশি ভাড়া দিলাম। বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত আহমেদ জানান, এ নৌরুটের বহরে থাকা ১৮টি ফেরির মধ্যে ১০টি চালু রয়েছে। লঞ্চ চালু থাকায় ফেরিতে যাত্রী চাপ কিছুটা কমেছে। তবে সকাল থেকে ছোট-বড় যানবাহনের চাপ রয়েছে ঘাটে। লৌহজং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলমগীর হোসাইন জানান, গার্মেন্টসসহ কলকারখানা চালু করায় শিমুলিয়া ঘাটে ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ ছিলো চোখে পড়ার মতো। আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। গত দিনের থেকে আজ ঘাট স্বাভাবিক। ফেরিতে যাত্রীর সংখ্যা কম তবে লঞ্চগুলোতে যাত্রীর উপচে পড়া ছিড় রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন