শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

বিগত অর্থবছরে দেশের অর্থনীতি নানামাত্রিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও তা মোকাবেলা বা উত্তরণের জন্য চিহ্নিত খাতগুলোর বাজেট বাস্তবায়নে ব্যথর্তা পরিলক্ষিত হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক অব্যবস্থাপনা ও অস্বচ্ছতার কারণে এক দশক ধরেই বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন যথাযথভাবে হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) কাজ যথাযথভাবে শেষ করার তাকিদ দিয়েছেন। উন্নয়ন কার্যক্রমে করোনা প্রভাব ফেললেও এডিপি বাস্তবায়নের ধীরগতি নতুন কিছু নয়। তবে তা স্থবির হয়ে পড়া কাম্য হতে পারে না। দেশের অর্থনীতি এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দীর্ঘদিন ধরে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে মন্দা বিরাজ করছে। বিনিয়োগের ধারা সবসময়ই নি¤œমুখী। এর মধ্যে করোনা মহামারি মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠেছে। সারাবিশ্বেই করোনা যখন অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে, তখন বাংলাদেশেরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়া স্বাভাবিক। ইতোমধ্যে এর প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের বিষয়টি সুকঠিন হয়ে উঠেছে। বিনিয়োগ খরায় ব্যাংকে অলস টাকার পাহাড় জমেছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানে স্থবিরতাসহ নানামুখী সংকটে রেমিটেন্স সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও লক্ষ্য অর্জন এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে শুধু শেয়ার বাজার কিছুটা আশার আলো হয়ে আছে। এহেন বাস্তবতায়, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, সংকট থেকে উত্তরণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট সঠিকভাবে বাস্তবায়ণের বিকল্প নেই। কিন্তু এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। গতকাল একটি ইংরেজী দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, গত অর্থবছরে এডিপি তথা বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল গত ২৭ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে দেশের উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের গড় হার শতকরা ৯০ ভাগের কাছাকাছি হলেও গত অর্থ বছরে তা ছিল ৮৫ ভাগেরও কম।

করোনা বাস্তবতায় অর্থনীতির মূল খাতগুলো যখন সংকটে পড়েছে তখন কর্মসংস্থানসহ অর্থের প্রবাহ বাড়াতে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতা অর্থনৈতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করে তুলছে। এডিপি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া এবং ধীর গতির পেছনের কারণটি অজানা নয়। এক্ষেত্রে দুর্নীতি ও গাফিলতি মূল অন্তরায় হয়ে রয়েছে। করোনা আপাতত একটি উপলক্ষ হলেও এডিপির বাস্তবায়ন বরাবরই অসম্পন্ন থেকে যাচ্ছে। অতিমারিতে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জে পড়েছে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাত এবং কর্মহীন মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা। প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বিগত অর্থবছরে জনগুরুত্ববহ এই তিনটি খাতেই বাজেট বাস্তবায়নের হার হতাশাজনক। স্বাস্থ্য পরিষেবা বিভাগের বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল ৫৭.৯১ ভাগ, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেট বাস্তবায়নে হার ৫৫. ৭১ ভাগ এবং সামাজিক নিরাপত্তা তথা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল ৭০.১৬ ভাগ। যেখানে বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের গড় হার ছিল ৮৫ ভাগ, সেখানে পেন্ডেমিকের বাস্তবতায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নে এমন ব্যর্থতা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অর্থনীতির অন্যতম রফতানি খাত গার্মেন্টও এখন সংকটের মধ্যে। ইতোমধ্যে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থান হারিয়ে তৃতীয় স্থানে চলে এসেছে। অর্থনীতির সামগ্রিক এ পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সামনে কি পরিস্থিতি হবে তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধিতে সরকার বাধ্য হয়ে কঠোর লকডাউন দিয়েছে। এর ফলে শ্রমজীবী মানুষসহ সাধারণ মানুষ দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে যে আমাদের অর্থনীতি চরম চাপের মধ্যে নিপতিত হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। অন্যদিকে লকডাউনও পুরোপুরি প্রতিপালিত হচ্ছে না। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যথাযর্থ বলেছেন, ‘ক্ষুধার্ত মানুষকে আটকে রেখে লকডাউন সফল হতে পারে না।’ আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ফলে অতিমারির মধ্যেই কিভাবে অর্থনীতি চালু রাখা যায়, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই পরিকল্পিতভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাÐ গতিশীল রাখা দরকার। ইতোমধ্যে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুরোপুরি চালু করেছে। গণটিকা এবং অন্যান্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জনগণকে সুরক্ষিত করে এগিয়ে চলেছে। আমাদের অর্থনীতি সচল করতে এ ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। একদিকে গণটিকা কার্যক্রম জোরেশোরে চালাতে হবে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক কার্যক্রমও চালাতে হবে। এখন স্থবির হয়ে বসে থাকার সময় নেই। বিনিয়োগ বাড়ানো, ব্যাংকের অলস টাকা কাজে লাগানোসহ বার্ষিক উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিক খাতওয়ারি বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনতে হবে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। করোনার মধ্যেই সামগ্রিক অর্থনীতি সচল করতে যা যা করা প্রয়োজন, তার সব ব্যবস্থা করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ash ৪ আগস্ট, ২০২১, ৭:৩৩ এএম says : 0
BANGLADESH E OBOSHO E PROMOTION - DIMOTION PROTHA CHALU KORA JORURI, JE VABE AUSTRALIA HOY, & ETA KAJ KORE PROCHUR. KONO DEPERTMENT KAJ BHALO NA KORLLE, OI DEPT ER TOP BOSS KE DEMOTION DEWA HOY, NEXT BOSS KE PROMOTION DEWA HOY. KHUB BESHI KHARAP KORLE MAIN BOSSS KE 3RD OR EVEN 4TH LEVEL NAMANO HOY
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন